× প্রচ্ছদ অনলাইনপ্রথম পাতাশেষের পাতাখেলাবিনোদনএক্সক্লুসিভভারতবিশ্বজমিনবাংলারজমিনদেশ বিদেশশিক্ষাঙ্গনরকমারিমত-মতান্তরবই থেকে নেয়া তথ্য প্রযুক্তি শরীর ও মন চলতে ফিরতে কলকাতা কথকতাসেরা চিঠিইতিহাস থেকেঅর্থনীতি
ঢাকা, ১৯ এপ্রিল ২০২৪, শুক্রবার , ৬ বৈশাখ ১৪৩১ বঙ্গাব্দ, ১০ শওয়াল ১৪৪৫ হিঃ

হাসিনা-মোদি বৈঠকে মুখ্য আলোচ্য হবে এনআরসি

প্রথম পাতা

মিজানুর রহমান
১৫ সেপ্টেম্বর ২০১৯, রবিবার

১০ দিনের ব্যবধানে দু’দফা মুখোমুখি বৈঠকে বসছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ও ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি। প্রথম বৈঠকটি হবে নিউইয়র্কে, চলতি মাসের চতুর্থ সপ্তাহে জাতিসংঘ সাধারণ পরিষদ অধিবেশনের সাইড লাইনে। আর দ্বিতীয় বৈঠকটি হবে নয়া দিল্লিতে, আগামী মাসের প্রথম সপ্তাহে। বৈঠক দু’টি হচ্ছে- এটা নিশ্চিত করেছে ঢাকা ও দিল্লি কূটনৈতিক সূত্রগুলো। তবে দিনক্ষণের বিষয়টি এখনই খোলাসা করে বলছে না কোন পক্ষই। বৈঠক সফলে উভয়ের প্রস্তুতি প্রায় সম্পন্ন বলে জানানো হচ্ছে। কূটনৈতিক সূত্রগুলো এ-ও বলছে, হাই প্রোফাইল ওই বৈঠক দু’টিতে বাংলাদেশ-ভারত সম্পর্কের প্রায় সব বিষয়ই কমবেশী আলোচনা হবে। সেখানে আসামের নাগরিকপঞ্জি থেকে শুরু করে রোহিঙ্গা, কাশ্মির, সীমান্ত হত্যাসহ সম-সময়িক বিষয়গুলোও নিশ্চিতভাবেই আসবে।

তবে কোন বৈঠকে অগ্রাধিকার ভিত্তিতে কোন ইস্যুটি আলোচনা হবে সে সুচিতেই এখন সংযোজন-বিয়োজন করছে দুই দেশের কূটনীতিকরা।
নিউইয়র্কের একটি দায়িত্বশীল কূটনৈতিক সূত্র মানবজমিনকে জানিয়েছে, আসন্ন ৭৪তম জাতিসংঘ সাধারণ পরিষদ অধিবেশন উপলক্ষ্যে বিশ্ব নেতাদের মিলন মেলা বসতে যাচ্ছে নিউইয়র্ক তথা যুক্তরাষ্ট্রে। বিশ্বরাজনীতির প্রাণকেন্দ্র জাতিসংঘের ওই আয়োজনে টানা তৃতীয় মেয়াদে প্রধানমন্ত্রী নির্বাচিত হওয়া শেখ হাসিনা অংশ নিচ্ছেন- এটা প্রায় নিশ্চিত। একই সঙ্গে দীর্ঘ বিরতির পর এবার ভারতের পূনঃনির্বাচিত প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদিও যোগ দিচ্ছেন। ঘনিষ্ঠ প্রতিবেশী দুই দেশের প্রধানমন্ত্রীদ্বয়ের বৈঠকে পারস্পরিক ইচ্ছা রয়েছে। ঢাকা ও দিল্লি পেশাদার কূটনীতিকরা এখন সেটি ইচ্ছার বাস্তবায়নে প্রস্তুতি নিচ্ছেন। ওই বৈঠকের নির্ধারিত আলোচ্যসূচির চেয়ে শীর্ষ নেতাদ্বয়ের সাক্ষাৎ এবং উপস্থিত মূহূর্তে উভয়ের চাওয়ার প্রেক্ষিতে যে আলোচনা হবে তাকেই ‘তাৎপর্যপূর্ণ’ মনে করছেন কূটনীতিকরা। তারা এ-ও বলছেন, নিউইয়র্কের আলোচনার ধারাবাহিকতা থাকবে এক সপ্তাহ পর নয়াদিল্লির বৈঠকে। অক্টোবরের প্রথম সপ্তাহেই প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা দিল্লি সফরে যাচ্ছেন।

