হাঁটু-কোমর পানি। খালবিল ডিঙ্গিয়ে স্কুলে যাচ্ছে কোমলমতি শিক্ষার্থীরা। জীবনের ঝুঁকি নিয়ে প্রতিনিয়ত বিদ্যালয়ে আসছে তারা। এক পোশাক হাতে। আর এক পোশাক স্কুল ব্যাগে। এটি লালমনিরহাটের কালীগঞ্জ উপজেলার চন্দ্রপুর উত্তরপাড়া সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের দৃশ্য। পাকা সড়ক না থাকায় এতে দুশ্চিন্তায় রয়েছেন শিক্ষক ও অভিভাবকরা। সরজমিন ওই বিদ্যালয়ে গিয়ে দেখা যায় ২০০৯ সালে বিদ্যালয়টি প্রতিষ্ঠিত।
৩৩ শতাংশ জমির ৮ শতাংশের ওপর নির্মিত একটি অনুপযোগী জড়োসড়ো (অনেকটা) টিনের ঘর। এ ঘরেই চলছে স্কুল কার্যক্রম। বারান্দা বাদে বাকি প্রায় ২৫ শতাংশ জায়গা জুড়েই শুধু খাল আর পুকুর যার পুরোটাই পানি বেষ্টিত। ফলে খেলাধুলা ও ঘোরাফেরার সুযোগ না থাকায় বিদ্যালয়ে এসেও শ্রেণিকক্ষে বন্দি জীবন কাটাতে হচ্ছে কোমলমতিদের। অপরদিকে শ্রেণির বাইরে বের হতে পারলেও পানিতে পড়ে কে কখন প্রাণহানির মতো দুর্ঘটনার শিকার হবে সে আশঙ্কায় দিন কাটছে সংশ্লিষ্টদের। ফলে ক্রমেই বিদ্যালয় বিমুখ হয়ে পড়ছে শিক্ষার্থী ও অভিভাবকদের কেউ কেউ। এ ছাড়াও খাল লাগোয়া বিদ্যালয়ে আসা-যাওয়ার সহজ রাস্তাটিও হাঁটুর ওপর পানিতে নিমজ্জিত থাকায় সেখান দিয়ে বিদ্যালয়ে আসতে কাপড় চোপড় ভেজার পাশাপাশি পানিতে পড়ে বই পুস্তকও নষ্ট হয় কারো কারো। আবার সুপেয় পানি ও স্যানিটেশন সমস্যাও রয়েছে প্রকট। খালের নোংরা ও দূষিত পানির সঙ্গেই স্থাপিত নলকূপটি রয়েছে কাঁচা এবং ল্যাট্রিনটি রয়েছে প্রায় অর্ধ ডুবন্ত অবস্থায় যা অনেকটাই হয়ে পড়েছে ব্যবহার অনুপযোগী। বিদ্যালয়টির চারদিক পানি বেষ্টিত হওয়ায় শ্রেণিকক্ষের যত্রতত্র পিঁপড়ের বাসা বাঁধা ও পোকা মাকড়ের আনাগোনায় পাঠে মনোযোগী হয়ে উঠতে পারছে না ছাত্র ছাত্রীরা। বৃষ্টির দিনগুলোতে ব্যাহত হয়ে পড়ে পাঠদান। নেই বিদ্যুৎ ব্যবস্থা ও সোলার প্যানেলও। বিদ্যালয়টিতে শহীদ মিনার থাকলেও সামনে পানি ভর্তি খালের কারণে সেটিকে পেছনে রেখেই চালাতে হয় দৈনিক সমাবেশ কার্যক্রম জানান বিদ্যালয়টির প্রধান শিক্ষক কেএম জাকারিয়া। এমন বিষয়গুলোতে অসন্তোষ প্রকাশ করছে এলাকার সচেতন ও ভুক্তভোগী মহলও। প্রধান শিক্ষক বলেন ২০১৪ সালের ১লা জানুয়ারিতে জাতীয়করণ হওয়া এ বিদ্যালয়ে ভবন নির্মাণে সরকারি বরাদ্দ পাওয়া গেছে এবং চলতি জুনে সেটার কাজ শুরু করার কথা ছিল বলে জেনেছি আর সে কাজ শুরু হলে বর্তমান ঘরটি স্থানান্তর করা জরুরি কিন্তু বিদ্যমান খাল ও পুকুর ভরাট করা না গেলে তা স্থানান্তর সম্ভবপর হচ্ছে না বলেও মনে করেন তিনি সেই সঙ্গে এ স্কুল ঘরটি যেকোনো সময় ভেঙ্গে পড়ে ক্ষয়ক্ষতি হতে পারে বলে আশঙ্কা করে ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের দৃষ্টি আকর্ষণও করেন তিনি। সহকারী শিক্ষক রুনা সুলতানা ও শাকিলা আক্তার বলেন, বিদ্যালয়টির এমন অবস্থায় দুর্গন্ধে সেখানে থাকা যায়না, অভিভাবকরাও ছেলে-মেয়েদের স্কুলে পাঠাতে চান না এবং বিদ্যালয়ে দুপুরের খাবার নিয়ে আসলেও খেতে মন চায় না। শিক্ষকরা বলেন, চলতি পাটের মৌসুমে এখানে পাট জাগ দেয়ায় পচা পানিতে ডেঙ্গু মশার কারখানা তৈরি হয়েছে মনে করে শিক্ষার্থীদের উপস্থিতিও কমে গেছে। সব মিলে আদর্শ ও আধুনিক বিদ্যালয় ব্যাপারটা তাদের কাছে যেন স্বপ্নই থেকে যাচ্ছে। এ বিষয়ে কালীগঞ্জ উপজেলা শিক্ষা অফিসার মহিউদ্দিন আহমেদ এর সঙ্গে কথা হলে তিনি মোবাইল ফোনে এ প্রতিবেদককে বিদ্যালয়ে মাটি ভরাটে দ্রুত উদ্যোগ গ্রহণের কথা জানান। এমতাবস্থায় জরুরি ভিত্তিতে বিদ্যালয়ে মাটি ভরাট ও নতুন বিল্ডিং নির্মাণ পূর্বক সরকারের আধুনিক ও মানসম্মত প্রাথমিক শিক্ষা নিশ্চিতকরণ কার্যক্রমের সফল বাস্তবায়নে সংশ্লিষ্ট ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষকে এগিয়ে আসার দাবি জানিয়েছে ভুক্তভোগী সহ এলাকাবাসী।