× প্রচ্ছদ অনলাইনপ্রথম পাতাশেষের পাতাখেলাবিনোদনএক্সক্লুসিভভারতবিশ্বজমিনবাংলারজমিনদেশ বিদেশশিক্ষাঙ্গনরকমারিমত-মতান্তরবই থেকে নেয়া তথ্য প্রযুক্তি শরীর ও মন চলতে ফিরতে কলকাতা কথকতাসেরা চিঠিইতিহাস থেকেঅর্থনীতি
ঢাকা, ১৯ এপ্রিল ২০২৪, শুক্রবার , ৬ বৈশাখ ১৪৩১ বঙ্গাব্দ, ১০ শওয়াল ১৪৪৫ হিঃ

ঝুড়ি মেপে চলে লেনদেন /খুলনার ক্লাবগুলোতে মাদক ও জুয়া

দেশ বিদেশ

স্টাফ রিপোর্টার, খুলনা থেকে
২১ সেপ্টেম্বর ২০১৯, শনিবার
ফাইল ছবি

খুলনার ক্লাবগুলোতে বছরের পর বছর খোলামেলাভাবে চলছে জুয়া ও মাদকের বাণিজ্য। নগরীর বিভিন্ন অলিগলিতে যখন জুয়ার আখড়া উৎখাত ও মাদক বিক্রেতাদের ধরতে প্রশাসনের নিয়মিত অভিযান চলছে, তার মধ্যেই এই ক্লাবগুলোতে নিরাপদে চলছে এ ব্যবসা। ঢাকার বিভিন্ন ক্লাবে জুয়া ও মাদকের বিরুদ্ধে র‌্যাবের অভিযানের খবরে খুলনার ক্লাবপাড়ায় আতঙ্ক ছড়িয়ে পড়েছে। কখন কোন ক্লাবে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর হানা পড়ে- মূলত এ আতঙ্কে রয়েছে ক্লাবগুলোর পরিচালকরা। ইতিমধ্যেই খুলনার অধিকাংশ ক্লাবে জুয়ার বোর্ড ও মাদকের আড্ডা বন্ধ হয়ে গেছে। গা-ঢাকা দিতে শুরু করেছে জুয়াড়ি ও মাদক ব্যবসায়ীরা। খুলনার ক্লাবপাড়ায় জুয়া ও মাদকের কোনো কারবার চালাতে দেয়া হবে না- বলে কঠোর হুঁশিয়ারি দিয়েছে পুলিশ।

অনুসন্ধানে দেখা গেছে, খুলনার সার্কিট হাউজ মাঠ সংলগ্ন এলাকায় বিভিন্ন ক্লাব অবস্থিত। এর মধ্যে রয়েছে মুক্তিযোদ্ধা সংসদ ক্রীড়া চক্র, মোহামেডান স্পোর্টিং ক্লাব, আবাহনী ক্রীড়া চক্র, ইয়াং বয়েজ ক্লাব, ব্রাদার্স ইউনিয়ন, উইনার্স ক্লাবসহ বেশ কয়েকটি।
তবে এর মধ্যে অধিকাংশ ক্লাবে তাস, হাউজিসহ নানা ধরনের খেলা চলে। খুলনা-সাতক্ষীরা-যশোর-বাগেরহাট থেকে জুয়াড়িরা প্রতিদিন গাড়ি নিয়ে এ সকল ক্লাবে জুয়া খেলতে আসেন বলে স্থানীয় সূত্রে জানা গেছে। এসব ক্লাবগুলোতে জুয়ার আসরের নিয়ন্ত্রণ করছেন শাসকদলের নেতা পরিচয়ের কিছু মানুষ। তাদের সহযোগিতায় থাকেন কিছু পেশাদার জুয়ার বোর্ড পরিচালনাকারী ও মাদক সংশ্লিষ্টরা। এছাড়াও খুলনায় বিশেষ পেশার কিছু সংগঠনের নামে দেদারছে চলে মাদক ও জুয়ার আসর। প্রতিদিনই এসব আসরে নিরাপদে নির্বিঘ্নে প্রবেশ করে বিভিন্ন শ্রেণি-পেশার মানুষ।

