× প্রচ্ছদ অনলাইনপ্রথম পাতাশেষের পাতাখেলাবিনোদনএক্সক্লুসিভভারতবিশ্বজমিনবাংলারজমিনদেশ বিদেশশিক্ষাঙ্গনরকমারিমত-মতান্তরবই থেকে নেয়া তথ্য প্রযুক্তি শরীর ও মন চলতে ফিরতে কলকাতা কথকতাসেরা চিঠিইতিহাস থেকেঅর্থনীতি
ঢাকা, ২৫ এপ্রিল ২০২৪, বৃহস্পতিবার , ১২ বৈশাখ ১৪৩১ বঙ্গাব্দ, ১৬ শওয়াল ১৪৪৫ হিঃ

রোহিঙ্গাদের পাসপোর্ট তৈরির হোতাদের খোঁজে র‌্যাব-পুলিশ

দেশ বিদেশ

স্টাফ রিপোর্টার, চট্টগ্রাম থেকে
১৪ সেপ্টেম্বর ২০১৯, শনিবার

রোহিঙ্গাদের জাতীয় পরিচয়পত্র ও পাসপোর্ট তৈরির হোতাদের খোঁজে মাঠে নেমেছে র‌্যাব-পুলিশ। কক্সবাজার ও চট্টগ্রামে অভিযান চালিয়ে ইতিমধ্যে বেশকিছু হোতাকে শনাক্তও করা হয়েছে। যাদের কাছে অসংখ্য ভুয়া জন্মসনদ, এনআইডি ও পাসপোর্ট তৈরির কাগজপত্র রয়েছে। যা রোহিঙ্গাদের এনআইডি ও পাসপোর্ট তৈরিতে ব্যবহার হচ্ছে।

র‌্যাব সূত্র জানায়, চট্টগ্রাম-কক্সবাজার-ঢাকাসহ দেশের বিভিন্ন এলাকায় শক্তিশালী সিন্ডিকেট রোহিঙ্গাদের এনআইডি ও পাসপোর্ট তৈরির কাজে জড়িত। এরমধ্যে পাসপোর্ট অফিস, পুলিশ, জনপ্রতিনিধি ও স্থানীয় রাজনৈতিক নেতাও রয়েছে। দালালদের মাধ্যমেই তারা পাসপোর্ট তৈরি করে থাকে। প্রতিটি পাসপোর্ট তৈরি করতে নেয়া হয় ৭০ হাজার থেকে ১ লাখ টাকা।

সূত্র আরো জানায়, জন্মসনদসহ ভুয়া কাগজপত্র পাসপোর্ট অফিসের অসাধুদের মাধ্যমে জমা দিয়ে রোহিঙ্গারা পেয়ে যায় আসল পাসপোর্ট। এ ছাড়া ভোটার করার দায়িত্বে থাকা কর্মীদের ম্যানেজ করে পেয়ে যায় জাতীয় পরিচয়পত্র।
সমপ্রতি পাসপোর্টধারী রোহিঙ্গার সংখ্যা বাড়ছে।
ধরাও পড়েছে শতাধিক। এ প্রেক্ষিতে মূল হোতাদের গ্রেপ্তারে কঠোর নির্দেশনা দেয়া হয় স্বরাষ্ট্রমন্ত্রণালয় থেকে। প্রতিটি রেঞ্জ ডিআইজি, জেলা পুলিশ ও মেট্টোপলিটন পুলিশে এ ধরনের কাজে জড়িতদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেয়ার নির্দেশনা দেয়া হয়।

বিশেষ করে চট্টগ্রাম রেঞ্জ, জেলা ও কক্সবাজার জেলাকে সতর্ক থাকার জন্য বলা হয়। র‌্যাব সদর দপ্তর থেকেও এ বিষয়টি গুরুত্ব দেয়ার নির্দেশনা দেয়া হয়। কোনো রোহিঙ্গা যাতে পাসপোর্ট না পায় সে ব্যাপারে দৃষ্টি রাখার জন্য পাসপোর্ট অফিসগুলোকেও নির্দেশ দেয়া হয়েছে।

এদিকে, রোহিঙ্গাদের পাসপোর্ট তৈরিতে সহায়তাকারীদের শনাক্ত করতে কার্যক্রম শুরু করে র‌্যাব-পুলিশ ও পুলিশের গোয়েন্দা শাখা। ইতিমধ্যে অনেককে শনাক্তও করা হয়েছে। এরমধ্যে উখিয়া উপজেলার দুই ইউপি চেয়ারম্যানকে বরখাস্তও করা হয়েছে।

