নির্বাচনে ভোটার জটিলতা নিয়ে কেটে গেছে ৬ মাস। এর মধ্যে নানা সংকটের মুখে চেম্বার। গণতান্ত্রিক ধারায় ফিরবে কি না- এ নিয়ে দেখা দিয়েছিলো সংশয়। আর এই সংকট কাটাতে হস্তক্ষেপ করেছিল বাণিজ্য মন্ত্রনালয়। নিয়োগ দেয়া হয়েছে প্রশাসকও। এই প্রশাসকের হাত ধরেই ফের গণতান্ত্রিক ধারায় ফেরার অপেক্ষায় রয়েছে সিলেটের ব্যবসায়ীদের শীর্ষ সংগঠন সিলেট চেম্বার অব কমার্স। আর মাত্র একদিন বাকি নির্বাচনের। এই নির্বাচনের মাধ্যমে নতুন নেতৃত্বকে বরণ করে নেবেন সিলেটের ব্যবসায়ীরা।
এতে করে গতি ফিরে আসবে চেম্বারের কার্যক্রমে। শনিবার হতে যাচ্ছে সিলেট চেম্বারের নির্বাচন। এবারের নির্বাচনকে কেন্দ্র করে অন্যরকম আমেজ সিলেটে। নির্বাচনের আমেজ শুধু যে, ব্যবসায়ীদের মধ্যে সীমাবদ্ধ তা নয়, সিলেটের সকল শ্রেণি- পেশার মানুষ এতে সম্পৃক্ত হচ্ছেন। বিশেষ করে চেম্বারের বর্তমান প্রশাসক ও নির্বাচন পরিচালনা কমিটি নির্বাচনে সিলেটের পেশাজীবী সহ অনেককে সম্পৃক্ত করেছেন। গেল ১৫ দিন ধরে সিলেট চেম্বার নির্বাচনকে ঘিরে প্রচারণার অন্ত ছিল না সিলেটে। কখনো কখনো এই প্রচারণা শোডাউনে পরিণত হয়েছে। এবারের নির্বাচনে মুখোমুখি হয়েছে দু’টি প্যানেল।
এর মধ্যে একটি হচ্ছে- সিলেট ব্যবসায়ী পরিষদ ও অপরটি হচ্ছে সিলেট সম্মিলিত ব্যবসায়ী পরিষদ। দুই প্যানেলের পক্ষে ব্যবসায়ীরা বিভক্ত হয়ে প্রচারণায় গতি বাড়িয়েছেন। তাদের সঙ্গে বিভক্ত ব্যবসায়ীরাও। সিলেট চেম্বার অব কমার্সের নির্বাচন পরিচালনা বোর্ডের চেয়ারম্যান নাসির উদ্দিন খান জানিয়েছেন- ‘চেম্বার নির্বাচন নিয়ে এবার আগ্রহ বেশি। এ কারণে আমাদের পক্ষ থেকে নিরপেক্ষ থেকে নির্বাচন পরিচালনা কষ্টকর বিষয় ছিলো। কিন্তু সিলেটের মানুষ সহ বিভিন্ন শ্রেণি-পেশার ব্যক্তিবর্গ এতে সহযোগিতা করায় আমাদের কাজ সহজ হয়েছে।’ তিনি বলেন- ‘ভোটাররা নতুন নেতৃত্ব নির্বাচন করবেন। আর এতে আমরা কেবল সহযোগিতা করছি।’ এদিকে- নির্বাচনকে সামনে রেখে এক সংবাদ সম্মেলনে নির্বাচন পরিচালনা বোর্ডের পক্ষ থেকে জানানো হয়- সিলেটের ব্যবসায়ীদের শীর্ষ সংগঠন সিলেট চেম্বার অব কমার্স অ্যান্ড ইন্ডাস্ট্রির পরিচালনা পরিষদের নির্বাচন আগামী ২১শে সেপ্টেম্বর অনুষ্ঠিত হতে যাচ্ছে।
ওইদিন ধোপাদীঘিরপাড়স্থ ইউনাইটেড কমিউনিটি সেন্টারে সকাল ৯ টা থেকে বিকাল ৪ টা পর্যন্ত একটানা ভোটগ্রহণ চলবে এবং ভোট গণনা শেষে নির্বাচনের প্রাথমিক ফলাফল ঘোষণা করা হবে। নির্বাচনে ভোটার সংখ্যা সর্বমোট ২,৪৬৫ জন। যার মধ্যে অর্ডিনারি ১৪১৩ জন, এসোসিয়েট ১০৪০ জন, ট্রেড গ্রুপ ১১ জন ও টাউন এসোসিয়েশন ১ জন। এ বছর পরিচালনা পরিষদের ২২টি পদে সর্বমোট ৪১ জন প্রার্থী প্রতিদ্বন্দ্বিতা করছেন। যার মধ্যে অর্ডিনারি শ্রেণি থেকে ২৪ জন, এসোসিয়েট শ্রেণি থেকে ১০ জন এবং ট্রেড গ্রুপ শ্রেণি থেকে ৬ জন প্রার্থী রয়েছেন। টাউন এসোসিয়েশন শ্রেণিতে কোনো প্রতিদ্বন্দ্বী না থাকায় ওই শ্রেণির একমাত্র প্রার্থী শমশের জামালকে বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতায় প্রাথমিকভাবে নির্বাচিত ঘোষণা করা হয়েছে। নির্বাচনে অর্ডিনারি শ্রেণিতে প্রত্যেক ভোটারকে ১২টি ভোট, এসোসিয়েট শ্রেণিতে প্রত্যেক ভোটারকে ৬টি ভোট এবং ট্রেড