হবিগঞ্জের মাধবপুর উপজেলার ৫টি চা বাগানে চায়ের মারাত্মক দরপতন হয়েছে। প্রতিকূল পরিবেশে আশানুরূপ উৎপাদন না হলেও যেটুকু উৎপাদন হচ্ছে গত কয়েক বছরের মধ্যে এখন চায়ের দর সর্বনিম্ন। চায়ের এমন দরপতনের কারণে মাধবপুর উপজেলার ৫টি চা বাগানের মালিক, ব্যবস্থাপক ও শ্রমিকদের মধ্যে হতাশা দেখা দিয়েছে। তাদের অভিমত এ অবস্থা চলতে থাকলে চা শিল্প বেশিদিন টিকিয়ে রাখা যাবে না। কারণ চা বাগানগুলো ব্যাংক ঋণ ও বাগানের নিজস্ব অর্থায়নে পরিচালিত হচ্ছে। কিন্তু চায়ের দরপতনের কারনে লোকসানের মধ্যে পড়ে বাগানগুলো ভবিষ্যতে বন্ধ হওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে। চা বাগান বন্ধ হয়ে গেলে ৫টি চা বাগানের প্রায় ৩০ হাজার শ্রমিক কর্মহীন হয়ে পড়বে। এ ছাড়া মালিকদের বিনিয়োগ করা মোটা অঙ্কের টাকা ও ব্যাংক ঋণ অনাদায়ি হয়ে পড়বে।
সীমান্তে চোরাই পথে চা পাতা আসা রোধ করার লক্ষ্যে সীমান্তরক্ষীরা বিভিন্ন সময়ে অভিযান চালিয়ে অনেক চা পাতা জব্দ করেছে। চা শ্রমিক, মালিক ও ব্যবস্থাপকদের অভিযোগ সরকার চা বাগানের প্রতি তেমন নজর দেয় না। এ কারণে চা বাগানগুলো বড় আর্থিক সংকটের কারণে বন্ধ হয়ে যেতে পারে। মাধবপুরে সরকার ও ব্যক্তি মালিকানাধীন তেলিয়াপাড়া, সুরমা, জগদীশপুর, বৈকণ্ঠপুর ও নয়াপাড়া চা বাগানের পাহাড়ি ভূমিতে বৃটিশ আমলে ৫টি চা বাগান সৃজন করা হয়। ৫টি চা বাগানে গড়পড়তা ৩০ হাজার শ্রমিক প্রত্যক্ষ ও পরোক্ষভাবে জড়িত রয়েছে। এর মধ্যে বৈকণ্ঠপুর চা বাগান তৃতীয় শ্রেণির রুগ্ণ বাগান হিসেবে পরিচিত। গত ৪ বছর আগে আর্থিক সংকটের মধ্যে পড়ে বাগানটি বন্ধ হয়ে পড়ে। এ সময় ৩ হাজার চা শ্রমিক পরিবার মারাত্মক মানবিক সংকটে পড়ে। এ সময় উপজেলা প্রশাসনের পক্ষ থেকে খাদ্য ও আর্থিক সহায়তা করা হয়। নতুন মালিকানা বৈকণ্ঠপুর চা বাগানটি আবার চালু হয়েছে। বৈকণ্ঠপুর চা বাগানের সহকারী ব্যবস্থাপক শাহজাহান মিয়া বলেন, এ বাগানটি এমনিতেই একটি রুগ্ন বাগান। কিন্তু এ বছর চায়ের দর খুব কম হওয়ায় আমরা বাগানটি পরিচালনা করতে হিমশিম খাচ্ছি। সাবেক পররাষ্ট্রমন্ত্রী মুর্শেদ খানের মালিকানাধীন নয়াপাড়া চা বাগান। এ বাগানটি কারখানার যন্ত্রপাতির জটিলতায় ৩ মাস ধরে উৎপাদনে ছিল না। তাদের মালিকাধীন বাগানের উৎপাদিত কাঁচাপাতা অন্য একটি কারখানায় প্রক্রিয়া জাত করা হয়। মাস খানেক আগে নয়াপাড়া চা বাগানের কারখানা চালু হয়েছে। বাগানের সহকারী ব্যবস্থাপক সোহাগ আহাম্মেদ জানান, আন্তর্জাতিক প্রতিযোগিতায় চায়ের বাজার টিকিয়ে রাখা এখন কষ্টকর। এর মধ্যে ভারত থেকে সীমান্তে চোরাই পথে বিপুল পরিমাণ নিম্নমানের চা পাতা দেশে ঢুকে পড়ায় দেশের অভ্যন্তরে দেশীয় চায়ের চাহিদা কমে গেছে। নিলাম বাজারে চা বাগানের পাইকারি ক্রেতারা এখন চা কিনতে আগ্রহী নয়। এর কারণ হচ্ছে চোরাই চা পাতায় দেশের অভ্যন্তরীণ বাজারে চাহিদা মিটে গেছে। এখন শ্রমিকদের বেতন, রেশন, চিকিৎসাসহ সব কিছু মিলিয়ে চায়ের উৎপাদন খরচ অনেক বেড়ে গেছে। এক কেজি চা পাতা উৎপাদন করতে নিম্নে খরচ হয় ২০০ টাকা। কিন্তু নিলামে এখন এক কেজি চায়ের দর উঠছে দেড়শ’ টাকার কিছু উপরে। অবৈধ পথে চা আসায় দেশের চায়ের এ অবস্থা সৃষ্টি হয়েছে। জগদীশপুর চা বাগানের ব্যবস্থাপক বিদ্যুৎ কুমার রায় জানান, ভারত থেকে চোরাই পথে নিম্নমানের চা এসে দেশের বাজার সয়লাব হয়ে গেছে। এটি চা শিল্পের জন্য বড় একটি হুমকি ও বিপজ্জনক।