নির্বাচন ভবনে আগুন লাগার কারণ হিসেবে বৈদ্যুতিক শর্ট সার্কিটকে চিহ্নিত করেছে ইসির তদন্ত কমিটি, এতে পৌনে ৪ কোটি টাকার ক্ষয়ক্ষতির কথা জানিয়েছেন তারা। গতকাল বিকালে নির্বাচন কমিশন সচিব মো. আলমগীরের কাছে এ প্রতিবেদন জমা দেন তদন্ত কমিটির সভাপতি ইসির অতিরিক্ত সচিব মোখলেসুর রহমান। প্রতিবেদন জমা দিয়ে তিনি সাংবাদিকদের বলেন, অগ্নিকান্ড বৈদ্যুতিক শর্ট সার্কিটের মাধ্যমে হয়েছে। এ অগ্নিকান্ডে ৩ কোটি ৭৭ লাখ ২১ হাজার ১৬৯ টাকার মালামাল পুড়েছে। রোববার রাতে ঢাকার আগারগাঁওয়ে ভবনের বেইজমেন্টে অগ্নিকান্ডের পর ইসি চার সদস্যের এই কমিটি গঠন করে। তাদের তিন কার্যদিবসের মধ্যে প্রতিবেদন জমা দিতে বলা হয়েছে। আগারগাঁওয়ে ১২ তলা নির্বাচন ভবনের বেইসমেন্টে রোববার রাতে আগুন লাগে। এতে ইলেকট্রনিক ভোটিং মেশিনের অন্তত দুই ডজন যন্ত্রাংশ, দুই জোড়া শীতাতপ নিয়ন্ত্রণ যন্ত্র ও বৈদ্যুতিক তার, কিছু কাগজপত্র পুড়ে যায়।
বৈদ্যুতিক শর্ট সার্কিট থেকে আগুন লেগেছিল বলে ধারণা করছিলেন ইসি কর্মকর্তারা। তদন্ত কমিটির প্রতিবেদনও তাই আসে। তদন্ত কমিটি প্রধান-মোখলেসুর বলেন, তদন্তের প্রয়োজনে তারা বেশ কয়েকবার ঘটনাস্থল পরিদর্শন করেন, প্রত্যক্ষদর্শী ও ফায়ার সার্ভিসের কর্মকর্তাদের সাক্ষাৎকারও নেন। ইসি কর্মকর্তারা জানান, বেইজমেন্টের সিসি ক্যামেরার ফুটেজ পরীক্ষা করে দেখা যায়- কক্ষের একাংশে বৈদ্যুতিক লাইনে স্ফূলিঙ্গ থেকে আগুন ধরে। এতে ইভিএমের কেবল ও মনিটর সবচেয়ে বেশি ক্ষতিগ্রস্থ হয়েছে। আগুন নেভানোর সময় ছিটানো পানিতে ক্ষতির পরিমাণ বেড়েছে। বিদ্যমান ফোর্স ভেন্টিলেশন ব্যবস্থার কার্যকারিতা এবং ব্যবহার নিশ্চিত করার পাশাপাশি হাইটেক কক্ষসমূহ সম্পূর্ণরূপে সার্বক্ষণিক সিসিটিভির আওতায় আনা, স্বয়ংক্রিয় অগ্নি নির্বাপণ ব্যবস্থা চালুসহ ৫ দফা সুপারিশ করেছে কমিটি। তদন্ত কমিটির প্রধান মোখলেসুর বলেন, যেখানে ইভিএম কাস্টমাইজড হয়ে থাকে, সেই জায়গাটিতে অগ্নিকান্ডের ঘটনা ঘটে। ঘটনাটি ঘটেছিল রাত ১০টা ২০ মিনিটের দিকে। সিসিটিভি ফুটেজে ১০ টা ৫০ মিনিটের দিকে ধোঁয়া দৃশ্যমান হয়। ফায়ার সার্ভিসের ছয়টি ইউনিট আধা ঘণ্টার মধ্যে আগুন নেভাতে সক্ষম হয়। তিনি জানান, ইভিএম কাস্টমাইজ সেন্টারে সাড়ে চার হাজার ইভিএম মেশিন ছিল। পরবর্তীতে সেখানে যে সংখ্যক যন্ত্রপাতি ছিলো সেগুলো গণনা করা হয়েছে। মোখলেসুর বলেন,যেহেতু অনেক পানি দেয়া হয়েছে, যেগুলো একেবারে ভস্মীভূত হয়েছে এবং একেবারে নষ্ট হয়ে গেছে, সেগুলোকে আলাদা করেছি। যেগুলো ব্যবহার উপযোগী বা নষ্ট হয়নি কার্টনের ভিতরে ছিল সেগুলোকেও আলাদা করেছি। উপরের কাঁচ, দেয়াল ক্ষতি হয়েছে, কিন্তু বিল্ডিংয়ের তেমন ক্ষতি হয়নি। কমিটি জানিয়েছে, অগ্নিকান্ডে ইভিএম কন্ট্রোল ইউনিট ৫৯টি, ব্যাটারি ৪৭টি, ব্যালট ৭৮৯, মনিটর এক হাজার ২৩৩টি, তার ৫৫৭ সেট, মনিটরের ব্যাটারি ৬৪টি, ল্যাপটপ একটি ও বার কোড স্ক্যানার দুটি ক্ষতিগ্রস্থ হয়েছে।
এসব সামগ্রীর আনুমানিক মূল্য ৩ কোটি ২১ লাখ ২৮ হাজার ৪৮৩ টাকা। অন্যান্য কিছু ইলেক্ট্রনিক সামগ্রীও ছিল তার মধ্যে এসি ছিল ৯টি, সিলিং লাইন ৪৮টি, একটি প্রজেক্টর, হুইল চেয়ার ও অটবি চেয়ার ১৬টি, টেবিল তিনটি, ঘড়ি একটি, সুইচ বোর্ড ১৪টি, বিভিন্ন রকমের ৯টি প্লাগ, ওয্যারিং চ্যানেল ২ হাজার ফিট, ফ্লোর টাইলস ৫০টি ক্ষতিগ্রস্থ হয়েছে। এর মূল্য ৪০ লাখ ৪৫ হাজার ৭০০টাকা। ক্ষতি ১৫ লাখ ৪৬ হাজার ৯৮৬ টাকা। সব মিলিয়ে ক্ষতি ৩ কোটি ৭৭ লাখ ২১ হাজার ১৬৯ টাকা।