গ্রুপ শ্রেণিতে প্রত্যেক ভোটারকে ৩টি ভোট অবশ্যই প্রদান করতে হবে। নির্ধারিত সংখ্যার চাইতে ভোট বেশি বা কম হলে ব্যালট পেপার বাতিল বলে গণ্য হবে। সিলেট চেম্বারের প্রশাসক আসাদ উদ্দিন আহমদ জানিয়েছেন- আসন্ন নির্বাচন সুষ্ঠু ও সুন্দরভাবে আয়োজনে নির্বাচন বোর্ড ও আপিল বোর্ডের চেয়ারম্যান ও সদস্যরা অত্যন্ত পরিশ্রম করে যাচ্ছেন। এজন্য তিনি তাদেরকে আন্তরিক ধন্যবাদ জানান। এদিকে- এবারের নির্বাচনে লড়াইয়ে অবতীর্ণ হওয়া দু’টি প্যানেল আলাদা আলাদা ভাবে ইশতেহার ঘোষণা করেছে। চেম্বারের নির্বাচনকে ঘিরে এভাবে ইশতেহার ঘোষণার নজির এবারই প্রথম বলে জানিয়েছেন ব্যবসায়ীরা। ইশতেহার ঘোষিত হওয়ায় সিলেট চেম্বারের নির্বাচনে আরো বেশি আগ্রহী হয়ে উঠেছেন তারা। সম্মিলিত ব্যবসায়ী পরিষদের নির্বাচনী ইশতেহার কয়েকটি উল্লেখযোগ্য প্রতিশ্রুতি দিয়েছেন।
তারা ব্যবসায়ীদের স্বার্থ সংরক্ষণ করে সিলেটকে ব্যবসার কেন্দ্রবিন্দুতে পরিণত করতে কাজ করবেন বলে ঘোষণা দিয়েছেন। সিলেট চেম্বার অব কমার্স অ্যান্ড ইন্ডাস্ট্রিজের সাবেক সভাপতি ফারুক আহমেদ মিসবাহ এই প্যানেলের ইশতেহার ঘোষণা করেন। সম্মিলিত ব্যবসায়ী পরিষদের সভাপতি ও চেম্বারের সাবেক সিনিয়র সহ-সভাপতি শাহ আলমের সভাপতিত্বে ও মিশফাক আহমদ চৌধুরী মিশুর উপস্থাপনায় অনুষ্ঠানে অতিথি হিসেবে বক্তব্য রাখেন, সিলেট সিটি কর্পোরেশনের মেয়র আরিফুল হক চৌধুরী, জেলা ক্রীড়া সংস্থার সাধারণ সম্পাদক মাহি উদ্দিন আহমদ সেলিম, চেম্বারের সাবেক নির্বাচন কমিশনার বিজিত চৌধুরী, সিলেট ব্যবসায়ী সমিতির সাধারণ সম্পাদক ও চেম্বারের সাবেক সহ-সভাপতি হাজী দেলোয়ার হোসেন, সিলেট জেলা ব্যবসায়ী ঐক্য কল্যাণ পরিষদের সভাপতি শেখ মখন মিয়া, মহানগর ব্যবসায়ী ঐক্য কল্যাণ পরিষদের সভাপতি আবদুুর রহমান রিপন, সিএনজি এসোসিয়েশনের সাবেক সাধারণ সম্পাদক ও চেম্বারের সাবেক পরিচালক আমিরুজ্জামান। ‘সিলেট ব্যবসায়ী পরিষদ’ তাদের ঘোষিত ইশতেহারে সিলেট আধ্যাত্মিক নগরী ও পর্যটন শহর। পর্যটন খাতকে বিশেষ প্রাধান্য দিয়ে ব্যবসায়িক শিল্পনগরী গড়ে তুলতে তাদের প্রচেষ্টা অব্যাহত থাকবে। এমনকি সিলেটের ক্ষুদ্র ব্যবসায়ীদের বিভিন্ন সুযোগ-সুবিধা নিশ্চিত করার চেষ্টা করা হবে বলে জানানো হয়।
ইশতেহার ঘোষণা করেন, চেম্বারের সাবেক সভাপতি সালাহ উদ্দিন আলী আহমদ। স্বাগত বক্তব্য রাখেন- সাবেক সভাপতি বিশিষ্ট ব্যবসায়ী খন্দকার শিপার আহমদ। ইশতেহারে বলা হয়েছে- সিলেটের সার্বিক উন্নয়নের জন্য সড়ক ও বিমানের পাশাপাশি রেল যোগাযোগ আরো উন্নত করতে সরকারের সংশ্লিষ্ট মন্ত্রীদের সঙ্গে আলোচনা করে ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে। ১৬৩ একর জমি নিয়ে গড়ে উঠছে সম্ভানাময় সিলেট হাইটেক পার্ক। বাংলাদেশ এখন নিম্ন-মধ্যম আয়ের দেশে পরিণত হয়েছে। বর্তমান সরকারের লক্ষ্য বাস্তবায়নে ‘সিলেট ব্যবসায়ী পরিষদ’ কাজ করবে। সুধী সমাবেশে বক্তব্য রাখেন- সিলেটের বিশিষ্ট ব্যবসায়ী গোলাম রব্বানী, আবদুুল হান্নান সেলিম, চেম্বারে বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতায় নির্বাচিত টাউন এসোসিয়েশন মেম্বার শমশের জামাল, গোলাম হাদী ছয়ফুল, আবুল হোসেন, আরবাব হোসেন খান প্রমুখ।