চুক্তিবিহীন ব্রেক্সিট সম্পন্ন হলে বৃটেনে ভয়াবহ এক বিশৃংখলা সৃষ্টি হওয়ার বিষয়ে সতর্ক করা হয়েছে। বলা হয়েছে, এমন হলে সেখানে দেখা দেবে খাদ্য সঙ্কট। বেড়ে যাবে খাদ্য ও জ্বালানি মূল্য। ওষুধ সরবরাহে ঘটবে বিঘœ। বৃটেনের রাস্তায় রাস্তায় দেখা দেবে বিশৃংখলা। পাল্টাপাল্টি বিক্ষোভ হবে। বৃটিশ পার্লামেন্টের এমপিদের চাপে পড়ে বুধবার সরকার চুক্তিবিহীন ব্রেক্সিট বিষয়ক গোপন ডকুমেন্ট প্রকাশ করতে বাধ্য হয়েছে। তাতেই এসব কথা বলা হয়েছে।
বৃটেনে তো বটেই, সারা দুনিয়ার সংবাদ মাধ্যমে এটা শিরোনামে পরিণত হয়েছে। রিপোর্ট প্রকাশ করেছে বৃটেনের অনলাইন দ্য গাডিয়ান, ইন্ডিপেন্ডেন্ট, বিবিসি, বার্তা সংস্থা রয়টার্স সহ সব সংবাদ মাধ্যম।
এতে বলা হয়েছে, সরকার চুক্তিবিহীন ব্রেক্সিট সম্পন্ন করলে তার প্রেক্ষাপটে যেসব অঘটন মারাত্মক আকারে ঘটতে পারে সে বিষয়ে সতর্ক করা হয়েছে এতে। চুক্তিবিহীন ব্রেক্সিট সম্পন্ন হলে সব সরবরাহ রুটে বিঘœ ঘটবে। সারাদেশে বিক্ষোভ, পাল্টা বিক্ষোভ হবে। এতে জনশৃংখলা নষ্ট হবে। একে বৃটেনের সবচেয়ে খারাপ অবস্থা হিসেবে আখ্যায়িত করা হয়েছে। বৃটিশ সরকার যে চুক্তিবিহীন ব্রেক্সিট পরিকল্পনা করেছে তার নাম দেয়া হয়েছে ‘অপারেশন ইয়েলোহ্যামার’। এই পরিকল্পনার ৫ পৃষ্ঠা বুধবার প্রকাশ করতে বাধ্য হয়েছে সরকার। নির্ধারিত ৩১ শে অক্টোবরের মধ্যে যদি বৃটেন এই পরিকল্পনার অধীনে ইউরোপীয় ইউনিয়ন ত্যাগ করে তাহলে তা হবে তাদের জন্য সবচেয়ে খারাপ বিষয়।
ওই ডকুমেন্টে বলা হয়েছে, এই পরিকল্পনায় সরকারি ও ব্যবসায় খাতে প্রস্তুতিটা থাকতে পারে নি¤œতম অবস্থানে। ব্রেক্সিট বিষয়ে রাজনীতিতে দ্বিধাবিভক্তি রয়েছে। এতে বলা হয়েছে, চুক্তিবিহীন ব্রেক্সিট হলে পণ্যবাহী লরিগুলোকে ইংলিশ চ্যানেল পাড়ি দিতে অপেক্ষায় থাকতে হতে পারে আড়াই দিনের মতো। ইউরোপীয় ইউনিয়নের সীমান্তগুলোতে বাড়তি ইমিগ্রেশন চেকের মুখে পড়তে পারেন বৃটিশ নাগরিকরা। সুনির্দিষ্ট কিছু খাদ্য সরবরাহ দ্রুত কমে যেতে পারে। ফলে খাদ্য ক্রয়ের ক্ষেত্রে অন্যরকম এক পীড়া ও সরবরাহ চেইনের ওপর বড় রকমের চাপ পড়তে পারে। ওই ডকুমেন্টে বলা হয়েছে, ইংলিশ চ্যানেলে ট্রাফিক ব্যবস্থা প্রথম দিনেই কমে যেতে পারে শতকরা প্রায় ৬০ ভাগ। এমন ভয়াবহ বিঘœ স্থায়ী হতে পারে তিন মাস।
আরও সতর্কতা দেয়া হয়েছে যে, যানজটের ফলে জ্বালানি সরবরাহ ক্ষতিগ্রস্ত হতে পারে। লন্ডন, দক্ষিণ-পূর্ব ইংল্যান্ডে জ্বালানি সরবরাহ বিঘিœত হতে পারে। দেশের অন্যান্য স্থানে মানুষের মধ্যে আতঙ্ক থেকে জ্বালানি কেনা বেড়ে যেতে পারে। এতে সঙ্কট দেখা দিতে পারে। অপারেশন ইয়েলোহ্যামার সংক্রান্ত ডকুমেন্ট প্রথম গত ১৮ই আগস্ট রোববার প্রকাশ করে সানডে টাইমস পত্রিকা। তখন সরকার একে উড়িয়ে দিয়েছিল। তারা বলেছিল, ওই ডকুমেন্ট অনেক পুরনো। কিন্তু এই ডকুমেন্ট প্রকাশ করতে সরকারের ওপর চাপ সৃষ্টি করেন এমপিরা। এতে নেতৃত্ব দেন সাবেক এটর্নি জেনারেল ডমিনিক গ্রিয়েভ। আর সোমবার রাতে হাউজ অব কমন্সে তাদের এ প্রস্তাব পাস হয়। এতে আগস্টে যে ডকুমেন্টের বড় একটি অংশ প্রকাশ পেয়েছিল তা প্রকাশ করার জন্য সরকারকে বাধ্য করা হয়।
ডাউনিং স্ট্রিট থেকে দাবি করা হয়েছিল, এই ডকুমেন্ট সরিয়ে ফেলা হয়েছে এবং সরকারের সূত্রগুলো দাবি করে, সাবেক মন্ত্রীরা এই ডকুমেন্ট ফাঁস করেছেন। কিন্তু সরকারের ভাষ্য সঠিক নয় বলে প্রধানমন্ত্রী বরিস জনসনকে ক্ষমা প্রার্থনার আহ্বান জানান সাবেক চ্যান্সেলর ফিলিপ হ্যামন্ড। তিনি বলেন, প্রধানমন্ত্রী বরিস জনসন ক্ষমতা নেয়ার পর এই ডকুমেন্ট বানানো হয়েছে। তাই সরকারকে ক্ষমা চাইতে হবে।