ক্রসফায়ারের হুমকি দিয়ে বাড়ির কাজ বন্ধ রাখার অভিযোগ উঠেছে ঢাকা মেট্রোপলিটন পুলিশের পল্লবী জোনের সিনিয়র সহকারী পুলিশ কমিশনার এসএম শামীম-এর বিরুদ্ধে । শুধু তাই নয় ৯০ লাখ টাকার বিনিময়ে দুই পক্ষের বিবাদ মীমাংসা করে দেয়ার প্রস্তাবও দেন তিনি। বাড়ির মালিকরা তার কথা অনুযায়ী কাজ না করায় বাড়ির কাজ বন্ধ করে দিয়েছেন এই কর্মকর্তা। ফলে আড়াই মাস ধরে বাড়ির কাজ বন্ধ ছিল বলে জানা যায়।
খোঁজ নিয়ে জানা যায়, রাজধানীর ভাষানটেক এলাকায় ৩১ জনের যৌথ মালিকানার একটি প্লটের নির্মাণ কাজ চলছিল। এই কাজ বন্ধ করতে কয়েকজন মালিকের বিরুদ্ধেও মিথ্যা মামলা দেয়া হয়েছে। স্থানীয় একটি চক্রের যোগসাজশে এ কাজ করেছেন এই কর্মকর্তা। যদিও বিষয়টিতে তিনি ষড়যন্ত্রের গন্ধ দেখছেন।
বিষয়টি নিয়ে ভুক্তভোগীদের পক্ষ থেকে পুলিশ সদর দপ্তর ও ঢাকা মেট্রোপলিটন পুলিশ কমিশনারের কাছে লিখিত অভিযোগ দেয়া হয়েছে। ইতিমধ্যে ডিএমপি কমিশনার বিষয়টি আমলে নিয়ে তদন্ত করার নির্দেশ দিয়েছেন।
পুলিশের মিরপুর বিভাগের অতিরিক্ত উপ-কমিশনার শাহেন শাহ তদন্ত কাজ শুরু করেছেন। গত বৃহস্পতিবার তিনি বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন এই প্রতিবেদককে। এদিকে আরো একটি অভিযোগ উঠে ওই পুলিশ কর্মকর্তার বিরুদ্ধে। জানা যায়, অভিযোগকারীসহ অন্যদের ডেকে নিয়ে অভিযোগ তুলে নিতে চাপও দিচ্ছেন তিনি। মীমাংসার জন্য চেষ্টা করছেন। তবে অভিযোগকারী জানান, মিরপুরের ডিসির অনুমতি নিয়ে গত বুধবার থেকে বাড়ির কাজ শুরু করেছেন তারা। এই বিষয়ে তিনি আর কথা বলতে রাজি হননি।
পুলিশ সদর দপ্তরে (স্মারক নং-১০৫৬) দেয়া অভিযোগ থেকে জানা যায়, ভাষানটেক থানার টোনারটেক মসজিদের পাশে ৫৮৫-সি নম্বর প্লটে একটি ভবনের নির্মাণকাজ চলছিল। ২০১৪ সালের ১১ই সেপ্টেম্বর যৌথভাবে ওই জমি কেনেন ৩১ জন। গত বছরের ১৬ই জুলাই তারা নির্মাণকাজ শুরু করেন। এ বছরের ১৮ই এপ্রিল হঠাৎ পল্লবী জোনের সিনিয়র সহকারী পুলিশ কমিশনার এসএম শামীম বাড়ির মালিকদের কাছে একটি চিঠি স্মারক নং-২১৯(২)এসি (পল্লবী জোন) পাঠান। ওই চিঠিতে তিনি বলেন, জহিরুল ইসলাম নামে এক ব্যক্তি জমির মালিক পরিচয় দিয়ে অভিযোগ করেছেন। এজন্য বিষয়টি নিষ্পত্তির জন্য বাদী ও বিবাদীদের কাগজপত্র নিয়ে ২২শে এপ্রিল হাজির হতে বলেন এসএম শামীম। তবে এ চিঠি ইস্যুর একদিন পরই নির্মাণকাজ বন্ধ করে দেন এসি শামীম।