একটি বহুপক্ষীয় আয়োজনে অংশ নিতে সরকার প্রধানের দিল্লি যাওয়ার প্রস্তুতি নিচ্ছিলেন। কিন্তু প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি তার সরকারের বিদেশমন্ত্রী ড. এস জয়শঙ্করকে ঢাকায় পাঠিয়ে শেখ হাসিনাকে ওই আয়োজনের পাশাপাশি দ্বিপক্ষীয় বৈঠক তথা সফরে আমন্ত্রণ জানান। প্রধানমন্ত্রী দিল্লি সফরের বিষয়ে ভারতের প্রভাবশালী সবাদ মাধ্যম হিন্দুস্তান টাইম একটি রিপোর্ট করেছেন। ওই রিপোর্টে বলা হয়েছে- আগামী ৩ থেকে ৬ অক্টোবর ভারত সফর করবেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। সফরকালে ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদির সঙ্গে তার দ্বিপাক্ষিক বৈঠক হবে। সেই বৈঠকে আসামের জাতীয় নাগরিকপঞ্জি বা এনআরসি থেকে বাদ পড়াদের নিয়ে ঢাকার যে উদ্বেগ রয়েছে তার গুরুত্বের সঙ্গে ব্যক্ত করতে পারেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। রিপোর্টে বলা হয়েছে- ২০১৮ সালের ডিসেম্বরে নির্বাচনে ভুমিধস জয় নিয়ে টানা তৃতীয়বার বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী নির্বাচিত হন শেখ হাসিনা। আর গত জুনে নিজের দ্বিতীয় মেয়াদ শুরু করেছেন মোদি। দুই নেতার বলিষ্ট নেতৃত্বে ভারত-বাংলাদেশ সম্পর্ক সম্প্রতিক সময়ে বেশ পোক্ত-পরিপক্ক অবস্থানে এসেছে। যৌথভাবে তারা বেশ কিছু প্রকল্প উদ্বোধন করেছেন।

বিশেষ করে দুই দেশের কানেক্টিটিভিটি বা সংযোগ স্থাপনে নানা প্রকল্প চালু হয়েছে তাদের আমলে। দিল্লি সফরে প্রধানমন্ত্রী মোদির সঙ্গে বৈঠক ছাড়াও ৪ঠা অক্টোবর বিশ্ব অর্থনৈতিক ফোরামের ভারতীয় অর্থনৈতিক সম্মেলনে যোগ দেবেন শেখ হাসিনা। রিপোর্ট মতে, শেখ হাসিনা এমন এক সময়ে ভারত সফর করছেন, যখন আসামের নাগরিকপঞ্জি (এনআরসি) ঘিরে দুই দেশের সম্পর্কে এক ধরণের টানাপড়েন বা অস্পষ্টতা তৈরি হয়েছে। এনআরসি থেকে বাদ পড়েছেন রাজ্যের প্রায় ১৯ লাখ ৬ হাজার ৬৫৭ জন মানুষ। ভারত দাবি করে আসছে তালিকা থেকে বাদ পড়ারা বাংলাদেশ থেকে ভারতে স্থায়ী হওয়া অবৈধ অভিবাসী। তবে বাংলাদেশ এই অভিযোগ অস্বীকার করে আসছে। সূত্রের বরাতে হিন্দুস্তান টাইমস বলছে- মোদির সঙ্গে আলোচনায় শেখ হাসিনা বিষয়টি নিয়ে ঢাকার উদ্বেগ জানাতে পারেন। আসামের মন্ত্রী-রাজনীতিকদের প্রকাশ্য মন্তব্যে ঢাকায় এনআরসি নিয়ে অস্বস্তি তৈরি হয়েছে। রাজ্যের মুখ্যমন্ত্রী হিমন্ত বিশ্ব শর্মা বলেছেন, ভারত বাংলাদেশকে বোঝাবে যে ভারতে অবৈধভাবে বসবাসরত ‘বাংলাদেশী’দের ফেরত নিতে হবে। তবে গত আগস্টে ঢাকা সফরকারী দিল্লির বিদেশমন্ত্রী ড. এস জয়শঙ্কর পররাষ্ট্রমন্ত্রী ড. একে আবদুল মোমেনের সঙ্গে বৈঠক এবং পরবর্তী যৌথ সংবাদ সম্মেলনে বলে গেছেন এনআরসির বিষয়টি একান্তই ভারতের অভ্যন্তরীণ বিষয়। গত বৃহস্পতিবার দিল্লির বিদেশমন্ত্রকের মূখপাত্রও মন্ত্রী জয়শঙ্করকে উদ্বৃত করে ফের বলেছেন, এটি আসলেই ভারতের অভ্যন্তরীণ বিষয়। মূখপাত্রের কাছে প্রশ্ন ছিল এনআরসি থেকে নাম বাদ পড়াদের বাংলাদেশে ফেরত পাঠানো হবে কি-না? এ নিয়ে দিল্লি ঢাকার সঙ্গে আনুষ্ঠানিক আলোচনায় যুক্ত হয়েছে বা হচ্ছে কি-না? বিদেশমন্ত্রকের মুখপাত্র রবীশ কুমার সরাসরি এর জবাব দেন নি।

