× প্রচ্ছদ অনলাইনপ্রথম পাতাশেষের পাতাখেলাবিনোদনএক্সক্লুসিভভারতবিশ্বজমিনবাংলারজমিনদেশ বিদেশশিক্ষাঙ্গনরকমারিমত-মতান্তরবই থেকে নেয়া তথ্য প্রযুক্তি শরীর ও মন চলতে ফিরতে কলকাতা কথকতাসেরা চিঠিইতিহাস থেকেঅর্থনীতি
ঢাকা, ১৭ এপ্রিল ২০২৪, বুধবার , ৪ বৈশাখ ১৪৩১ বঙ্গাব্দ, ৮ শওয়াল ১৪৪৫ হিঃ

নারায়ণগঞ্জে ‘বন্দুকযুদ্ধে’ নিহত ১, লাশ দাফনে বাধা

শেষের পাতা

স্টাফ রিপোর্টার, নারায়ণগঞ্জ থেকে
১৯ সেপ্টেম্বর ২০১৯, বৃহস্পতিবার

নারায়ণগঞ্জ শহরের আলোচিত কিশোর গ্যাংয়ের প্রধান সাইফুল ইসলাম তুহিন ওরফে চাপাতি তুহিন (২০) র‌্যাবের সঙ্গে ‘বন্দুকযুদ্ধে’ নিহত হয়েছে। সে তালিকাভুক্ত মাদক ব্যবসায়ী ও সন্ত্রাসী। তার বিরুদ্ধে ৪টি মামলা রয়েছে। এবং তুহিন শহরের দেওভোগ এলাকার শাকিল হত্যা মামলার প্রধান আসামি ছিল। ঘটনাস্থল থেকে র‌্যাব একটি বিদেশি পিস্তল ও তিন রাউন্ড গুলি উদ্ধার করেছে। নিহত তুহিন শহরের দেওভোগ শান্তিনগর এলাকার কাওসার হোসেনের ছেলে। ঘটনাটি ঘটেছে বুধবার ভোররাতে সদর মডেল থানার সৈয়দপুর এলাকায়। এদিকে তুহিনের মৃত্যুর সংবাদ পেয়ে এলাকায় মিষ্টি বিতরণ করে উল্লাস প্রকাশ করেছে এলাকাবাসী।
এবং লাশ দাফনেও বাধা দিয়েছে। অন্যদিকে, বন্দুকযুদ্ধে তুহিন নিহতের খবরে তুহিন বাহিনীর সদস্যরা গাঢাকা দিয়েছে। এই বাহিনী এমন কোনো অপকর্ম নেই যা তারা এলাকায় করে না। রীতিমতো জিম্মি হয়ে পড়ে এলাকার সাধারণ মানুষ এই বাহিনীর কাছে।

র‌্যাব-১১ এর সহকারী পুলিশ সুপার মশিউর রহমান জানান, মঙ্গলবার রাতে কুমিল্লার দেবিদ্বার থেকে তুহিনকে আটক করা হয়েছে। পরে তার দেয়া তথ্যমতে র‌্যাব ভোররাতে শহরের সৈয়দপুর এলাকায় অস্ত্র ও মাদক উদ্ধারে যায়। এ সময় আগে থেকে ওত পেতে থাকা তুহিনের সহযোগীরা তাকে ছাড়িয়ে নিতে র‌্যাবকে লক্ষ্য করে গুলি ছুড়ে। বন্দুকযুদ্ধের এক পর্যায়ে সন্ত্রাসীরা পালিয়ে গেলে ঘটনাস্থল থেকে তুহিনকে গুলিবিদ্ধ অবস্থায় উদ্ধার করে সদর জেনারেল হাসপাতালে নিয়ে গেলে কর্তব্যরত চিকিৎসক তাকে মৃত বলে ঘোষণা করেন। পরে ঘটনাস্থলে তল্লাশি চালিয়ে একটি বিদেশি পিস্তল, একটি ম্যাগাজিন ও তিন রাউন্ড গুলি উদ্ধার করে।

