× প্রচ্ছদ অনলাইনপ্রথম পাতাশেষের পাতাখেলাবিনোদনএক্সক্লুসিভভারতবিশ্বজমিনবাংলারজমিনদেশ বিদেশশিক্ষাঙ্গনরকমারিমত-মতান্তরবই থেকে নেয়া তথ্য প্রযুক্তি শরীর ও মন চলতে ফিরতে কলকাতা কথকতাসেরা চিঠিইতিহাস থেকেঅর্থনীতি
ঢাকা, ২৬ এপ্রিল ২০২৪, শুক্রবার , ১৩ বৈশাখ ১৪৩১ বঙ্গাব্দ, ১৭ শওয়াল ১৪৪৫ হিঃ

ভারতে বিজেপি’র জয়ের নেপথ্যে

দেশ বিদেশ

মানবজমিন ডেস্ক
১৩ সেপ্টেম্বর ২০১৯, শুক্রবার

১৯৪৭ সালে নানাত্ববাদী দেশ হিসেবে জন্ম হয় ভারতের। সেখানে নানা ধর্ম, দল, জাতির মানুষের ঠিকানা ছিল ভারত। দেশের সংবিধানে তাদের কাউকেই কোনো অঙ্গরাজ্য বা ভূখণ্ডে বিশেষ অধিকার দেয়া হয়নি- হিন্দুদেরও না। যদিও ভারতের মোট জনসংখ্যার প্রায় ৮০ শতাংশই হিন্দুরা। তাছাড়া হিন্দুদের মধ্যেও বিভক্তি রয়েছে। তারা তাদের বিশ্বাস, ভাষা, ধর্মীয় অনুষ্ঠান ও রীতিনীতির দিক থেকে আলাদা। যার ফলে হিন্দুরা কখনোই নিজেদের একক সম্প্রদায় বা জাতি হিসেবে দেখেনি। কিন্তু চলতি বছরের লোকসভা নির্বাচনে সে ধারণা পাল্টে গেছে।
এই নির্বাচনে ভারতের জনগণ কেবল একটি সরকারই নির্বাচিত করেনি। ভোটের মাধ্যমে ভারতকে একটি ‘হিন্দু রাষ্ট্র’ হিসেবে প্রতিষ্ঠা করতেও অংশ নিয়েছে।
নির্বাচনের ফলাফল বিশ্লেষণ করলে দেখা যায়, ভারতে নানাত্ববাদের ধারণা অতীতে হারিয়ে যাচ্ছে। এবারের লোকসভা নির্বাচনে প্রায় ৪৪ শতাংশ হিন্দু ক্ষমতাসীন ভারতীয় জনতা পার্টির (বিজেপি) পক্ষে ভোট দিয়েছে। এর আগে কখনো এত পরিমাণ হিন্দু ভোটার দলটিকে ভোট দেয়নি। বিজেপির অন্যতম এজেন্ডা হচ্ছে ভারতকে একটি হিন্দু রাষ্ট্রে পরিণত করা। আজিম প্রেমজি ইউনিভার্সিটি ও সেন্টার ফর দ্য স্টাডি অব ডেভেলপিং সোসাইটিজ এর গবেষকরা ২০১৬ থেকে ২০১৮ সাল পর্যন্ত বিজেপির প্রতি হিন্দুদের সমর্থন নিয়ে একটি জনমত জরিপ চালায়। তাতে দেখা যায়, বেশিরভাগ হিন্দুরা, এমনকি পূর্বে অন্যান্য দলের পক্ষে ভোট দেয়া হিন্দুরাও এখন বিজেপির হিন্দু জাতীয়তাবাদী নেতাদের সমর্থন করে। এ ছাড়া এটাই ছিল প্রথম লোকসভা নির্বাচন যেটিতে কোনো প্রধান বিরোধী দল বিজেপির হিন্দু জাতীয়তাবাদের ও ভারতকে হিন্দু রাষ্ট্রে পরিণত করার এজেন্ডাকে চ্যালেঞ্জ করেনি। ভারতের রাজনীতি এখন হিন্দু ও হিন্দুত্ববাদের বিশেষ সুবিধা উপভোগ করা ঘিরে আবর্তিত