× প্রচ্ছদ অনলাইনপ্রথম পাতাশেষের পাতাখেলাবিনোদনএক্সক্লুসিভভারতবিশ্বজমিনবাংলারজমিনদেশ বিদেশশিক্ষাঙ্গনরকমারিমত-মতান্তরবই থেকে নেয়া তথ্য প্রযুক্তি শরীর ও মন চলতে ফিরতে কলকাতা কথকতাসেরা চিঠিইতিহাস থেকেঅর্থনীতি
ঢাকা, ২৩ এপ্রিল ২০২৪, মঙ্গলবার , ১০ বৈশাখ ১৪৩১ বঙ্গাব্দ, ১৪ শওয়াল ১৪৪৫ হিঃ

খালেদের সেই টর্চারসেল

প্রথম পাতা

মরিয়ম চম্পা
২২ সেপ্টেম্বর ২০১৯, রবিবার

কমলাপুর রেলস্টেশনের উল্টো দিকে ইস্টার্ন কমলাপুর টাওয়ার। ১৮ তলা এই ভবনটির সামনে এখনো ঝুলছে যুবলীগ নেতা খালেদ মাহমুদ ভূঁইয়ার পোস্টার। ৬৪/৬৮ ইস্টার্ন কমলাপুর কমার্শিয়াল কমপ্লেক্সের পঞ্চম তলার ৪০২ নম্বর কক্ষে খালেদ গড়ে তুলেছিলেন ‘নির্যাতন কেন্দ্র’। ভবনটির পাঁচতলা পর্যন্ত কমার্শিয়াল কমপ্লেক্স। বাকি ১৩ তলায় ফ্ল্যাট বাসা। ভবনে থমথমে পরিবেশ। বাসিন্দারা অপরিচিত কাউকে দেখলেই ভিন্ন দৃৃষ্টিতে তাকিয়ে থাকে। পঞ্চম তলায় গিয়ে দেখা যায় সুনসান নীরবতা।
ভবনের দেয়ালে দেয়ালে শোভা পাচ্ছে রং-বেরংয়ের কাগজে শুভ জন্মদিন ভাই। মাঝখানে খালেদের ছবি। সিড়ির বাম পাশে রিসিপশনে ভূইয়া এন্ড ভূইয়া ডেভেলপমেন্ট লিমিটেড। পাশেই ৪০২ নং কক্ষ। যেটা খালেদের ‘নির্যাতন কেন্দ্র’ নামে পরিচিত। কক্ষটিতে এখন তালা ঝুলছে।

ইস্টার্ন হাউজিং গ্রুপের এই ভবনের কেয়ারটেকার বলেন, ছয়মাস ধরে এই ভবনে চাকরি করছি। তারা বড় নেতা। তাদের বিষয় আলাদা। তারা যখন আসে তখন আমি বেরিয়ে যাই। বেরিয়ে যাওয়ার পরে প্রবেশ করি। নেতার সঙ্গে প্রায় শতাধিক লোকজন আসতো। মাসে সর্বোচ্চ এক থেকে দুইবার যাই সার্ভিস চার্জ ও বিদ্যুৎ বিল আনতে। তাদের অফিস কক্ষের ভেতরে কি হচ্ছে সেটা বলতে পারবো না। ওই কক্ষের সঙ্গে বাহিরের জগতের কোনো যোগাযোগ নেই বললেই চলে। কারণ নেতা আসলে তখন তার লোকজনদের ভয়ে অফিস বন্ধ করে বেরিয়ে যেতাম। তারা আমার অফিস কক্ষে এসে বিড়ি খায়। ঝামেলা করে। যুবলীগের এই নেতাকে সিসি ক্যামেরায় দেখা মাত্রই অফিস বন্ধ করে নিচে চলে যাই। তারা চলে গেলে আবার উপরে আসি। উনি এতো বড় মানুষ। তার কাছে কি আমরা যেতে পারি। এই ঘটনার পরে আমাদের ভবনের সুনাম নষ্ট হয়েছে। র‌্যাবের অভিযানের সময় আমি ভেতরে গিয়েছিলাম। যে সকল সরঞ্জামাদি কক্ষের ভেতরে দেখেছি সেগুলো আমি আগে কখনোই দেখিনি। এগুলো দেখে অনেকটা ভরকে গিয়েছিলাম।       
     
ভবনের পরিচ্ছন্নতা কর্মী বলেন, স্যার যে এমন এইটা আমরা জানতাম না। তিনি যখন গাড়ি থেকে নামতেন তখন মাথা নিচু করে নামতেন। আবার লিফটে উঠতেন মাথা নিচু করে। কারো দিকে তাকাতেন না। কারো সঙ্গে কথাও বলতেন না। একদিন আমাকে ডেকে একদম কর্নারের অফিস কক্ষ ঝাড়া মোছা করতে বলেন। রুমটি ছিল সম্পূর্ণ খালি। একপাশে ছিল ছোট্ট একটি খাট। তবে পাশের কক্ষে আমরা কখনো প্রবেশ করিনি। ওই কক্ষগুলো আমাদের দিয়ে পরিষ্কার করাতো না। ওই রুমের ভেতর কি আছে সেটাও আমরা জানি না। উনারা যখন আসতেন তখন রুমটি খোলা হতো। তাছাড়া সবসময় রুমটি তালাবন্ধ থাকে।       