র‌্যাব জানায়, নিহত তুহিন এলাকায় কোথাও তুহিন বন্ড, আবার কোথাও চাপাতি তুহিন নামে পরিচিত ছিল। সে ছিল একজন দুর্ধর্ষ সন্ত্রাসী। তার বিরুদ্ধে হত্যা, মাদক ও চাঁদাবাজিসহ বিভিন্ন অভিযোগে অন্তত চারটি মামলা রয়েছে।
এলাকাবাসীর তথ্যমতে, দেওভোগের হাসেমবাগে শাকিল হত্যার মামলার প্রধান আসামি তুহিন। গত ২৭শে জুলাই রাতে তুচ্ছ ঘটনাকে কেন্দ্র করে শাকিল নামে নিরীহ ওই যুবককে কুপিয়ে নির্মমভাবে হত্যা করে কিশোর গ্যাং সন্ত্রাসী তুহিন ও তার সাঙ্গপাঙ্গরা। ওই ঘটনায় আরো ৬ জনকে কুপিয়ে আহত করা হয়। ওই ঘটনায় তুহিনকে প্রধান আসামি করে ফতুল্লা থানায় একটি মামলা করে নিহত শাকিলের বড় ভাই সাঈদ হোসেন। এর আগে গত ২৭শে জানুয়ারি রাতে দেওভোগ মাদ্রাসা এলাকায় আলমগীরকেও কুপিয়ে হত্যা করে ওই কিশোর গ্যাং তুহিন বাহিনী। নিহত আলমগীর মুন্সীগঞ্জের টঙ্গিবাড়ি থানার দশলং এলাকার লাল মিয়ার ছেলে। সে দেওভোগ মাদ্রাসা এলাকার নুরু মিয়ার বাড়িতে ভাড়া থাকতো। এ ছাড়াও ওই কিশোর গ্যাং সন্ত্রাসীদের হাতে দেওভোগ নাগবাড়িতে নির্মমভাবে খুন হয় হৃদয় হোসেন বাবু নামে আরো এক যুবক। এই বাহিনীর প্রধান শেল্টারদাতা হিসেবে সাবেক ছাত্রলীগ নেতা তাসলিমের নাম এলাকাবাসীর মুখে মুখে চাউর হচ্ছে। ওই নেতার বিরুদ্ধেও সন্ত্রাসী কর্মকাণ্ডের অভিযোগ রয়েছে।

কিশোর গ্যাং তুহিনের উত্থান যেভাবে
বিভিন্ন সূত্র ও নিহতের স্বজনদের তথ্যমতে, নিহত তুহিন দেওভোগের তাঁতীপাড়া এলাকার অটোরিকশাচালক কাওসার হোসেনের ছেলে। তারা ২ ভাই ও ২ বোন। ৬ বছর বয়সে মা মারা যায় তুহিনের। বাবা দ্বিতীয় বিয়ে করেন। স্কুলে এবং মাদ্রাসায় ভর্তি করালেও পড়াশোনায় মন ছিল না তার। মায়ের আদর থেকে বঞ্চিত হয়ে দিন দিন অবাধ্য হয়ে যায় সে। পরে যোগ দেয় দেওভোগ এলাকার শীর্ষ সন্ত্রাসী হাসানের (ইতিপূর্বে ক্রসফায়ারে নিহত) দলে। সে সময় হাসানের সেকেন্ড ইন কমান্ড ছিল সে। হাসান ক্রসফায়ারে মারা যাওয়ার পরে ওই দলের পুরো দায়িত্ব নেয় তুহিন। এবং সাবেক এক ছাত্রলীগ নেতার শেল্টারে চলে যায় সে। বরগুনায় রিফাত হত্যার মূলহোতা নয়ন বন্ড নিহত হওয়ার পর তুহিন নিজের নামের পাশে ‘বন্ড’ শব্দটা জুড়ে দিতো। ওই বাহিনীর কারণে পশ্চিম দেওভোগের হাসেমবাগ ও পশ্চিম নগর এলাকা দীর্ঘদিন ধরেই অপরাধীদের অভয়ারণ্য হিসেবে পরিচিত। ক্রমেই যেন এ এলাকা আরো ভয়ঙ্কর ক্রাইম জোন হয়ে উঠেছে। হেন কোনো অপরাধ কর্মকাণ্ড নেই যা এখানে হয় না।