হচ্ছে না। বরং ওই সুবিধাগুলো সুনির্দিষ্ট বৈধ ও সাংবিধানিক সংস্কারের মাধ্যমে কী রূপ নেবে, তাই এখন দেশটির রাজনৈতিক পটভূমিতে বেশি গুরুত্ব পাচ্ছে। প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি অবশ্য নির্বাচিত হওয়ার পর থেকে সেই আইনি সংস্কার শুরু করতে মোটেও দেরি করেননি। বিরোধী দলগুলোর সমর্থন নিয়েই এসব সংস্কার শুরু করেছেন তিনি। হিন্দু জাতীয়তাবাদের এজেন্ডা পালনে তাকে সমর্থন জানিয়েছেন বিরোধী দলের নেতারাও। অতীতে এ ধরনের আইন প্রণয়ন তীব্র বিতর্কের সম্মুখীন হওয়ার সম্ভাবনা থাকলেও বর্তমানে তেমনটি দেখা যাচ্ছে না। এরকম আরো বহু সংস্কার অপেক্ষা করছে ভারতের জনগণের জন্য। ভারতকে হিন্দু রাষ্ট্রে পরিণত করার প্রক্রিয়া অবশ্য বিজেপি শুরু করেনি। এই প্রক্রিয়া ভারতীয় রাজনীতির অন্য এক বৃহৎ শক্তি- কংগ্রেস পার্টির হাত ধরেই যাত্রা শুরু করে, ১৯৬৯ সালে। ভারতের রাজনৈতিক ইতিহাসে ওই ঘটনা প্রায় ভুলেই গেছেন অনেকে।
কংগ্রেসে ধর্মের বাতাস
কোনো রাজনৈতিক দল যদি কোনো মতাদর্শের ব্যবচ্ছেদ করতে চায় তাহলে এমন একটি সংগঠনের প্রয়োজন যার মাধ্যমে তৃণমূলের সঙ্গে নেতাদের যোগসাজশ সম্ভব। এমন একটি সংগঠন ছিল কংগ্রেসের। মোহনদাস করমচাদ গান্ধীর (মহাত্মা গান্ধী) নেতৃত্বে ভারতে প্রথম জাতীয়তাবাদী আন্দোলনের শুরু হয়। তার পর সে নেতৃত্ব দেন ভারতের প্রথম প্রধানমন্ত্রী জওহরলাল নেহরু। নেহরু প্রধানমন্ত্রী থাকাকালীন অবস্থাতেই ১৯৬৪ সালে মৃত্যুবরণ করেন। এরপর স্বল্প-মেয়াদী আরো দুজন প্রধানমন্ত্রীর পর ১৯৬৬ সালে দায়িত্বে আসেন ইন্দিরা গান্ধী। ক্ষমতায় এসেই ‘দ্য সিন্ডিকেট’ নামে পরিচিত দলের আঞ্চলিক নেতাদের সঙ্গে নিজের দ্বৈরথ খুঁজে পান তিনি। দলের অর্থনৈতিক নীতিমালা, রাজনৈতিক কলকব্জা ও নির্বাচনের জন্য প্রার্থী নির্ধারণে নিজ দল থেকে বিরোধের সম্মুখীন হন ভারতের প্রথম নারী প্রধানমন্ত্রী। এই সংঘর্ষের ফলে ১৯৬৯ সালে কংগ্রেস দুদিকে ভাগ হয়ে যায়। যে ভাগ ইন্দিরা গান্ধীকে অনুসরণ করেছিল তারাই বর্তমানে কংগ্রেসের নেতৃত্ব দিচ্ছে। আর সিন্ডিকেটের পক্ষে থাকা ভাগটি সময়ের আবর্তে ভেঙে যায়। এতে তৃণমূলের সঙ্গে কংগ্রেসের যোগাযোগ নষ্ট হয়ে যায়। গান্ধীর হাতে রাজনীতিতে দলকে টিকিয়ে রাখতে দুটি উপায় খোলা