পটুয়াখালীর বাউফল উপজেলার আদাবাড়িয়া ফাতেমা জোহরা বালিকা দাখিল মাদ্রাসার সহকারী মৌলভী আব্বাস আলীর বিরুদ্ধে জাল-জালিয়াতি ও মিথ্যা তথ্য দিয়ে সরকারি টাকা আত্মসাতের অভিযোগ পাওয়া গেছে। বাংলাদেশ দুর্নীতি দমন কমিশন দুদকের চেয়ারম্যান বরাবরে লিখিত অভিযোগ সূত্রে জানা গেছে, আদাবাড়িয়া ফাতেমা জোহরা বালিকা দাখিল মাদ্রাসার সহকারী মৌলভী আব্বাস আলী বিগত ১৯৮৮ সালের ১লা মার্চ আদাবাড়িয়া ফাতেমা জোহরা বালিকা দাখিল মাদ্রাসায় যোগদান করে ১ হাজার টাকার স্কেলে সহকারী মৌলভী পদে এমপিওভুক্ত হন এবং বর্তমানে সহকারী মৌলভী পদে কর্মরত আছেন। ওই মাদ্রাসার সদ্য অবসরপ্রাপ্ত সুপার মাওলানা শের আলী তার আপন বড় ভাই। তিনি (সুপার) জাল-জালিয়াতি ও মিথ্যা তথ্য দ্বারা শিক্ষা ভবনের কর্মকর্তাদের ম্যানেজ করে সহকারী মৌলভী আব্বাস আলী যে গ্রেডে বেতন পাওয়ার সরকারী নিয়ম তা উপেক্ষা করে গ্রেড পরিবর্তন করে বাড়তি স্কেলে আব্বাস আলী বেতন উত্তোলন করে সরকারি লাখ লাখ টাকা আত্মাসাৎ করে আসছেন। পরে গত ২০১১ সালের ১৯শে ফেব্রুয়ারি ওই মাদ্রাসায় পরিদর্শন ও নিরীক্ষা অধিদপ্তর থেকে অডিট করা হয়। অডিট করে পরিদর্শন ও নিরীক্ষা অধিদপ্তরের সহকারী শিক্ষা পরিদর্শক মো. নেয়ামত উল্লাহ ও প্রফেসর মো. ইকরামুল হক। তারা ৩১.০৫.২০১১ তারিখ অডিট প্রতিবেদন মন্ত্রণালয়ে প্রেরণ করেন। উক্ত অডিট প্রতিবেদনের ৩য় পাতায় (ড) নং ক্রমিক শিক্ষক সহকারী মৌলভী আব্বাস আলী বিষয়ে যে মতামত দিয়েছেন, সহকারী মৌলভী আব্বাস আলী নিজেকে সহকারী সুপার পদ দাবি করেন, কিন্তু তার নিয়োগকালে শিক্ষাগত যোগ্যতা কামিল ডিগ্রি ছিল না।
তিনি ১৯৯৭ সালে কামিল ডিগ্রি অর্জন করেন। তাকে সহকারী সুপার পদে পদায়ন না করায় তিনি সহকারী মৌলভী হিসেবে কর্মরত থাকবেন। আব্বাস আলী সহকারী মৌলভী পদে কর্মরত থেকে মিথ্যা তথ্যাদির মাধ্যমে তার প্রাপ্য বেতন ভাতার চেয়ে ৩১.১২.২০১০ তারিখ পর্যন্ত অডিট সূত্রমতে অতিরিক্ত সরকারি ১ লাখ ৬২ হাজার ৬৭৮ টাকা রাষ্ট্রীয় কোষাগারে ফেরত দেয়ার বলা সত্ত্বেও অদ্যাবধি এ টাকা ফেরত না দিয়ে সরকারি টাকা আত্মসাৎ করেন। বর্তমানেও আগের ন্যায় অতিরিক্ত টাকা উত্তোলন করে সরকারি টাকা আত্মসাৎ করে আসছেন সহকারী মৌলভী আব্বাস আলী। এ অবস্থায় সহকারী মৌলভী আব্বাস আলী নিজে তথ্য গোপন করে গত ২৫.০৮.২০১৯ তারিখ মাদ্রাসা শিক্ষা অধিদপ্তরে নিজেকে সহকারী সুপার পদ দাবি করে একটি আবেদন করেন। এ মিথ্যা আবেদনের পরিপ্রেক্ষিতে গত ২৭.৮.১৯ তারিখ মাদ্রাসা শিক্ষা অধিদপ্তরের সহকারী পরিচালক (অডিট ও আইন) মোহাম্মদ হেলাল উদ্দিন স্বাক্ষরিত পত্রে (স্মারক নং-৫৭.২৫.০০০০.০০৫.০৪.০৫২.১৮-২৫৪) উক্ত আব্বাস আলীকে এ মাদ্রাসার ভারপ্রাপ্ত সুপার দায়িত্ব দেয়ার জন্য নির্দেশনা দিয়েছেন। মাদ্রাসা শিক্ষা অধিদপ্তরের সহকারী পরিচালক (অডিট ও আইন) মোহাম্মদ হেলাল উদ্দিনের আদেশের আগেই ২৭.০৩.২০১৯ তারিখ এ মাদ্রাসার ম্যানেজিং কমিটির সভাপতি আমির হোসেন মৃধার সভাপতিত্বে সভা করে সর্বসম্মতিক্রমে রেজুলেশন সহকারে এ মাদ্রাসার সামাজিক বিজ্ঞানের সিনিয়র শিক্ষক মো. আবদুল মন্নানকে ভারপ্রাপ্ত সুপারের দায়িত্ব দেয়া হয়। মাদ্রাসা শিক্ষা অধিদপ্তরের সহকারী পরিচালক (অডিট ও আইন) মোহাম্মদ হেলাল উদ্দিনের আদেশ স্থগিত চেয়ে ভারপ্রাপ্ত সুপার আবদুল মন্নান ০৯.০৯.১৯ তারিখ হাইকোর্টে রিট দাখিল করেন। হাইকোর্ট রিট আমলে নিয়ে ১৬.০৯.১৯ তারিখ মাদ্রাসা শিক্ষা অধিদপ্তরের সহকারী পরিচালক (অডিট ও আইন) মোহাম্মদ হেলাল উদ্দিনের আদেশ কেন অবৈধ ঘোষণা করা হবে না মর্মে রুল জারি করেন। এ ব্যাপারে আব্বাস আলীর ব্যবহৃত মোবাইল ফোনে যোগাযোগ করা হলে তার স্ত্রী হোসনে আরা বেগম জানান, আপনার সঙ্গে এ বিষয়ে পরে কথা বলবো। এ ব্যাপারে বাউফল উপজেলা নির্বাহী অফিসার পীযূষ চন্দ্র দে জানান, বিষয়টি আমার জানা আছে। এ ব্যাপারে প্রয়োজনীয় আইনানুগ ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।