শনিবার হওয়ার কথা ছিল কেন্দ্রীয় ছাত্রদলের ষষ্ঠ কাউন্সিল। কিন্তু দু’দিন আগে সংগঠনের সাবেক সহ-ধর্ম বিষয়ক সম্পাদক আমানউল্লাহর করা মামলায় আদালত কাউন্সিল স্থগিতের আদেশ দেন। স্থগিতাদেশের পর করণীয় ঠিক করতে শুক্রবার ও গতকাল দফায় দফায় বৈঠক করেন কাউন্সিলের দায়িত্বপ্রাপ্তরা। বৈঠকে নিম্ন আদালতের স্থগিতাদেশ প্রত্যাহার করতে উচ্চ আদালতে যাওয়ার সিদ্ধান্ত হয়েছে। শুক্রবার রাত ১১টা পর্যন্ত গুলশানে খালেদা জিয়ার রাজনৈতিক কার্যালয়ে বৈঠক করেন ছাত্রদলের সাবেক নেতা ও কাউন্সিলের নির্বাচন পরিচালনা কমিটির সদস্যরা।
ছাত্রদলের সাবেক সভাপতি ও কাউন্সিলের আপিল কমিটির প্রধান শামসুজ্জামান দুদু বলেন, আমরা আদালতে যাব, এটা সিদ্ধান্ত হয়েছে। স্থগিতাদেশের বিষয়টি ফয়সালা হলে কাউন্সিলের বিষয়ে সিদ্ধান্ত হবে।এদিকে নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক ছাত্রদলের কয়েকজন সাবেক নেতা ও নির্বাচন পরিচালনা কমিটির সদস্য জানান, আজ বিএনপির আইনজীবীরা উচ্চ আদালতে যাবেন। স্থগিতাদেশ উঠে গেলেই শিগগিরই কাউন্সিল হবে।
তারা বলেন, কাউন্সিলে ভোটার তালিকা চূড়ান্ত।
শুধু ভোট গ্রহণই বাকি। স্থগিতাদেশ উঠে গেলে যে কোনো সময়েই কাউন্সিল আয়োজন করা যাবে। আর যে মামলা করেছে এটা ভূল বুঝাবুঝির কারণে হয়েছে। আমরা আশা করছি এটার একটা সমাধান হবে। ইতিমধ্যে দলের পক্ষ থেকে তার বাড়িতে যোগাযোগ করা হয়েছে। এ বিষয়ে বিএনপির আইন বিষয়ক সম্পাদক ব্যারিস্টার কায়সার কামাল বলেন, আদালত যে অস্থায়ী নিষেধাজ্ঞা ও কারণ দর্শনোর নোটিশ দিয়েছে এটা আদালতের এখতিয়ার বহির্ভূত। কোন রাজনৈতিক বিষয়ে আদালত এমন হস্তক্ষেপ করতে পারে না। আদালততো ছাত্রদলের কাউন্সিলের উপর কোন নিষেধাজ্ঞা দেয়নি। নিষেধাজ্ঞা দেয়া হয়েছে বিএনপির ১০ জন নেতার উপর। যাতে তারা ছাত্রদলের কাউন্সিলের কোন কার্যক্রমে অংশ নিতে না পারে। ২০০৭ সালে একটি রিট পিটিশন মামলায় মহামান্য হাইকোর্টের সুপ্রিমকোর্ট বিভাগ বলেছিলেন যে, রাজনৈতিক বিষয়ে আদালত হস্তক্ষেপ করুক এটা কাম্য নয়। বিএনপি একটি গণতান্ত্রিক দল। তাই আদালতের এই আদেশ এখতিয়ার বহির্ভূত জেনেও আমরা সঠিক সময়ে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেব।
এ দিকে কাউন্সিল স্থগিতের প্রতিবাদে বিএনপির কেন্দ্রীয় কার্যালয়ের সামনে অবস্থান নিয়ে মিছিল করছেন ছাত্রদলের নেতাকর্মীরা। গতকাল সকাল থেকে ছাত্রদলের কাউন্সিলের প্রার্থী ও তাদের কর্মী সর্মথকরা নয়াপল্টন কেন্দ্রীয় অফিসের সামনে ঝড়ো হয় এবং কাউন্সিলরদের পক্ষে স্লোগান দিতে থাকে।
ছাত্রদলের সভাপতি প্রার্থী ফজলুর রহমান খোকন বলেন, কাউন্সিল বন্ধের পেছনে একটা অশূভ চক্র রয়েছে। যারা কখনোই কোন গণতান্ত্রিক কার্যক্রম বা প্রক্রিয়াকে সাধুবাদ জানায় না। দলের ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান এবং নির্বাচন পরিচালনা কমিটির পক্ষ থেকে কোন নির্দেশনা আছে কিনা জানতে চাইলে তিনি বলেন, আমাদের সবাই আশস্ত করেছেন কাউন্সিল হবে। আর কাউন্সিলর যারা রয়েছেন তারা যেন ঢাকা ছেড়ে না যায়। আরেক সভাপতি প্রার্থী কাজী রওনকুল ইসলাম শ্রাবণ বলেন, সরকার মনে করেছিল ছাত্রদলের কাউন্সিল বাধা দিলে নেতাকর্মীদের মনোবল ভেঙে যাবে। কিন্তু এতে আমাদের মনোবল ভাঙেনি বরং আমরা আরো ঐক্যবদ্ধ আছি।
সভাপতি প্রার্থী হাফিজুর রহমান বলেন, আদালতের এই স্থগিতাদেশে আমাদের সমস্যা নেই। আমরা আমাদের স্বভাবিক কার্যক্রম চালিয়ে যাচ্ছি। দলের মধ্যে বিষয়টি নিয়ে আলোচনা হচ্ছে। দল যে সিদ্ধান্ত দেবে এটা আমরা মেনে নিব।
সাধারণ সম্পাদক প্রার্থী আমিনুর রহমান আমিন বলেন, ছাত্রদলের কাউন্সিলকে ঘিরে সারাদেশে গণজোয়ার বইছে। এটা দেখে সরকার ভয় পেয়েছে। তাই তারা আদালতকে ব্যবহার করে কাউন্সিল স্থগিত করেছে। আরেক সাধারণ সম্পাদক প্রার্থী শাহনেওয়াজ বলেন, যত ষড়যন্ত্রই হোক না কেন ছাত্রদলের কাউন্সিল আটকে রাখা যাবে না। হয়তো কিছুটা কালক্ষেপন হচ্ছে। আশা করছি অচিরেই কাউন্সিল সম্পন্ন হবে। সাধারণ সম্পাদক প্রার্থী সাইফ জুয়েল বলেন, সরকারের যোগসাজসেই আদালত এই স্থগিতাদেশ দিয়েছে। কিন্তু এতে ছাত্রদলের কোন ক্ষতি হয়নি। বরং সরকারের মুখোশ উন্মোচিত হয়েছে। এবারের ছাত্রদলের কাউন্সিলে সভাপতি পদে ৯ জন, সাধারণ সম্পাদক পদে ১৯ জন প্রতিদ্বন্দ্বিতা করছেন। এই কাউন্সিলে নতুন নেতৃত্ব নিবাচনের জন্য ভোট দেবেন সারাদেশে ১১৭টি ইউনিটের ৫৩৩ জন কাউন্সিলর।