বন্ধ হয়ে গেছে যশোর সড়কের অবৈধ চাঁদাবাজি। রাস্তাই দেখা মিলছে না চাঁদাবাজদের। প্রকাশ্যে বাঁশি ফুঁকিয়ে যারা জবরদস্তি করে যানবাহন থেকে অবৈধ পন্থায় চাঁদা আদায় করতো সেই চক্রটি রাতারাতি হাওয়া হয়ে গেছে। যার ফলে রাস্তায় যানজট কমেছে। স্বস্তি বিরাজ করছে চালক ও পরিবহন মালিকদের মনে। স্বস্তি দেখা দিয়েছে যাত্রী সাধারণের মনেও। যশোরকে বলা হয় দক্ষিণ-পশ্চিমাঞ্চলের গেটওয়ে। যশোর জেলার ওপর দিয়ে দেশের দক্ষিণ-পশ্চিমাঞ্চলের ১৮টি রুটের হাজার হাজার যানবাহন চলাচল করে।
দেশের বৃহত্তম স্থলবন্দর বেনাপোল, ভোমরা স্থলবন্দর ও মোংলা পোর্টের যাবতীয় পণ্যবাহী ট্রাক ও এ অঞ্চলের সকল রুটের যাত্রীবাহী যানবাহনগুলো যশোর শহরের ওপর দিয়ে রাজধানী ঢাকাসহ দেশের অন্যান্য জেলা শহরে চলাচল করে। এই সুযোগকে কাজে লাগিয়ে যশোর শহরের ৮টি প্রবেশমুখে বসানো হয় অবৈধ টোল প্লাজা। বিভিন্ন মোটর শ্রমিক ইউনিয়নের নামে যশোর পৌরসভার মেয়র যুবলীগ নেতা জহুরুল ইসলাম চাকলাদার রেন্টুর অনুসারীরা এসব টোল প্লাজা পরিচালনা করতেন। এর বাইরে শহরের বিভিন্ন পয়েন্টে ইজিবাইক, নসিমন, করিমন ও থ্রি হুইলার থেকে অবৈধ চাঁদাবাজির জন্য গড়ে ওঠে আলাদা সিন্ডিকেট। নাম প্রকাশ না করার শর্তে জেলা আওয়ামী লীগের একজন প্রভাবশালী নেতা বলেন, জেলা যুবলীগের সাধারণ সম্পাদক পৌর মেয়র জহিরুল ইসলাম রেন্টু চাকলাদারের অনুসারীরা এসব সিন্ডিকেটের মাধ্যমে প্রতি মাসে এসব টোল প্লাজার মাধ্যমে প্রায় ১ কোটি টাকার ওপরে চাঁদা আদায় করতো। যার একটা বড় অংশ যেত পৌর মেয়র ও তার লোকজনের পকেটে। খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, গত ১০ বছর ধরে যশোর শহরের প্রবেশদ্বার রাজারহাট, মুড়লী, চাঁচড়া, ধর্মতলা, পালবাড়ি, খয়েরতলা, নিউমার্কেট, কিসমত নওয়াপাড়া, শেখহাটি হাইকোর্ট মোড়, শানতলা, চূড়ামনকাঠী, মণিহার বাসস্ট্যান্ড ও নড়াইল বাসস্ট্যান্ড এলাকায় অবৈধ টোল প্লাজা বসিয়ে প্রকাশ্যে চলছিল চাঁদাবাজি। এসব রুট ব্যবহারকারী প্রতিটি ট্রাক থেকে ২শ’ টাকা, বাস থেকে ২শ’ টাকা, নসিমন থেকে ২০ টাকা, করিমন থেকে ৩০ টাকা, থ্রি হুইলার থেকে ৩০ টাকা ও ইজিবাইক, ইঞ্জিন রিকশা থেকে ১০ টাকা হারে চাঁদা আদায় করতো দলের ক্যাডাররা। প্রতিবাদ করায় এসব ক্যাডারদের হাতে হত্যা, নির্যাতনের শিকার হয়েছেন অনেকেই। বিষয়টি নিয়ে বহুবার থানা পুলিশ হলেও কাজের কাজ হয়নি কিছুই। সম্প্রতি রাজধানী ঢাকায় চাঁদাবাজ যুবলীগ ও ছাত্রলীগ নেতাদের বিরুদ্ধে অভিযান পরিচালনার পর পরই যশোরের রাস্তায় দাপিয়ে বেড়ানো এসব সন্ত্রাসী চাঁদাবাজরা গা ঢাকা দিয়েছে। বন্ধ করে দেয়া হয়েছে টোল প্লাজাগুলো। গতকাল শহরের বিভিন্ন পয়েন্টে ঘুরে দেখা গেছে- এসব টোলপ্লাজা খাঁ খাঁ করছে। কোনটির দরজা তালাবন্ধ। কোনটি খোলা। কিন্তু লোকজন নেই কোনোখানেই। খোঁজখবর নিতেই প্রদীপ নামের একজন মোটর শ্রমিক বললেন, সবাই পালিয়েছে। ঢাকায় ধড়পাকড় শুরু হওয়ায় কথিত এসব শ্রমিক নেতারা লাপাত্তা। এখন আর রাস্তায় গাড়ি থামিয়ে চাঁদা নিতে কেউ আসছে না। ফলে নির্বিঘ্নে আমরা গাড়ি চালাতে পারছি। এ বিষয়ে কথা হয় একজন যুবলীগ নেতার সঙ্গে। নাম প্রকাশ না করার শর্তে তিনি বলেন, এই চাঁদা বা টোল যাই বলেন তা তোলা ছিল অবৈধ। এ নিয়ে সাধারণ মানুষের মধ্যে দীর্ঘদিন ধরে ব্যাপক ক্ষোভের জন্ম হয়। বিষয়টি প্রশাসনিক ভাবে বন্ধ করার উদ্যোগ নেয়া হলেও রাজনৈতিক হস্তক্ষেপে তা করা সম্ভব হয়নি। বর্তমানে অবস্থা বেগতিক দেখে সবাই সটকে পড়েছে। এদিকে এই অবৈধ চাঁদাবাজি বিষয়ে যশোর জেলা যুবলীগের সাধারণ সম্পাদক ও পৌর মেয়র জহিরুল ইসলাম চাকলাদার রেন্টুর সঙ্গে যোগাযোগ করা হলেও এ বিষয়ে তার কোনো বক্তব্য পাওয়া সম্ভব হয়নি। তিনি ব্যস্ত আছেন বলে ফোনটি কেটে দেন। পরে বহুবার তার সঙ্গে যোগাযোগ করার চেষ্টা করলেও মুঠো ফোনে তাকে সংযোগ করানো সম্ভব হয়নি। যোগাযোগ করা হলে পুলিশের খুলনা রেঞ্জ ডিআইজি ড. খন্দকার মোহিদ জানান, অবৈধ কোনো কাজ কাউকে করতে দেয়া হবে না। যশোর শহরের বিভিন্ন পয়েন্টে যে বেআইনি চাঁদাবাজি চলছিল তা বন্ধ করে দেয়া হয়েছে। এই চাঁদাবাজিকে কেন্দ্র করে আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতির অবনতি ঘটছিল। সড়কে চাঁদাবাজি করার কোনো সুযোগ কাউকে দেয়া হবে না।