অনুসন্ধানে জানা গেছে, নগরীর ৭টি ক্লাবে ক্রীড়া উন্নয়নের নামে বছরের পর বছর ধরে চলে আসছে অবৈধ জুয়ার আসর, সেই সঙ্গে মাদকের ছড়াছড়ি। সারা রাত ধরেই চলে এ আসর। প্রশাসনের চোখের সামনেই এসব অপকর্ম চললেও নেয়া হয় না কোনো ব্যবস্থা।

সূত্র মতে, এর মধ্যে আবাহনী, ব্রাদার্স এবং ইয়ং বয়েজ ক্লাবে সর্বাধিক সংখ্যক জুয়াড়ির আগমন ঘটে। চালানো হয় কাটিং বোর্ড। আড্ডা জমে শীর্ষ সন্ত্রাসী ও মাদক ব্যবসায়ীদের। যে কারণে টাকা গুনতে সময় লাগবে বলে এক ধরনের প্লাস্টিকের ঝুড়িতে করে টাকা পরিমাপ করে লেনদেন চলে। আর অন্য ক্লাবগুলোতে চালানো হয় কাচ্চু, হাইড্রো গেম ও হাউজি। রাতভর এসব ক্লাব থাকে জমজমাট। অনেকেই জুয়ায় আসক্ত হয়ে সব অর্থ খুঁইয়ে সর্বস্বান্ত হয়ে বাড়ি ফেরে। আবার অনেকেই বাড়িঘর ভুলে ডুবে থাকে নেশায়। এসব ক্লাবের সামনে প্রায়ই জুয়াড়িদের স্ত্রী-সন্তানদের অপেক্ষা করতে দেখা যায়। স্বজনদের খোঁজে এলেও তাদের ক্লাবের ভেতর প্রবেশ করতে দেয়া হয় না। কেউ প্রতিবাদ করলে র‌্যাব-পুলিশকে ম্যানেজ করেই তারা জুয়ার বোর্ড চালায় বলে পাল্টা হুমকি দেয় বলেও অভিযোগ রয়েছে।
ক্লাবপাড়ার একাধিক সূত্র জানান, আবাহনী ক্লাবে জুয়ার বোর্ড পরিচালনা করে কালা মনির ও মিজান। ইয়ং বয়েজে জুয়ার বোর্ড পরিচালনা করে আলী ক্লাবের আলী ও সুজন। কয়েক মাস আগে এ ক্লাব এলাকা থেকে পুলিশ তিনশ’ পিস ইয়াবা উদ্ধার করে। ব্রাদার্স ক্লাবের জুয়ার বোর্ড পরিচালনা করে দেলোয়ার, কেরোসিন বাবু, ইশারাত ও বাদল। এছাড়া মুক্তিযোদ্ধা ক্লাব এলাকা থেকেও উদ্ধার করা হয় ৪শ’ পিস ইয়াবা। যদিও এসব ক্লাবের শীর্ষ নেতৃত্বে রয়েছেন খুলনার বিভিন্ন রাজনৈতিক দলের শীর্ষ ও মধ্যমসারির নেতারা। আছেন কেসিসি’র বর্তমান তিন কাউন্সিলর এবং সাবেক দু’জন প্রতিনিধিও।