এই বাহিনীর সদস্যরা এলাকায় হত্যা, ছিনতাই, চাঁদাবাজি, অপহরণ, মাদক ব্যবসাসহ সব ধরনের অপকর্মে লিপ্ত। তাদের বিরুদ্ধে প্রকাশ্যে কেউ মুখ খোলার সাহস করে না।
এলাকাবাসীর তথ্যমতে, কিশোর গ্যাং তথা তুহিন বাহিনী এলাকায় প্রকাশ্যে মাদক বিশেষ করে ইয়াবা ব্যবসার বিশাল সিন্ডিকেট গড়ে তুলেছে। এই কিশোর গ্যাংয়ের তুহিন ছাড়াও অন্য সদস্যরা হলো- বোতলা, আল আমিন, পিয়াস, সাদ্দাম, বুইট্টা মিলন, রফিকুল, হৃদয়, বডি সজীব, সোহেল ও দাড়িওয়ালা মানিক সহ আরো অনেকে। এলাকায় তুহিন বাহিনী হিসেবে এ সন্ত্রাসীরা পরিচিত। এদের মধ্যে বোতলা, আল আমিন, পিয়াস, সাদ্দাম হলো মাদকের মূল ডিলার অর্থাৎ পাইকারি বিক্রেতা। তবে পাড়া-মহল্লায় ইয়াবা ট্যাবলেট বিক্রি হচ্ছে তাদের প্রধান ব্যবসা।

তুহিন বাহিনীর কারণে এলাকার সাধারণ মানুষের নিরাপত্তা হুমকির মুখে পড়ে। দিনের বেলা যেমন-তেমন, কিন্তু সন্ধ্যার পর থেকে গভীর রাত পর্যন্ত তাদের তৎপরতা ভয়ঙ্কয় হয়ে উঠে। ভয়ে সাধারণ মানুষ জরুরি প্রয়োজন ছাড়া রাতের বেলা চলাচল করে না। এমন পরিস্থিতিতে এই বাহিনীর প্রধান তুহিন ‘বন্দুকযুদ্ধে’ নিহত হওয়ায় কিছুটা হলেও হাঁফ ছেড়ে বেঁচেছে এলাকাবাসী।

তুহিনের বোনের আক্ষেপ
এদিকে, নারায়ণগঞ্জ জেনারেল হাসপাতালের মর্গের সামনে নিহত তুহিনের বড় বোন স্বর্ণা আক্ষেপ করে সাংবাদিকদের বলেন, ভাইয়ের জন্য স্বামী ছেড়ে দিয়েছি। দুই ভাইকে কতো আদর করে লালন পালন করেছি। আহারে ভাই! কেন যে তুই এই লাইনে গেলি?’ তিনি আরো বলেন, পাসপোর্ট করেছিলাম, বিদেশ পাঠানোর জন্য। খারাপ তো আগেই হয়ে গিয়েছে। ভাবছিলাম বিদেশ পাঠাইলে ভালে হয়ে যাবে। কিন্তু ঘাড়ামি করে গেল না। বিদেশ চলে গেলে আর মরতে হতো না তাকে।

লাশ দাফনে বাধা
এদিকে, তুহিনের বড় বোন শারমিন জানান, দেওভোগে তুহিনের লাশ দাফনে বাধা দিচ্ছে এলাকাবাসী। ফলে পাইকপাড়া কবরস্থানে দাফনের ব্যবস্থা করা হয়েছে। তিনি বলেন, মরা মানুষরে তো মানুষ মাফও কইরা দেয়। আমার ভাই শাস্তি তো পাইয়া গেছে। ওরা (এলাকাবাসী) পারলে এখন মরা লাশরেই লাথি মারতো।
অবশ্যই দিতে হবে *
অবশ্যই দিতে হবে *
অন্যান্য খবর