সোহাগ সরদার পাঁচ বছর আগে পারিবারিকভাবে বিয়ে করেন পাশের গ্রামের মেয়ে আদুরি বেগমকে। জোহান সরদার নামে তাদের সংসারে তিন বছর বয়সী একটি পুত্র সন্তান রয়েছে। তাদের দাম্পত্য জীবন ভালোই চলছিল। কিন্তু সোহাগ সরদারের স্ত্রীর সঙ্গে হঠাৎ করে মোবাইল ফোনে সখ্যতা তৈরি হয় একই গ্রামের শুকুর শেখের ছেলে রাজিব শেখের। রাজিব দীর্ঘদিন ধরে তার স্ত্রীকে উত্ত্যক্ত করে আসছিল। প্রেমিককে শায়েস্তা করতে রাজিবের কান কেটে নেয় সোহাগের বংশের লোকেরা। এই ঘটনার প্রতিশোধ নিতে সম্প্রতি সোহাগের কান কেটে নেয় রাজিব শেখ ও তার দলের লোকেরা। বর্তমানে আত্মগোপনে থেকে ঢাকার একটি বেসরকারি হাসপাতালে চিকিৎসা নিচ্ছেন সোহাগ সরদার।
এ বিষয়ে মানবজমিনকে সোহাগ সরদার বলেন, আমার বিয়ে হয়েছে ২০১৪ সালে। তিন বছর বয়সী আমাদের একটি ছেলে রয়েছে। দীর্ঘদিন ধরে মোবাইল ফোনে আমার স্ত্রীর সঙ্গে প্রেমের সম্পর্ক তৈরি করে টুঙ্গিপাড়া উপজেলা আওয়ামী লীগের সহ-সভাপতি শেখ শুকুর আহম্মেদের ছেলে রাজিব শেখ। তাকে আমরা অনেক বোঝানোর চেষ্টা করেছি। কিন্তু সে আমার স্ত্রীকে নিয়মিত ফোনে বিরক্ত করছিল। এ বিষয়ে রাজিবের বাবার কাছে একাধিকবার বিচার দিলেও কাজ হয়নি। সে উল্টা ছেলেকে প্রশ্রয় দিয়েছে। পরবর্তীতে আমরা পারিবারিকভাবে বিচার সালিশের মাধ্যমে বিষয়টি মিমাংসার চেষ্টা করি। তারপরেও রাজিব আমার স্ত্রীকে ফোনে বিরক্ত করে। এসময় আমাদের সঙ্গে গ্যাঞ্জাম করে বাড়ি ঘর পুড়িয়ে দেয় তারা। পরবর্তীতে আমাদের বংশের লোকেরা মিলে তিন থেকে চার মাস আগে রাজিবের কান কেটে নেয়। আমার স্ত্রীকে উত্যক্ত করাকে কেন্দ্র করে অনেকদিন আগে আমরা স্থানীয় থানায় মামলা করতে গেলে মামলা নেয়নি। পরবর্তীতে কোর্টে মামলা করি। সেই ঘটনার প্রতিশোধ নিতে এবার প্রকাশ্য জনসম্মুখে আমার কান কেটে নিয়েছে রাজিব শেখ।
আমি ঢাকার মিরপুরে একটি প্যান্টের দোকানে চাকরি করি। আমাদের গ্রামের বাড়ি শ্রীরামকান্দি। আমার বাবার নাম মো. শওকত সরদার। ৫ ভাই বোনের মধ্যে আমি চতুর্থ। সোগাগ সরদার বলেন, গত ১৬ই সেপ্টেম্বর বিকেলে আমি কর্মস্থলে আসার উদ্দেশ্যে বাড়ি থেকে বের হই। পাটগাতী বাসস্ট্যান্ডে ঢাকাগামী একটি বাস কাউন্টার থেকে টিকিট সংগ্রহ করছিলাম। এ সময় হঠাৎ করে পেছন থেকে একই গ্রামের শুকুর শেখের ছেলে রাজিব শেখ ও তার দশ বারোজন সঙ্গী আমাকে এলোপাতাড়ি কুপিয়ে জখম করে। এসময় আমার হাত, মাথা, কানসহ শরীরের বিভিন্ন অংশে ধারালো দেশিয় অস্ত্র চাপাতি, খুর এবং এন্টিকাটার দিয়ে কোপাতে থাকে। আমার বাম কান সম্পূর্ণরূপে কেটে পলিথিন ব্যাগের মধ্যে ভরে তারা মিছিল করতে করতে চলে যায়। এ সময় আমাকে উদ্ধার করে প্রথমে টুঙ্গিপাড়া স্থানীয় একটি হাসপাতালে ভর্তি করা হয়। উন্নত চিকিৎসার জন্য সেখান থেকে ঢাকা মেডিকেল এবং পরে ঢাকার একটি বেসরকারি হাসপাতালে ভর্তি করা হয়। চিকিৎসকরা বলেছেন, আগামী দুই থেকে আড়াই মাস পরে আমার কানের অপারেশন হবে। তখনও কান সম্পূর্ণ ভালো হবে কি না সে নিশ্চয়তা দিতে পারেনি ডাক্তাররা। এ বিষয়ে স্থানীয় থানায় মামলা করেছি।