রিফাত শরীফ হত্যাকাণ্ডের আরেকটি ভিডিও সমপ্রতি সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ছড়িয়ে পড়েছে। বরগুনা জেনারেল হাসপাতালের সামনের একটি সিসি ক্যামেরায় রেকর্ড হয় ভিডিওটি। বরগুনা জেনারেল হাসপাতালের সামনের একটি সিসি ক্যামেরায় রেকর্ড হওয়া ভিডিওতে দেখা যায়, ২৬শে জুন সকাল ১০টা ২১ মিনিটে মিন্নি একাই একটি রিকশায় অচেতন রিফাতকে হাসপাতালের জরুরি বিভাগের সামনে নিয়ে যান। এ সময় সেখানে দাঁড়ানো মামুন নামের একজন রিফাত শরীফকে বহন করা রিকশার দিকে দৌড়ে আসেন। রিফাতের অবস্থা দেখে তিনি হাসপাতালের ভেতরে গিয়ে একটি স্ট্রেচার নিয়ে রিকশার পাশে আসেন। এ সময় সেখানে উপস্থিত অনেকেই ধরে অচেতন রিফাত শরীফকে রিকশা থেকে নামিয়ে স্ট্রেচারে হাসপাতালের ভেতরে নেয়া হয়। এরপর রক্ত মাখা হাতে মিন্নি হাসপাতালের সামনে উপস্থিত একজনের ফোন নিয়ে কারো সঙ্গে কথা বলে হাসপাতালের ভেতরে যান। এর কিছুক্ষণ পর মিন্নির বাবা মোয়াজ্জেম হোসেন কিশোর হাসপাতালে আসেন।
এরপর সকাল ১০টা ৩৮ মিনিটে হাসপাতালের সামনে একটি অ্যাম্বুলেন্স আসে।
১০টা ৪৪ মিনিটে অক্সিজেন ও দুটি স্যালাইন লাগানো অবস্থায় রিফাত শরীফকে স্ট্রেচারে করে ওই এম্বুলেন্সে তোলা হয়। ১০টা ৪৯ মিনিটে বরগুনা জেনারেল হাসপাতাল প্রাঙ্গণ ত্যাগ করে বরিশাল শের-ই-বাংলা মেডিকেল কলেজ হাসাপাতালের দিকে রওনা হয় এম্বুলেন্সটি।
জানা যায়, বরগুনা জেনারেল হাসপাতালের সামনে হাসপাতাল কর্তৃপক্ষের একটি ও বরগুনা জেলা পুলিশের একটি সিসি ক্যামেরা আছে। তবে এ ভিডিওটি কোন ক্যামেরায় ধারণ করা, তা নিশ্চিত হওয়া যায়নি।
স্বামী হত্যায় অভিযুক্ত হওয়ার পর মিন্নি এখন জামিনে কারামুক্ত হয়ে বরগুনার মাইঠা এলাকায় বাবার বাসায় অবস্থান করছেন। আদালতের নিষেধাজ্ঞা থাকায় এ বিষয়ে মিন্নি কোনো কথা বলেন নি।
এ বিষয়ে মিন্নির বাবা মোজাম্মেল হোসেন কিশোর বলেন, বরগুনা জেনারেল হাসপাতালের সামনের এই ভিডিওটি আমি সংগ্রহ করেছি। মিন্নি যে রিফাত শরীফকে বাঁচাতে সর্বোচ্চ চেষ্টা করেছে, তা কলেজের সামনের ভিডিও এবং হাসপাতাল প্রাঙ্গণের ভিডিওতে সুস্পষ্টভাবে দেখা যায়। আমার মেয়ে রিফাত হত্যাকাণ্ডের সঙ্গে জড়িত নয়। আমার মেয়ের বিরুদ্ধে ষড়যন্ত্র হচ্ছে।
আমার মেয়ের বিরুদ্ধে ষড়যন্ত্র করেই কলেজের সামনের আরেকটি ভিডিওটি প্রকাশ করা হয়েছে কিন্তু হাসপাতালের সামনের এই ভিডিওটি গোপন করার চেষ্টা করা হয়েছে। এ রকম আরো একটি ভিডিও আমার সন্ধানে আছে। আমি সেই ভিডিওটি উদ্ধারের চেষ্টা চালাচ্ছি।
গুরুতর আহত রিফাতকে বরগুনা জেনারেল হাসপাতালে নিয়ে আসার পর চিকিৎসা দেয়ার সময় উপস্থিত ছিলেন, বরগুনার সিভিল সার্জন অফিসের সিনিয়র টেকনিশিয়ান সুভাষ চন্দ্র। সুভাষ চন্দ্র বলেন, রিফাত শরীফকে যখন হাসপাতালের জরুরি বিভাগে নিয়ে আসা হয়, তখন আমি সেখানে উপস্থিত ছিলাম। ধারালো অস্ত্রের আঘাতে রিফাতের অবস্থা খুব খারাপ ছিল। চিকিৎসকরা জানান, অস্ত্রের আঘাতে তার বাম পাশের ফুসফুস দ্বিখণ্ডিত হয়ে গিয়েছিল। এ কারণে সব ব্যবস্থা করেও তার জীবন সংশয় হতে পারে ভেবে রিফাতকে দ্রুত উন্নত চিকিৎসার জন্য বরিশাল শের-ই-বাংলা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে পাঠানো হয়।
উল্লেখ্য, এ বছরের অন্যতম আলোচিত রিফাত শরীফ হত্যাকাণ্ডটি ঘটেছিল গত ২৬শে জুন। সকাল সাড়ে ১০টার দিকে বরগুনা সরকারি কলেজের মূল ফটকের সামনের রাস্তায় প্রকাশ্যে কুপিয়ে জখম করা হয় ২২ বছরের এই তরুণকে। এ সময় তার স্ত্রী বরগুনা সরকারি কলেজের স্নাতক প্রথম বর্ষের ছাত্রী মিন্নি তাকে রক্ষার প্রাণপণ চেষ্টা চালান। কিন্তু সন্ত্রাসীরা রিফাতকে কুপিয়ে গুরুতর আহত করে পালিয়ে যায়। সেদিনই বেলা ৩টার দিকে বরিশালের শের-ই-বাংলা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে রিফাতের মৃত্যু হয়। সরকারি কলেজের সামনে জনসম্মুখে এমন নৃশংস হামলার ঘটনার একটি ভিডিও পরে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ছড়িয়ে পড়ে। তখন সারা দেশে বিষয়টি নিয়ে ক্ষোভের ঝড় ওঠে।