তিনি বিষয়টি ভবিষ্যতের ওপর ছেড়ে দেন। বলেন, ভবিষ্যতে কী ঘটবে, তা নিয়ে আমি এখনই কিছু বলতে রাজি নই! বাংলাদেশ প্রশ্নে এই প্রথম মন্তব্য করলেন বিদেশমন্ত্রকের মূখপাত্র। কিন্তু তার কথায় এটা স্পষ্ট হয়নি- যে চূড়ান্ত প্রক্রিয়া শেষে বাদ পড়া কথিত ‘অবৈধ বিদেশি’কে তারা বাংলাদেশে পাঠানোর চেষ্টা করবেন কি-না? অর্থাৎ বাংলাদেশে পাঠানোর চেষ্টা হবে না- এই নিশ্চয়তা বিদেশমন্ত্রক এখনই দিতে পারছে না। মূখপাত্র রবীশ কুমারের জবাবটি ছিল এরকম- দেখুন, এর আগেই আমি পররাষ্ট্রমন্ত্রীকে উদ্ধৃত করে জানিয়েছি, এটা পুরোপুরি আমাদের অভ্যন্তরীণ বিষয়। যে কথাটা তিনি সমপ্রতি বাংলাদেশ সফরে গিয়েও বলেছেন। আর এটাও বুঝতে হবে যে আমরা এখানে এমন একটা প্রক্রিয়া নিয়ে কথা বলছি যা বেশ দীর্ঘ এবং সময়সাপেক্ষ। এরপর ট্রাইব্যুনাল আছে, হাইকোর্ট বা সুপ্রিম কোর্টে যাওয়ার আইনি প্রক্রিয়া আছে। ফলে এই প্রক্রিয়ার অনেকটাই এখনও ভবিষ্যতের গর্ভে। আর ভবিষ্যতে কী ঘটবে বা ঘটবে না কিংবা কীভাবে এর নিষ্পত্তি হবে সেটা নিয়ে আমাদের বেশি কথা না বলাই ভালো। আমরা যেটুকু বুঝি তাতে বলতে পারি, এটা একটা ন্যায়সম্পন্ন ও স্বচ্ছ প্রক্রিয়া। আর ভবিষ্যতে কী হবে সেটা তো ভবিষ্যৎই নির্ধারণ করবে। ফলে আমার কাছে এখন এ প্রশ্নের কোনও জবাব নেই।

রোহিঙ্গা সংকটের সমাধানে ভারতের সহায়তা চাইবে প্রধানমন্ত্রী: এদিকে হিন্দুস্তান টাইমসের খবর মতে, এনআরসি ছাড়াও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সফরে মিয়ানমারের লাখ লাখ রোহিঙ্গা শরণার্থী ফেরাতে ভারতের সমর্থন চাইবে বাংলাদেশ। এছাড়া ভারতের অর্থায়নে চলমান উন্নয়ন প্রকল্পগুলোর অগ্রগতি বাস্তবায়ন পর্যালোচনা এবং নদীর পানি বণ্টন নিয়ে আলোচনা হবে। শেখ হাসিনার ওই সফরে দুই দেশই সন্ত্রাসবিরোধী সহযোগিতা জোরালো করবে বলেও আভাস দেয়া হয়েছে ওই রিপোর্টে।
অবশ্যই দিতে হবে *
অবশ্যই দিতে হবে *
অন্যান্য খবর