থাকে- তৃণমূলের সঙ্গে ফের যোগাযোগ স্থাপনে জনপ্রিয় কোনো ইস্যু ঝালাই করা বা নির্বাচনে না যাওয়া। তিনি দু’দিকেই চেষ্টা চালান। ১৯৭১ সালের নির্বাচনে দরিদ্রতা দূরীকরণের পক্ষে প্রচারণা চালিয়ে কংগ্রেসকে জয় এনে দেন। ১৯৭৫ সালে জাতীয় জরুরি অবস্থা ঘোষণা করে নির্বাচন স্থগিত রাখেন। জরুরি অবস্থা শেষে ১৯৭৭ সালে পার্লামেন্টারি জরিপে পরাজিত হন গান্ধী। তাই পরবর্তী নির্বাচনের আগে ফের একটি জনপ্রিয় ইস্য খুঁজতে থাকেন তিনি। ভাগ্যক্রমে, ধর্মের রাজনীতি খুঁজে পান তিনি। প্রথমে দেশের ধর্মীয় বিভক্তিকে ব্যবহারের চেষ্টা চালান তিনি। আশির দশকের শুরুর দিকে শিখ ধর্মযাজক জে এস ভিন্দ্রানওয়ালের প্রতি সমর্থন জানান তিনি। যদিও ভিন্দ্রানওয়ালের বিরুদ্ধে সহিংসতার অভিযোগ ছিল। এমনকি স্বাধীন শিখ রাষ্ট্রের আহ্বানও জানিয়েছিলেন ওই শিখ ধর্মযাজক। তাকে সমর্থন জানিয়ে পাঞ্জাবে শিখ দলগুলোর সমর্থন কুড়াতে চেয়েছিলেন গান্ধী। এতে পাঞ্জাব কংগ্রেসের অন্যান্য আঞ্চলিক নেতারা দল থেকে ঝরে পড়ে। তবে ১৯৮৪ সালে অবস্থান পাল্টে ফেলেন গান্ধী। ভিন্দ্রানওয়ালেকে উৎখাত করতে শিখদের পবিত্র প্রার্থনালয় ‘স্বর্ণ মন্দিরে’ সেনা পাঠান তিনি। ‘অপারেশন ব্লু স্টার’ নামে পরিচিত ওই অভিযানের মাধ্যমে হিন্দুদের প্রতি সমর্থনের শক্তিশালী বার্তা পাঠিয়েছিল তৎকালীন গান্ধী সরকার। মুসলিম-সংখ্যাগরিষ্ঠ কাশ্মীরেও হিন্দুদের প্রতি সমর্থন দেখিয়েছিলেন গান্ধী। ১৯৮৩ সালের স্থানীয় নির্বাচনে কাশ্মীরের সংখ্যালঘু হিন্দুদের সঙ্গে জট বাধেন তিনি। কিন্তু তাতে হেরে যায় কংগ্রেস। নির্বাচিত হন মুসলিম নেতা ফারুক আবদুল্লাহ। এক বছর পর আবদুল্লাহ ও তার সরকারকে অপসারিত করেন। এ ধরনের পদক্ষেপই কাল হয়ে দাঁড়ায় গান্ধীর জন্য। ১৯৮৪ সালে তার দুই শিখ দেহরক্ষীর হাতে খুন হন তিনি। তার হত্যার পর দেশজুড়ে হিন্দুদের হামলার শিকার হয় শিখরা। ইন্দিরা গান্ধীর পর ক্ষমতায় আসেন তার ছেলে রাজীব গান্ধী। তিনি তৎকালীন সহিংসতা নিয়ে বলেছিলেন, বড় গাছ পড়লে, মাটিতো কাঁপবেই। ধর্মীয় নিরপেক্ষতা প্রতিষ্ঠার হাল ছেড়ে দিয়েছিল কংগ্রেস। রাজীব গান্ধীও তার মায়ের পদাঙ্ক অনুসরণ করেন। প্রথমে ধর্মীয় ভারসাম্যতা আনার চেষ্টা করলেও পরবর্তীতে হিন্দু সংখ্যাগরিষ্ঠতার দিকেই নজর দেন। ১৯৮৬ সালে কংগ্রেস সরকার হিন্দুদের অযোধ্যার একটি বিতর্কিত স্থাপনায় প্রার্থনার সুযোগ দেয়। স্থাপনাটি পূর্বে একটি মসজিদ ছিল। এতে হিন্দুত্ববাদ সমর্থনকারী সংগঠনগুলো উৎসাহ পায়। তারা দাবি করে, মসজিদটি যেখানে নির্মিত হয়েছিল সেটি হিন্দু দেবতা রামের জন্মস্থান। সেখানে মন্দির গড়ার দাবি ওঠে। ১৯৮৮ সালে অভিনেতা অরুন গভিলকে তাদের পক্ষে প্রচারণা চালাতে বলে কংগ্রেস। গভিল একটি সফল টিভি অনুষ্ঠানে রামের চরিত্রে অভিনয় করতেন। জাফরানি কাপড় পরে ভোটারদের কাছে রাম দেবতার নামে কংগ্রেসকে ভোট দিতে আহ্বান জানান তিনি। ১৯৮৯ সালে অযোধ্যা থেকে নির্বাচনী প্রচারণা শুরু করে কংগ্রেস। জয়ী হলে সেখানে ‘রাম রাজ্য’ বা রামের শাসন প্রতিষ্ঠার প্রতিশ্রুতি দেয় তারা। ১৯৯১ সালে খুন হন রাজীব গান্ধী। ১৯৯২ সালে কংগ্রেস নেতৃত্বাধীন সরকারের আমলে হিন্দু দুর্বৃত্তরা অযোধ্যার বাবরি মসজিদ ধ্বংস করে দেয়। সরকার তাদের থামাতে ব্যর্থ হয়। আর এর সঙ্গে ধ্বংস হয়ে যায় কংগ্রেসের ধর্ম নিরপেক্ষতার আস্থাপত্রও। এরপর আর ধর্ম নিরপেক্ষতার দিকে ফিরে তাকায়নি কংগ্রেস। চলতি বছরের লোকসভা নির্বাচনে বিজেপিকে টপকিয়ে ক্ষমতায় আসতে চেয়েছিল কংগ্রেস। তাদের নির্বাচনী ইশতেহারে ‘ধর্ম নিরপেক্ষতা’ নামের কোনো শব্দই ছিল না। রাজীব গান্ধীর ছেলে রাহুল গান্ধীর নেতৃত্বে দলের নেতারা নির্বাচনের আগ দিয়ে একাধিক হিন্দু মন্দির পরিদর্শন করেছেন। অন্যান্য ধর্মীয় প্রার্থনালয়ও পরিদর্শন করেছেন, কিন্তু মসজিদ এড়িয়ে গেছেন। রাহুল ও তার বোন প্রিয়াংকা গান্ধী উভয়েই সংখ্যালঘুদের অধিকার নিয়ে অপেক্ষাকৃত নীরব ছিলেন।
গুরুদের কাছ থেকে শিক্ষা
হিন্দুত্ববাদের দিকে কংগ্রেসের কয়েক দশকের পদক্ষেপ বিজেপির জন্য উর্বর পরিস্থিতি সৃষ্টি করেছে। চরমপন্থি মতাদর্শে দীক্ষিত বিজেপি প্রতিষ্ঠিত হয় ১৯৮০ সালে। ভারতীয় জনসংঘ (বিজেএস) থেকেই তাদের উৎপত্তি। বিজেএস প্রতিষ্ঠিত হয় ১৯৫১ সালে। হিন্দু রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠায় দৃঢ় প্রতিজ্ঞাবদ্ধ সংগঠন রাষ্ট্রীয় স্বয়ংসেবক সংঘের (আরএসএস) একটি রাজনৈতিক শাখা হিসেবে যাত্রা শুরু করে বিজেএস। কয়েক দশক ধরে নির্বাচনে হিন্দুত্ববাদ প্রচারে মনোনিবেশ করে বিজেএস। কিন্তু সফলতা না পাওয়ায় ১৯৭৭ সালে জনতা পার্টির সঙ্গে যুক্ত হয়। ১৯৮০ সালে বিজেএস সদস্যরা জনতা পার্টি ছেড়ে বিজেপি গঠন করে। প্রাথমিকভাবে তারা নিজেদের হিন্দু জাতীয়তাবাদীর বদলে মধ্যপন্থি দল হিসেবে পরিচয় দেয়। বহু বছরের ব্যর্থতায় হিন্দুত্ববাদের উত্থান নিয়ে আশা ছেড়ে দিয়েছিল তারা। কিন্তু ১৯৮৪ সালের নির্বাচনে কংগ্রেস ছিল সবচেয়ে হিন্দুপন্থি দল। রাজনৈতিক বিজ্ঞানী জেমস ম্যানর ওই নির্বাচন নিয়ে লিখেন, তৎকালীন সময়ে কংগ্রেসের তুলনায় বিজেপি বেশি সংখ্যালঘু-বান্ধব দল ছিল। কংগ্রেস ওই নির্বাচনে জয়ী হয়। এই দৃষ্টান্ত বিজেপিকে পুরনো ধারায় ফিরে যেতে উৎসাহিত করে। ১৯৮৯ সালের নির্বাচনে বিজেপির ইশতেহারে হিন্দু জাতীয়তাবাদ ফিরে আসে। অযোধ্যায় বাবরি মসজিদ ভেঙে মন্দির তৈরির পক্ষেও সমর্থন জানায় তারা। এসবের কোনোটাই বিজেপির ১৯৮৪ সালের ইশতেহারে দেখা যায়নি। বিজেপি ভারতের হিন্দুদের চ্যাম্পিয়ন হিসেবে নিজেদের প্রতিষ্ঠায় কংগ্রেসকে টপকে যেতে পেরেছিল একটি কারণে- তাদের তৃণমূলের সঙ্গে যোগাযোগ রক্ষার সূত্র ছিল। আরএসএস’র বিশাল নেটওয়ার্ক তাদের সাহায্য করেছে। সাম্প্রতিক বছরে সে সংযোগ আরো দৃঢ় হয়েছে। প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি নিজেই এক সময় আরএসএস’র সদস্য ছিলেন। কংগ্রেস হিন্দু সংখ্যাগরিষ্ঠের কাছে যতটা না জনপ্রিয় ছিল, বিজেপি তার চেয়ে বহুগুণ বেশি জনপ্রিয়। বিজেপির সংগঠনগুলো তাদের মতাদর্শ প্রতিষ্ঠায় জোরালো ভূমিকা রেখেছে। যেমনটি পারেনি কংগ্রেস।
মোদির কৌশল
প্রথমবার প্রধানমন্ত্রী হিসেবে নির্বাচিত হওয়ার পর মোদি হিন্দু জাতীয়তাবাদের দিকে নেয়া সকল পদক্ষেপই বিধানিক প্রক্রিয়ার বাইরে রাখেন। ভারতের সর্ববৃহৎ রাজ্যের মুখ্যমন্ত্রী হিসেবে নিয়োগ দেয়া হয় একজন হিন্দু ধর্মীয় নেতাকে। পাল্টে দেয়া হয় দেশের পাঠ্যবইয়ের লেখা। তাতে হিন্দুদের ভারতের প্রাচীনতম অধিবাসী হিসেবে উল্লেখ করা হয়। মুসলিম শহর ও রাস্তাগুলোর নাম পাল্টে হিন্দু পুরানের বিখ্যাত ব্যক্তিদের নামে নামকরণ করা হয়। মুসলিমদের বিরুদ্ধে হামলাকে সমর্থন দেয়া হয় ও কখনো কখনো এ ধরনের হামলার উস্কানিও দেয়া হয়েছিল। কিন্তু কোনো আইন পাস করতে পারেনি বিজেপি। হিন্দু জাতীয়তাবাদ সমর্থনকারী দুটি প্রস্তাবিত বিল