দিনাজপুরের ফুলবাড়ী খনি বিরোধী আন্দোলনে গুলিবিদ্ধ বাবুল রায় এখন পঙ্গু। তার শরীরের অর্ধেক অংশ অবশ হয়ে গেছে, হারিয়ে গেছে তার কর্মক্ষমতা। স্ত্রীসহ তার তিন শিশু সন্তান নিয়ে ভবিষ্যৎ না ভাবলেও ফুলবাড়ীতে উন্মুক্ত পদ্ধতিতে কয়লা খনি নিয়ে তার ভাবনার শেষ নেই। হুইল চেয়ারে বসেই তিনি বলেন, আমার জীবন থাকতে ফুলবাড়ী কয়লা খনি বাস্তবায়ন হতে দেব না। প্রয়োজনে আবারো রক্ত দেব। আজ ২৬শে আগস্ট ফুলবাড়ী উপজেলার সুজাপুর গ্রামে বাবুল রায়ের বাড়িতে গিয়ে তার বর্তমান অবস্থান জানতে চাইলে তিনি এ কথাগুলো দৃঢ়চিত্তে বলেন। ২০০৬ সালে ২৬শে আগস্টের স্মৃতির কথা বলতে গিয়ে জানান, প্রতিদিনের ন্যায় সেদিন রিকশাভ্যান বের করেন নি তিনি। সকালে বাড়ি থেকে খাওয়া করে তেল, গ্যাস, খনিজ সম্পদ ও বিদ্যুৎ বন্দর রক্ষা জাতীয় কমিটির আহ্বানে এশিয়া এনার্জির অফিস ঘেরাও কর্মসূচিতে অংশ নিতে বের হন।
তার স্ত্রী তখন ৫-৬ মাসের অন্তঃসত্ত্বা। বিকাল ৩টায় ফুলবাড়ী ঢাকা মোড় থেকে খনি বিরোধী মিছিল শুরু হলে বাবুল রায় তাতে অংশ নেয়। ছোট যমুনা নদীর উপর ব্রিজের কাছে মিছিলটি আসতেই পুলিশ বিডিআর একযোগে গুলিবর্ষণ শুরু করে। লোকজন দিগ্বিদিক ছোটাছুটি করতে থাকে। হঠাৎ একটি গুলি বাবুল রায়ের পিঠে এসে বিদ্ধ হয়। তিনি রাস্তায় পড়ে যান। তারপর আর কিছুই বলতে পারেন না। গুলিবিদ্ধ বাবুল রায়কে প্রথমে রংপুর মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে নেয়ার পর পরে ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল, পিজি হাসপাতাল, ক্রমা সেন্টার ও গণ স্বাস্থ্যকেন্দ্রে দীর্ঘ ১১ মাস চিকিৎসা শেষে বাড়িতে ফিরে আসেন। এখন চেয়ারই তার সার্বক্ষণিক সঙ্গী।
বাবুল রায় জানান, ‘আমি আর কোনোদিন দু’পায়ে ভর করে দাঁড়াতে পারবো না। আমার তিন ছেলে-মেয়ে কিভাবে মানুষ হবে তাও জানি না। আমি এখন কর্মক্ষমহীন মানুষ। তাতে আমার আক্ষেপ নেই। আমি আমার মনকে বোঝাতে সক্ষম হয়েছি। যে এশিয়া এনার্জির কালো থাবা থেকে আপাতত আমরা ফুলবাড়ীবাসী মুক্তি পেয়েছি। কিন্তু এখনো কয়লা খনি করার পাঁয়তারা চলছে। এ নিয়ে আমি মর্মাহত। তাছাড়া এখনো কার্যকর হয়নি ফুলবাড়ীবাসীর দেয়া সরকারের সঙ্গে ৬ দফা চুক্তি। কবে তা কার্যকর হবে? এ প্রতীক্ষার দিন গুনছি আমি।’