মৃত্যুদণ্ডপ্রাপ্ত পলাতক শাহাদাত শীর্ষ সন্ত্রাসী দীর্ঘদিন ধরে কলকাতায় অবস্থান করছেন। কিন্তু কলকাতা বসেই ঢাকার মিরপুরের আন্ডারওয়ার্ল্ড নিয়ন্ত্রণ করে আসছে শাহাদাত। ওই এলাকার চাঁদাবাজি, খুন-খারাবি, অপহরণ, মাদক ব্যবসা, দখলবাজির সঙ্গে তার সংশ্লিষ্টতা রয়েছে। এলাকায় তার রয়েছে বিশাল সন্ত্রাসী বাহিনী। এই বাহিনীকে দিয়েই সে তার সকল অপকর্ম চালায়। আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর কাছে তার দলের অনেক সদস্যই বিভিন্ন সময় গ্রেপ্তার হয়েছে। গতকাল র্যাব ওই বাহিনীর অন্যতম সন্ত্রাসী আবু হানিফ বাদল ওরফে ডিশ বাদল (৩৮) কে গ্রেপ্তার করেছে। গোপন সংবাদের ভিত্তিতে র্যাব-৪ একটি দল শুক্রবার রাতে ক্যান্টনমেন্ট থানার মাটিকাটা এলাকায় অভিযান চালিয়ে তাকে গ্রেপ্তার করে।
এ সময় তার কাছ থেকে একটি আগ্নেয়াস্ত্র ও দুই রাউণ্ড গুলি উদ্ধার করা হয়। ডিশ বাদল কলকাতায় থাকা ওই শীর্ষ সন্ত্রাসীর নেতৃত্বে কাজ করতো। ওই সন্ত্রাসী কলকাতা থেকে নির্দেশ দিতো আর মিরপুরে বসে কাজ করতো ডিশ বাদল। তার বিরুদ্ধে মিরপুর মডেল ও শাহআলী থানায় একাধিক হত্যা ও চাঁদাবাজির মামলা রয়েছে।
র্যাব সূত্র জানিয়েছে, কলকাতায় অবস্থানরত শীর্ষ সন্ত্রাসী ঢাকার মিরপুর, পল্লবী, ক্যান্টনমেন্ট এলাকার এক আতঙ্ক। চাঁদা দাবি, অপহরণ ও খুনের সঙ্গে তার সংশ্লিষ্টতা রয়েছে। মিরপুর ও আশেপাশের এলাকার ব্যবসায়ী, শিল্পপতি, ঠিকাদার এমনকি চাকরিজীবীদের কাছ থেকে সে নিয়মিতভাবে নির্দিষ্ট হারে চাঁদা আদায় করে আসছিল। তার বাহিনীর অত্যাচারে ওই এলাকার সাধারণ মানুষ অতিষ্ঠ। তার নির্দেশে মিরপুরসহ ঢাকার বিভিন্ন এলাকায় অন্তত ১০টি গ্রুপ কাজ করছে। একটি গ্রুপ বিভিন্ন ব্যবসায়ী, শিল্পপতি, ঠিকাদারের মোবাইল নম্বর সংগ্রহ করে সরবরাহ করে। আরেক গ্রুপ দাবিকৃত চাঁদা আদায় করতো সংশ্লিষ্ট ব্যক্তির কাছ থেকে। পরে সেই টাকা হুন্ডির মাধ্যমে কলকাতায় পাঠিয়ে দিতো। এ ছাড়া আরেকটি গ্রুপ আছে যারা কিলার বাহিনী নামে পরিচিত। র্যাবসূত্র জানায়, মিরপুরের ওই সন্ত্রাসীর নামে যত চাঁদাবাজি হতো তা সংগ্রহ করতো ডিশ বাদল। সে টার্গেটকৃত ব্যক্তিদের যাবতীয় তথ্য সংগ্রহ করতো। পরে তার মোবাইল নম্বর সংগ্রহ করে কলকাতায় পাঠাতো। আর কলকাতা থেকে ওই মোবাইল ফোন নম্বরে কল দিয়ে কোটি কোটি টাকা চাঁদা দাবি করতো। চাঁদা দেয়ার একটা সময়ও নির্ধারণ করে দিত। সময় মত না দিলে বা দিতে অপারগতা জানালে প্রাণনাশের হুমকি দিতো। র্যাব-৪-এর সিনিয়র সহকারী পুলিশ সুপার সাজেদুল ইসলাম বলেন, শীর্ষ সন্ত্রাসী শাহাদাত বাহিনীর কারণে মিরপুর এলাকায় কেউ বাণিজ্য করতে পারে না। সে দেশের চেয়ে বিদেশে গিয়ে আরো বেশি শক্তিশালী হয়েছে। ধরা ছোঁয়ার বাইরে থেকে সব অপকর্ম করছে। তিনি বলেন, ডিবির কাছে গ্রেপ্তার কিলার সবুজ ও র্যাবের কাছে অস্ত্রসহ গ্রেপ্তার নজরুল ইসলাম মিঠু গ্রেপ্তারের পর তারাই ডিশ বাদলের তথ্য দেয়। শাহাদাতের চাঁদার টাকা সংগ্রহ করে সে ভারতে পাঠাতো। মাধ্যম হিসাবে কখনো সে হুন্ডি আবার তার আপন মামাকে ব্যবহার করতো। তার মামা রেজু হত্যা মামলার আসামি। সে পালিয়ে কলকাতায় শাহাদাতের কাছে থাকে। দেশে এসে ভাগ্নে ডিশ বাদলের কাছ থেকে টাকা নিয়ে সে শাহাদাতকে দেয়।