পার্লামেন্টে প্রত্যাখ্যাত হয়। এর মধ্যে একটি ছিল ধর্ম-ভিত্তিক নাগরিকরত্ব নীতিমালার প্রণয়ন। এতে প্রতিবেশী দেশগুলো থেকে অমুসলিমরা সহজেই ভারতে অভিবাসনের সুযোগ পেতো। বর্তমানের এ ধরনের আইন পাসের সক্ষমতা নেই বিজেপির। নিম্নকক্ষে একক সংখ্যাগরিষ্ঠতা থাকলেও, উচ্চকক্ষে কয়েক আসন কম রয়েছে তাদের ও তাদের অংশীদারদের। কিন্তু তবুও আটকে নেই বিজেপি। বিরোধী দলগুলোও দলটিকে সহায়তা দিচ্ছে। অনেকেই দলত্যাগ করে বিজেপিতে যোগ দিচ্ছেন। নতুন সরকার ক্ষমতায় এসেই মুসলিমদের মধ্যে তিন তালাক নিষিদ্ধ করে। এর কয়দিন পর সন্ত্রাসবিরোধী আইন সংশোধন করে। সংশোধন অনুসারে, কোনো ব্যক্তির সংগঠন-ভিত্তিক সংশ্লিষ্টতা অগ্রাহ্য করে তাকে সন্ত্রাসী ঘোষণার ক্ষমতা পায় সরকার। এই আইন কেবল হিন্দু জাতীয়তাবাদের স্বপ্নপূরণেই সহায়ক নয়, পাশাপাশি সরকারের শত্রুদের পরাহত করতেও কার্যকরী। আর সর্বশেষ মুসলিম সংখ্যাগরিষ্ঠ কাশ্মীরের স্বায়ত্তশাসন কেড়ে নেয়। বিজেপির হিন্দু জাতীয়তাবাদ প্রতিষ্ঠার যাত্রায় সবচেয়ে বিতর্কিত সিদ্ধান্ত ছিল এটি। সবচেয়ে বড় লক্ষণীয় বিষয় হচ্ছে, সরকারদলীয় নেতাদের পাশাপাশি বিরোধীদলীয় নেতারাও এই সিদ্ধান্তের পক্ষে সরকারকে সমর্থন দিয়েছে। এ ছাড়া আসামে জাতীয় নাগরিকপঞ্জীকরণ প্রক্রিয়া নিয়েও তুমুল বিতর্ক রয়েছে। যখনই এই প্রক্রিয়ায় হিন্দুদের নাগরিকত্ব বাতিল হওয়ার রব উঠেছে, তখনই প্রক্রিয়াটি নিয়ে উদ্বেগ প্রকাশ করেছে বিজেপির অন্তর্মহল। এদিকে, নির্বাচনে হারের দায় নিয়ে কংগ্রেসের সভাপতি হিসেবে পদত্যাগ করেন রাহুল গান্ধী। তার জায়গায় অন্তর্বর্তীকালীন সভাপতি নিয়োগ পান সোনিয়া গান্ধী। বিজেপির পদক্ষেপগুলো নিয়ে ঠিক কী ধরনের প্রতিক্রিয়া দেখানো উচিত তা নিয়ে অনেকটা বিভ্রান্তিতে রয়েছে দলটি। দলের কেউ কেউ পার্লামেন্টে না হলেও ব্যক্তিগত পর্যায়ে বিজেপিকে সমর্থন দেয়ার ঘটনাও ঘটেছে। সব মিলিয়ে নানাত্ববাদী, ধর্ম নিরপেক্ষ ভারত প্রতিষ্ঠার স্বপ্ন এখন ইতিহাসের সবচেয়ে বড় হুমকির মুখে দাঁড়িয়ে। আর ওই স্বপ্নের প্রবর্তক কংগ্রেস পার্টি তাদের ইতিহাসে সবচেয়ে দুর্বলতম অবস্থায় রয়েছে।
(ফরেইন অ্যাফেয়ার্স সাময়িকীতে প্রকাশিত নিবন্ধ অবলম্বনে)


অবশ্যই দিতে হবে *
অবশ্যই দিতে হবে *
অন্যান্য খবর