ঢাকার বাজারে পারদযুক্ত ত্বক ফর্সাকারী ক্রিমে ছেয়ে গেছে। এর ফলে জনস্বাস্থ্য ও পরিবেশ ঝুঁকিতে পড়েছে। গতকাল জাতীয় প্রেস ক্লাবে পরিবেশ অধিদপ্তর (ডিওই) এবং এনভায়রনমেন্ট অ্যান্ড সোশ্যাল ডেভেলপমেন্ট অর্গানাইজেশন-এসডো যৌথভাবে আয়োজিত এক কর্মশালায় বিশেষজ্ঞরা এই তথ্য জানান। “স্বাস্থ্য ও পরিবেশের উপর পারদযুক্ত পণ্যের ক্ষতিকর প্রভাব”- শীর্ষক অনুষ্ঠিত কর্মশালায় বক্তারা আরো বলেন, বাংলাদেশের বাজারে সহজেই যেসব ত্বক ফর্সাকারী পণ্যসমূহ পাওয়া যাচ্ছে। বেশিরভাগই অতি মাত্রায় পারদযুক্ত যা এক পিপিএম-এর চেয়ে অনেক বেশি। এখনও সরকার এই বিষয়টি সনাক্ত করে প্রতিরোধমূলক পদক্ষেপ নিতে পারেনি। বাংলাদেশে প্রস্তুতকৃত এবং সহজলভ্য ত্বক ফর্সাকারী পণ্যগুলোর মধ্যে উচ্চ মাত্রায় পারদ ব্যবহারের তথ্য এসডো কর্তৃক প্রকাশের পরে জনস্বাস্থ্য এবং পরিবেশ রক্ষার স্বার্থে এই বিষয়ে অবিলম্বে কার্যকর পদক্ষেপগ্রহণের জন্য সরকারের প্রতি আহ্বান জানান। কর্মশালায় সাবেক সচিব এবং এসডোর চেয়ারম্যান সৈয়দ মার্গুব মোর্শেদ প্রধান অতিথির বক্তব্যে পারদযুক্ত পণ্য উৎপাদন ও ব্যবহার নিষিদ্ধ করার ক্ষেত্রে প্রতিরোধমূলক উদ্যোগ গ্রহণের জন্য সরকারের প্রতি আহ্বান জানান।
তিনি আরো বলেন, মিনামাটা কনভেনশনের স্বাক্ষরকারী দেশ হওয়ায় আমরা পারদ-বিষ প্রতিরোধে প্রতিশ্রুতিবদ্ধ এবং আমাদেরকে উৎস থেকেই পারদ নিষিদ্ধ করার দিকে এগিয়ে যেতে হবে। পারদযুক্ত পণ্য ব্যবহারের ফলে যে বিষাক্ততার সৃষ্টি হচ্ছে তা বিশ্ব জনস্বাস্থ্যের জন্য উদ্বেগের কারণ হয়ে দাঁড়িয়েছে। আমাদের নিয়মিত ব্যবহারের পণ্য সামগ্রীর মধ্যে যেমন ব্যাটারি, থার্মোমিটার এবং ব্যারোমিটার, বৈদ্যুতিক সুইচ এবং সমধর্মী সরঞ্জামগুলিতে, সিএফএল বাল্ব, ডেন্টাল অ্যামালগাম (ডেন্টাল ফিলিংয়ের জন্য) এবং প্রসাধনী জুয়েলারীসহ ফার্মাসিউটিক্যাল পণ্যসমূহে পারদ ব্যবহৃত হচ্ছে। অজৈব পারদ ত্বক ফর্সাকারী পণ্যগুলিতে উল্লেখযোগ্য পরিমানে যুক্ত করা হয়, যা মানব স্বাস্থ্যের জন্য ক্ষতিকর। ২০১৭ এবং ২০১৮ সালে এসডোর বেশ কয়েকটি গবেষণায় দেখা গেছে, বাংলাদেশের বাজারে পাওয়া ত্বক ফর্সাকারী ক্রিমগুলোর বেশিরভাগের মধ্যে পারদ অবিশ্বাস্য মাত্রায় রয়েছে (প্রায় ৭১১ থেকে ১৬,৩৫৩ পিপিএম) যা প্রস্তাবিত সর্বাধিক পারদ মাত্রা ১ পিপিএম-এর চেয়ে অনেক বেশি। এসডোর মহাসচিব ড. শাহরিয়ার হোসেনের সভাপতিত্বে অনুষ্ঠানে জাতীয় প্রেসক্লাবের সাধারণ সম্পাদক ফরিদা ইয়াসমিন, পুলিশের সাবেক অতিরিক্ত আইজিপি মোকলেসুর রহমান, বুয়েটের সিভিল ইজ্ঞিনিয়ারিং বিভাগের অধ্যাপক ড. রওশান মমতাজ, বুয়েটের একই বিভাগের অধ্যাপক ড. তানভীর আহমেদ, এসডোর নির্বাহী পরিচালক সিদ্দীকা সুলতানা প্রমুখ আলোচনায় অংশ নেন। মূল প্রবন্ধ পাঠ করেন, জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের রসায়ন বিভাগের সাবেক বিভাগীয় প্রধান ড. মো. আবুল হাসেম।