রাত-বিরাতে, কাক ডাক ভোরে ঘর থেকে বের হয়ে যান তারা। উদ্দেশ্য একটাই পরিস্কার-পরিচ্ছন্নতা। এই নগরকে ক্লিন রাখার দায়িত্বে তারা। ক্লান্তিহীন শ্রমে সেই কাজটাই করেন। রাতের গতি দানব বা বেপরোয়া গাড়ির ধাক্কায় জীবনও দিতে হয়েছে অনেককে। তবুও ক্লিন ঢাকা গড়তে তারা দায়িত্বশীল। তারা বদলে দেন সড়ক, ফুটপাত, অলি-গলি। কিন্তু নিজের জীবন বদলে না তাদের।
মানবেতর জীবন যাপন করছেন ঢাকার দুই সিটি করপোরেশনের পরিচ্ছন্নতাকর্মীরা।
ঢাকার দুই সিটি করপোরেশনের অধীনে কর্মরত প্রায় সাড়ে সাত হাজার পরিচ্ছন্নতাকর্মী। এরমধ্যে চার হাজার পরিচ্ছন্নতাকর্মী সম্পূর্ণ অস্থায়ীভিত্তিতে কাজ করছেন। তাদের মাসিক বেতন নির্ধারিত ১৪,৩০০ (চৌদ্দ হাজার তিন শত) টাকা মাত্র। কর্মীরা জানান, নেই কোনো ইনক্রিমেন্ট, বোনাস, উৎসবভাতা বা ন্যূনতম চিকিৎসাভাতাও দেয়া হয় না। যার ফলে এই সামান্য বেতন দিয়ে এই দুর্মূল্যের বাজারে পরিবার-পরিজন নিয়ে মানবেতর জীবনযাপন করতে হচ্ছে তাদের।
নুন আনতে পান্তা ফুরায় অবস্থা তাদের। সন্তানদের লেখাপড়া, বাসা ভাড়া, খাবারের ব্যয় জুটাতে ওই চাকরির বেতনের উপরই নির্ভর থাকতে হয়।
মেয়র আসেন, মেয়র যান। সবাই আশ্বাস দেন কিন্তু তাদের চাকরি স্থায়ী করা হয় না। রাজধানীর বাইরে অন্যান্য সিটি করপোরেশনের পরিচ্ছন্নতাকর্মীরা তাদের তুলনায় অনেক ভালো অবস্থায় রয়েছেন। অথচ রাজধানীর হয়েও আমরা ঢাকার পরিচ্ছন্নতাকর্মীর নায্য অধিকার থেকে বঞ্চিত হচ্ছেন বলে মনে করেন তারা। ঢাকা সিটি করপোরেশন বিভক্ত হওয়ার পর ঢাকা উত্তর সিটি করপোরেশনের ২৭৪২ জন পরিচ্ছন্নতাকর্মী রয়েছেন। তার মধ্যে চাকরির বয়সসীমা ৫৯ বছর করে প্রায় ৩০০ জন পরিচ্ছন্নতাকর্মীকে বাদ দেয়া হয়েছে। এই পরিবারগুলো দৈনন্দিন সাংসারিক ব্যয় মেটাতে গিয়ে অনেকে ভিক্ষা পর্যন্ত করছেন।
দীর্ঘদিন ধরে আমরা অস্থায়ীভিত্তিতে কাজ করলেও আজ অবধি তাদের চাকরি স্থায়ীকরণ করা হয়নি। তাদের মধ্যে অনেকে ৩১ বছর ধরে অস্থায়ীভিত্তিতে কর্মরত রয়েছেন। চাকরি স্থায়ীকরণের জন্য অনেক আবেদন-নিবেদন করেও এ দাবি পূরণ হয়নি। চাকরি স্থায়ী করণের পাশাপাশি প্রধানমন্ত্রীর কাছে চাকরির বয়সসীমা ৫৯ বছর আইন বাতিল করার দাবি জানিয়েছেন পরিস্কার-পরিচ্ছন্নতাকর্মীরা