ছোট্ট কাওসার আহমেদ। বয়স মাত্র ৮ বছর। বছরখানেক আগেও সে পথশিশু ছিল না। ছিল পরিবার। থাকতো বাবা- মা’র সঙ্গে। বছর দুয়েক আগে দরিদ্রতার কাছে পরিবারসহ বরিশালের গৌরনদী থেকে পাড়ি জমান রাজধানীতে। শুরু হয় কাওসারের জীবনযুদ্ধ। প্রথমে কাজ করতো লেগুনার হেলপার হিসেবে।
এভাবেই বাবা-মায়ের সঙ্গে কোনোভাবে কেটে যাচ্ছিল জীবন।
কিন্তু হঠাৎ করেই ঝড় আসে তার জীবনে। কাওসারের মা বিয়ে করেন আরেকটি। ছেড়ে চলে যান তাদের। ভয়াবহ বিপদ নেমে আসে কাওসারের জীবনে। কাওসারের বাবাও আরেকটা বিয়ে করে। লেগুনা বন্ধ হয়ে যাওয়া হেলপারের কাজটাও হারায় সে। শুরু করে ফুল বিক্রি। আয় কম হওয়ায় তার বাবা সিদ্ধান্ত নেয় কাওসারকে দিয়ে ভিক্ষা করবে। কিন্তু ভিক্ষা করতে না চাওয়ায় অবর্ণনীয় নির্যাতন শুরু হয় কাওসারের ওপর। নির্যাতনের পরেও ভিক্ষা করতো না সে। দিন শেষে ফুল বিক্রি করে ৫০/৬০ টাকা যা পেতো তাই দিতো বাবার হাতে তুলে। কিন্তু এভাবেই কষ্টে দিন চলতো তার। কিন্তু একদিন বাড়িতে ফিরে দেখে বাবা তাকে না জানিয়ে বাড়ি ছেড়ে চলে গেছে।
কাওসার হয়ে যায় পথশিশু। পেয়ে যায় কিছু বন্ধু। সারাদিন বন্ধুদের সঙ্গে খেলাধুলা ও ফুল বিক্রি করে সময় কাটে তার। এখন কাওসারের সম্বল গায়ে জড়ানো পোশাকটুকুই। অন্য কাপড় পেলে ফেলে দিতে হয় এই আগের কাপড়। কারণ আগের কাপড় রাখার স্থান নেই কাওসারের। ঘুম তার বিছানাহীন। কখনো ফুটপাথ, কখনো বা মসজিদের বারান্দায়। সারাদিনে ফুল বিক্রি করে যা আয় হয় তা দিয়ে সকাল-দুপুরের খাবার যোগাড় করাই দায়। রাতে অবশ্য পেট পুরে খেতে পারে সে। বিভিন্ন কমিউনিটি সেন্টার প্রতিদিনই রাতে খাবারের ব্যবস্থা করে তাদের।
কাওসারের কাছে মায়ের কথা বলতেই চোখ ছলছল হয়ে ওঠে। চোখের পানি লুকানোর আপ্রাণ চেষ্টা। কাওসার বলে, ‘রাইতে ঘুমাইলেই আম্মাকে স্বপ্নে দেখি। মনডায় চায় মায়ের কাছে গিয়া থাকি। যেদিন আম্মাকে স্বপ্নে দেখি সেই রাইতে আর ঘুমডা হয় না।’