জমির ৩১ মালিকের একজন নটরডেম কলেজের বাংলা বিভাগের প্রভাষক শহীদুল হাসান পাঠান। সবার পক্ষে তিনি পুলিশ সদর দপ্তরে করা আবেদনে বলেন, বাড়ির কাজ বন্ধ না করলে ওই পুলিশ কর্মকর্তা তাদের ক্রসফায়ারে দেয়ার হুমকিও দেন। এ সময় তারা রাজউকের অনুমোদিত নকশা নিয়ে দায়িত্বপ্রাপ্ত ভূমি কমিশনারের সঙ্গে যোগাযোগ করেন। ভূমি কমিশনার জমিতে কোনো সমস্যা নেই বলে জানান। পরে আবারও তারা কাজ শুরু করতে গেলে পুলিশ কর্মকর্তা শামীম ক্ষিপ্ত হন। গত ১৪ই জুন তাদের ৭ জনের বিরুদ্ধে একটি অভিযোগ (নং-৪৯৮) করা হয়। ওই অভিযোগে বলা হয়, গত ২৭শে জুলাই পল্লবীর ৯৫ নম্বর ওয়ার্ডের আওয়ামী লীগ সভাপতি হাফিজুর রহমান সরদার, এসএম সাদিকুরসহ ৩০-৩৫ জন তাদের সাইনবোর্ড ফেলে দিয়ে নতুন সাইনবোর্ড লাগিয়ে দেন। বাড়ির কাজ করলে মেরে ফেলা হবে বলে হুমকি দেন তারা। মিথ্যা মামলা দিয়ে জেলহাজতে পাঠানোরও হমকি দেয়া হয়। ওই দিনই মালিকদের কয়েকজন বিষয়টি এসি শামীমকে জানালে তিনি হাফিজুর রহমানের সঙ্গে টাকা-পয়সা দিয়ে মীমাংসা করতে বলেন। তা না হলে তাদের বিরুদ্ধে মামলা দেয়া হবে বলে হুমকি দেন। বিষয়টি ওই কর্মকর্তাকে জানালে তিনি বলেন, আপনারা মালিকরা প্রত্যেকে ৩ লাখ টাকা করে ৯০ লাখ টাকা হাফিজকে দিয়ে দেন। এতে রাজি না হওয়ায় পরদিনই মোস্তাফিজুর রহমান নামে স্থানীয় এক ব্যক্তিকে দিয়ে মালিকদের মধ্যে ৫ জনের নামে একটি মামলা করানো হয়। অভিযোগে বলা হয়, পুলিশ কর্মকর্তা শামীম এবং স্থানীয় কাউন্সিলর ও ওয়ার্ড আওয়ামী লীগের সভাপতি হাফিজের মধ্যে ঘনিষ্ঠতা রয়েছে। এসি শামীম নিজেই হাফিজের মাধ্যমে জহিরকে দিয়ে মিথ্যা অভিযোগ দিয়ে কাজ বন্ধ করে রেখেছেন।
পল্লবী জোনের সিনিয়র সহকারী পুলিশ কর্মকর্তা এসএম শামীম বলেন, এটা পুরোপুরি মিথ্যা। বাদী অন্য কারো প্ররোচনায় আমার বিরুদ্ধে অভিযোগ করেছে। তিনি বলেন অভিযোগকারীকে আমি জিজ্ঞেস করেছি আমি আপনাকে ক্রসফায়ারে দেয়ার হুমকি দিয়েছি কিনা। ওই সময় অভিযোগকারী বিষয়টি অস্বীকার করেছেন। তা ছাড়া অভিযোগকারী অভিযোগটি তুলে ফেলেছেন, আমার সঙ্গে তাদের কথা হয়েছে। আমি চারবার শ্রেষ্ঠ এসি পদক পেয়েছি। আমি এ কাজ করবো কেন?
অভিযোগটির তদন্তকারী পুলিশ কর্মকর্তা উপ-কমিশনার শাহেন শাহ বিষয়টি স্বীকার করে বলেন বিষয়টি তদন্তাধীন আছে। প্রমাণ পাওয়া গেলে অবশ্যই ব্যবস্থা নেয়া হবে।