২০১৭ সালে র‌্যাব-পুলিশের পৃথক দুটি অভিযানে এ সকল ক্লাবে মাদক ও জুয়ার ভয়াবহ চিত্র সকলের নজরে এসেছিল। তবে ক্রীড়া সংশ্লিষ্ট অনেকের দাবি এ বিষয়ে কঠোর ব্যবস্থা ও নিয়ন্ত্রণ জরুরি। তা না হলে এই মাদক ও জুয়ার প্রভাব ক্লাব পাড়া থেকে মাঠে ময়দানে ছড়ানোর আশঙ্কা রয়েই যায়।
খুলনা থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা আসলাম বাহার বুলবুল বলেন, খুলনার ক্লাবপাড়ায় জুয়া ও মাদকের কোনো কারবার চালাতে দেয়া হবে না। ইতিমধ্যেই এসব অপকর্ম বন্ধের জন্য সংশ্লিষ্টদের ম্যাসেজ দেয়া হয়েছে। এরপরও কেউ চালালে কঠোর হস্তে দমন করা হবে বলে হুঁশিয়ারি দিয়েছেন তিনি।

খুলনার জেলা প্রশাসক ও জেলা ক্রীড়া সংস্থার সভাপতি মোহাম্মদ হেলাল হোসেন বলেন, ক্লাবে রাতভর জুয়া ও মাদকের বিষয়টি খেলাধুলার বিরুদ্ধে এক প্রকার হুমকি। এ ব্যাপারে খোঁজ নিয়ে ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে বলেও জানান তিনি।

খুলনা মেট্রোপলিটন পুলিশ (কেএমপি) কমিশনার খন্দকার লুৎফুল কবির পিপিএম বলেন, জুয়া ও মাদকের বিষয়ে কোন আপস নেই। যেখানেই এ ধরনের খবর মিলবে সেখানেই অভিযান চলবে।
উল্লেখ্য, ২০১৭ সালের ৯ই মার্চ খুলনার ইয়াং বয়েজ ক্লাবে র‌্যাবের অভিযানের পর এ চিত্র কিছুটা সামনে আসে। সেদিন বিকেল ৩টার দিকে মাদারীপুরের পাট ব্যবসায়ী মো. সুমন ও আতিয়ার সার্কিট হাউস মাঠের পাশ দিয়ে মোটরসাইকেলযোগে যাচ্ছিলেন। এ সময় ৭-৮ জন সন্ত্রাসী তাদের দু’জনের গতিরোধ করে ডিবি পরিচয়ে ইয়াং বয়েজ ক্লাবের ভেতরে নিয়ে যায়। পরে তাদের কাছে থাকা পাট ক্রয়ের তিন লাখ টাকা ও একটি পালসার মোটরসাইকেল ছিনিয়ে নেয়। এরপর ওই দু’জন ব্যবসায়ীর কাছ থেকে তিনশ’ টাকার ফাঁকা স্ট্যাম্পে স্বাক্ষর নিয়ে ছেড়ে দেয়। বিষয়টি জানতে পেরে র‌্যাব-৬’র অভিযানে ওই ক্লাবে অভিযান চালিয়ে ৬ জনকে গ্রেপ্তারসহ ক্লাব অভ্যন্তরের কক্ষে থেকে বিদেশি মদ ও ইয়াবা ও মাদক সেবনের বিভিন্ন উপকরণ উদ্ধার করা হয়। এ ঘটনায় সদর থানায় মামলা দায়ের করা হয়।

একই বছরের ২৫শে জুলাই সদর থানা পুলিশ খুলনার মুক্তিযোদ্ধা সংসদ ক্রীড়াচক্রে অভিযান চালায়। এ সময় ২২৫ পিস ইয়াবাসহ রবিউল ইসলাম ওরফে মাখন (২৪) নামের এক মাদক বিক্রেতাকে গ্রেপ্তার করা হয়। সঙ্গে সঙ্গে এছাড়া ইয়াবা বিক্রির ২২ হাজার ৮৯০ টাকা জব্দ করা হয়। গত ২৫শে জুলাই এ ঘটনায় সদর থানায় মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ আইনে মামলা দায়ের করেছে পুলিশ। সে ৯নং আলতাপোল লেনের বাসিন্দা আজিজুর রহমান ওরফে আলতাপ হোসেনের ছেলে।
অবশ্যই দিতে হবে *
অবশ্যই দিতে হবে *
অন্যান্য খবর