× প্রচ্ছদ অনলাইনপ্রথম পাতাশেষের পাতাখেলাবিনোদনএক্সক্লুসিভভারতবিশ্বজমিনবাংলারজমিনদেশ বিদেশশিক্ষাঙ্গনরকমারিমত-মতান্তরবই থেকে নেয়া তথ্য প্রযুক্তি শরীর ও মন চলতে ফিরতে কলকাতা কথকতাসেরা চিঠিইতিহাস থেকেঅর্থনীতি
ঢাকা, ২৪ এপ্রিল ২০২৪, বুধবার , ১১ বৈশাখ ১৪৩১ বঙ্গাব্দ, ১৫ শওয়াল ১৪৪৫ হিঃ

নানা সমস্যায় জর্জরিত সাগরদীঘি

বাংলারজমিন

এবিএম আতিকুর রহমান, ঘাটাইল (টাঙ্গাইল) থেকে
২৬ আগস্ট ২০১৯, সোমবার

ঘাটাইলের ঐতিহ্যবাহী সাগরদীঘি। সমস্যা ও প্রভাবশালীদের দৌরাত্ম্যে সাগরদীঘির সৌন্দর্য এখন ধ্বংসের মুখে। অবৈধ দখল, মাছ চাষ, পুকুরের দুই পাড়ে পোলট্রি ফার্মসহ নানা অনিয়ম আর অত্যাচারের কবলে ঐতিহ্যবাহী সাগরদীঘির দীঘি। এক সময় এই দীঘির যৌবনের আলোকছটায় মুগ্ধ হতো শত শত প্রকৃতিপ্রেমী দর্শনার্থী। দীঘির পাড় ঘেঁষে মাথা উঁচু করে দাঁড়িয়ে ছিল সবুজের সমারোহ। বন্যপ্রাণী আর জীববৈচিত্র্যের অভয়ারণ্য হিসেবে পরিচিত ছিল এলাকাটি। জঙ্গলের ওপর নির্ভর করে গড়ে ওঠে মানুষের বসবাস। তবে পানির তীব্র সংকট ছিল এলাকাটিতে।
পাল রাজাদের অধীনে এখানকার শাসনকর্তা সাগর রাজা তার প্রজাদের সুপেয় পানির জন্য ৩৬ একর জমিতে ২০০০ হাজার শ্রমিক আর ২ বছর সময় নিয়ে দীঘিটি খনন করেন। সাগর রাজার নামেই দীঘিটির নামকরণ হয় সাগরদীঘি। টাঙ্গাইলের ঘাটাইল উপজেলা সদর থেকে ৩০ কি.মি. পূর্বে এই দীঘির অবস্থান। পাড়সহ মোট ৩৬ একর জমিতে দীঘিটির অবস্থান। দীঘির পশ্চিম পাড়ের অর্ধেক জমিতে এলজিইডির অস্থায়ী অফিস, বাকি অর্ধেক জমিতে গড়ে উঠেছে পোল্ট্রিফার্ম, পূর্বপাড়ে সাগরদীঘি পুলিশ তদন্ত কেন্দ্র। উত্তর পাড়ে বালিকা উচ্চ বিদ্যালয় এবং দক্ষিণ পাড়ে দাখিল মাদ্রাসা। দীঘির দক্ষিণ-পূর্ব পাশে গড়ে উঠেছে আরেকটি পোল্ট্রি ফার্ম। স্থানীয় প্রভাবশালীরা সরকারের কাছ থেকে দীঘিটি লিজ এনে প্রতিবছর মাছ চাষ করে। মাছ চাষ করার জন্য মাছের খাদ্য, পোল্ট্রির বিষ্ঠাসহ বিভিন্ন ক্যামিকেল ব্যবহার করা হয়। যার প্রভাবে দীঘির প্রাণ ক্রমান্বয়ে নিঃশেষ হয়ে যাচ্ছে। ভরে যাচ্ছে দীঘির তলদেশ। দুই পাড়ের দুটি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের শিক্ষার্থীরা যেখানে উপভোগ করবে বিশুদ্ধ বাতাস আর প্রশান্তির নিশ্বাস সেখানে তাদের নাক বন্ধ করে চলতে হয়। কোমলমতি শিক্ষার্থী ও পথচারীরা এখানে এসেই বিব্রত বোধ করে ও নানাবিধ রোগবালাই তাদের লেগেই থাকে। বিভিন্ন এলাকা থেকে প্রকৃতিপ্রেমীরা দীঘির সুনাম শুনে ঘুরতে আসেন এবং ফিরে যান অপ্রত্যাশিত অভিজ্ঞতা নিয়ে। ঐতিহ্যবাহী সাগরদীঘির দীঘিটি সম্পর্কে একজন ব্যাংকার ও মো. খাদেম আল মামুনের সঙ্গে কথা হলে তিনি বলেন- ঐতিহ্যবাহী এই সাগরদীঘি প্রাচীন নিদর্শনগুলোর একটি। এটি রক্ষা করা আমাদের নৈতিক দায়িত্ব। আমাদের উচিত ব্যক্তি স্বার্থের ঊর্ধ্বে উঠে সাগরদীঘির ঐতিহ্য টিকিয়ে রাখার জন্য দলমত নির্বিশেষে সকলের কাজ করা উচিত। এ ব্যাপারে নবগঠিত সাগরদীঘি ইউনিয়নের চেয়ারম্যান মো. হেকমত শিকদারের কাছে জানতে চাওয়া হলে মানবজমিনকে বলেন, দীঘিটি আমাদের চৌদ্দ পুরুষের ঐতিহ্য ও অস্তিত্বের নিদর্শন। প্রতি বছর চৈত্র মাসে বৃহত্তর ময়মনসিংহ বিভাগ ও ভারত থেকে পুণ্য স্নান করার জন্য সনাতন ধর্মাবলম্বীরা এখানে স্নান করতে আসতেন। বর্তমানে এখানে স্নান করা তো দূরের কথা দীঘির পাড়ে দাঁড়ালেই দম বন্ধ হয়ে আসে। এলাকার মানুষের দাবি- এখান থেকে পোল্ট্রি ও মুরগির খামারগুলো দ্রুত অপসারণ করে দীঘিটি খনন করে আগের অবস্থায় ফিরিয়ে আনা হোক। সাগরদীঘি তদন্ত কেন্দ্রটি দীঘির পাড় ঘেঁষে গড়ে উঠায় এখানকার দায়িত্বপ্রাপ্ত প্রশাসনের লোকেরাও এই পানি নানা কাজে ব্যবহার করতেন। বর্তমানে দীঘির পানি ব্যবহারে সম্পূর্ণ অনুপযোগী বলে জানান সংশ্লিষ্টরা। দীঘির উদ্দাম সৌন্দর্য ফিরিয়ে আনার ব্যাপারে ঘাটাইল উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মো. কামরুল ইসলাম মুঠোফোনে বলেন, আমরা খুব শিগগিরই দীঘির পাড়ের অবৈধ স্থাপনা উচ্ছেদ অভিযান শুরু করবো। তিনি আরো বলেন, সাগরদীঘিকে একটি পর্যটন কেন্দ্র করার প্রক্রিয়াও চলছে।
অবশ্যই দিতে হবে *
অবশ্যই দিতে হবে *
অন্যান্য খবর