চট্টগ্রাম রেঞ্জের ডিআইজি খন্দকার গোলাম ফারুক বলেন, রোহিঙ্গাদের পাসপোর্ট-এনআইডি পাওয়া নিয়ে আমরা কঠোর অবস্থানে। তারা যাতে কোনোভাবেই পাসপোর্ট না পায় সে ব্যাপারে আমরা সবসময় সতর্ক। এসব কাজে যারা জড়িত তাদের গ্রেপ্তারে পুলিশকে নির্দেশনা দেয়া হয়েছে। তাদের অবশ্যই আইনের আওতায় আনা হবে। তাদের খুঁজে বের করে গ্রেপ্তার করা হবে। তিনি বলেন, চট্টগ্রাম মহানগর ও জেলার বিভিন্নস্থানে হোতাদের অবস্থান। তারা কাগজপত্র জোগাড় করে দালালদের মাধ্যমে পাসপোর্ট তৈরি করে। কাগজপত্র ভুয়া হলেও আসল পাসপোর্ট পেয়ে যায় তারা। ক্ষেত্র বিশেষে ইউপি চেয়ারম্যান, ওয়ার্ড কাউন্সিলরদের কাছ থেকে জন্মসনদও নিয়ে নেয় তারা। ভুয়া ঠিকানা ও টাকার বিনিময়ে কাউকে ভুয়া বাবা-মা বানিয়ে জন্মসনদ নেয় তারা।

চট্টগ্রামের মনসুরাবাদ পাসপোর্ট অফিসের পরিচালক আবু সাঈদ বলেন, রোহিঙ্গারা যাতে পাসপোর্ট করতে না পারে সেজন্য আমরা সতর্ক রয়েছি। কাগজপত্র পুঙ্খানুপুঙ্খভাবে যাচাই করার জন্য কর্মকর্তা-কর্মচারীদের নির্দেশ দেয়া হয়েছে। রোহিঙ্গাদের ডাটাবেজ রয়েছে। ফিঙ্গারপ্রিন্ট দিলেই সব বেরিয়ে আসে। আমাদের অফিসে পাসপোর্ট করতে এসে ধরাও পড়েছে কয়েকজন।

প্রসঙ্গত, পুলিশের সঙ্গে বন্ধুকযুদ্ধে নিহত রোহিঙ্গা ডাকাত নুর মোহাম্মদ, লাকী আক্তার, ফয়াজ উল্লাহসহ বেশ কয়েকজন রোহিঙ্গাদের নামে জাতীয় পরিচয়পত্র ও পাসপোর্ট থাকার সন্ধান পায় আইনশৃঙ্খলা বাহিনী। পাসপোর্ট বানাতে এসে বেশ কিছু রোহিঙ্গা তরুণ-তরুণী ধরা পড়ার ঘটনায় কঠোর অবস্থান নেয় সরকার। তারা যাতে কোনোভাবেই এনআইডি ও পাসপোর্ট পেতে না পারে সেজন্য আইনশৃঙ্খলা বাহিনীকে সব ধরনের ব্যবস্থা গ্রহণের নির্দেশনা দেয়া হয়েছে। এ ছাড়া মূল হোতাদের আইনের আওতায় আনার জন্য বলা হয়েছে। ফলে, মূল হোতাদের খোঁজে মাঠে নেমেছে র‌্যাব-পুলিশ-গোয়েন্দা। তালিকা করে চট্টগ্রাম-কক্সবাজারসহ বিভিন্ন স্থানে অভিযান চালানো হচ্ছে।

এদিকে, গত বুধবার নারায়ণগঞ্জের জালকুড়ি পাসপোর্ট অফিসের পাশে তিনটি দোকানে অভিযান চালিয়ে ২৫ হাজার ভুয়া জন্মসনদ জব্দসহ ৬ জনকে আটক করেছে র‌্যাপিড অ্যাকশন ব্যাটালিয়ন (র‌্যাব)-২। এ সময় ভুয়া জন্মনিবন্ধন সিল, সনদের হার্ড কপি ও সফট কপির হার্ডডিস্ক উদ্ধার করা হয়েছে।

র‌্যাব-২ এর পুলিশ সুপার মহিউদ্দিন ফারুকী জানান, আটকরা বিভিন্ন ইউনিয়ন পরিষদের কর্মকর্তা, সিটি করপোরেশনের কর্মকর্তা, জেলা পরিষদ ও বিভিন্ন উপজেলা পর্যায়ের কর্মকর্তা কর্মচারীদের যোগসাজশে জন্মনিবন্ধন সার্টিফিকেট তৈরি করে সরবরাহ করতো।

এদের হার্ডডিস্ক চেক করে আমরা ২৫ হাজারের মতো ভুয়া সনদ পেয়েছি। অনেক হার্ড কপিও পেয়েছি। এরা রোহিঙ্গাদের এসব জাল সনদ দিয়ে পাসপোর্ট তৈরিতে সহায়তা করতো বলে প্রাথমিকভাবে জানা গেছে।
অবশ্যই দিতে হবে *
অবশ্যই দিতে হবে *
অন্যান্য খবর