ভবনের চতুর্থ তলার একটি ম্যানপাওয়ার অফিসের কর্মচারি বলেন, একমাস আগে আমি এখানে চাকরিতে যোগদান করি। ভবনের সামনে পোস্টারে আমি তাকে প্রথম দেখি। তিনি চেনাজানা লোক ছাড়া কারো সঙ্গে কথা বলেন না। আমি একদিন অনেক প্রত্যাশা নিয়ে দাড়িয়ে ছিলাম তাকে দেখবো। এসময় ভাইয়ের লোকেরা এসে আমাকে বলেন, আপনাকে কি খালেদ সাহেব চিনেন? তখন আমি ভয় পেয়ে যাই। রীতিমত কাঁপতে থাকি। এসময় আমি বলি, জ্বি না। তখন ভাইয়ের লোকেরা বলেন, ‘তাহলে আপনি দাড়িয়ে আছেন কেনো। বেরিয়ে যান’। একটি কঠিন অবস্থা ছিল। আমি বললাম ভাইকে একটু দেখার জন্য দাড়িয়েছি। উনি যখন ভবনে আসেন তখন নিচে তার বডিগার্ড ছাড়া আর কোনো লোক থাকে না। পুরো রাস্তা তাকে ছেড়ে দিতে হয়। উপরেও একই অবস্থা। আবার যাওয়ার সময়ও একই অবস্থা। ভয়ে কেউ সামনে আসতে চায় না। উনি না যাওয়া পর্যন্ত আমরা কেউ উঠা নামা করি না। তবে রুমের ভেতর কখন কি হতো আমরা জানি না।

ভূইয়া এন্ড ভূইয়া ডেভেলপমেন্ট লিমিটেড এর সামনে হীরক রাজা নামে ই-কমার্সের এর কর্মচারী বলেন, গত ছয়মাস ধরে আমি এখানে কাজ করছি। এই অফিসটিকে যে টর্চার সেল হিসেবে ব্যবহার করতো সেটা আমাদের জানা ছিল না। কখনো ওই অফিসে যাওয়া হয় নি। নেতা না আসলে অফিস সবসময় বন্ধ থাকে। খুব নিরিবিলি পরিবেশ। ঘটনার দিন বাসায় গিয়ে টেলিভিশনে খবর দেখে জানতে পারি এটা টর্চার সেল। সামনাসামনি অফিস হলেও ভেতরে কি হচ্ছে সেটা আমরা কিভাবে জানবো। ভেতরে তারা কি কাজ করতো সেটা আমরা জানি না।   

ভবনের সিকিউরিটি গার্ড বলেন, ছয় থেকে সাত বছর ধরে এখানে চাকরি করছি। এই ঘটনার আগে আমরা কিছু জানতাম না। স্যার আসলে আমরা চুপচাপ দাড়িয়ে থাকতাম। আমাদের সঙ্গে স্যার খুবই সুলভ আচরণ করতেন। ভবনের লিফটম্যান বলেন, পাঁচ থেকে ছয় মাস ধরে এখানে চাকরি করছি। আমার কাজ হচ্ছে লিফট অপারেট করা। স্যার আসলে আমি লিফটে পঞ্চমতলায় নামিয়ে দিয়ে আসতাম। ওনার অফিসের ভেতরে প্রবেশ করা নিষেধ। কাজেই অফিসের ভেতরে কি হচ্ছে না হচ্ছে সেটা আমরা জানি না। ঘটনার দিন র‌্যাবের সদস্যরা এসে রেড দেয়ার পর আমাদের জানায় আপনাদের ভবনের একটি অফিসে অনেকগুলো লাঠি, ইলেকট্রিক শকসার্কিট যন্ত্র, তিনটি মোবাইল ফোনসহ আরো অনেক কিছু পাওয়া গেছে। স্যারের সঙ্গে আমাদের খুব কম কথা হতো। ঘটনার আগ পর্যন্ত আমরা এসব কিছুই জানতাম না। এটা জানার পরে একটু অবিশ্বাস্য মনে হয়েছে। তার বেলায় এমন কিছু হতে পারে। বাহির থেকে দেখে মনেই হতো না। ভবনের সামনে এক চায়ের দোকানি বলেন, আমরা দিন এনে দিন খাওয়া মানুষ। কি বলবো, কে শুনে ফেলবে। পরে আমাদের উপর বিপদ হবে। কিছু জানিনা তাই ভালো।      
অবশ্যই দিতে হবে *
অবশ্যই দিতে হবে *
অন্যান্য খবর