পার্লামেন্টে তীব্র বিরোধিতার মুখে বার্ষিক বক্তব্য স্থগিত করতে বাধ্য হলেন হংকংয়ের নেতা ও প্রধান নির্বাহী ক্যারি লাম। আজ বুধবার লেজিসলেটিভ কাউন্সিল হিসেবে পরিচিত সেখানকার পার্লামেন্টে তিনি এর সদস্যদের তীব্র বিরোধিতার মুখে পড়েন। বিরোধী দলীয় সদস্যরা ব্যাপক হট্টগোল সৃষ্টি করেন। তারা চিৎকার করতে থাকেন। ক্যারি লামকে নিয়ে তারস্বরে স্লোগান দিতে থাকেন। প্রথম দফায় তিনি বক্তব্য দেয়ার চেষ্টা করলে তাতে এ জন্য বিঘ্ন ঘটে। এরপর অধিবেশন আবার শুরু হতে গেলে আবারও একই অবস্থার শিকারে পরিণত হন তিনি। এ সময় পার্লামেন্টে বক্তব্য দেয়া স্থগিত করে ভিডিও লিঙ্কের মাধ্যমে তিনি বক্তব্য তুলে ধরেন পার্লামেন্টের ওয়েবসাইটে।
এ খবর দিয়েছে অনলাইন বিবিসি।
বিবিসি লিখেছে, এর অর্থ হলো প্রত্যাবাসন বিষয়ক যে বিল নিয়ে কয়েক মাস ধরে হংকংয়ে বিক্ষোভ হচ্ছে তা আনুষ্ঠানিকভাবে প্রত্যাহার করা নাও হতে পারে। জুলাইয়ে তীব্র বিরোধিতার মধ্যে ওই বিলটি স্থগিত করা হয়। ওই সময়ের কড়া বিক্ষোভের পর প্রথমবারের মতো আজ বুধবার লেজিসলেটিভ কাউন্সিলের অধিবেশন বসে। এই অধিবেশনেই সবাই মিলে ওই বিলটি প্রত্যাহার করার সুযোগ ছিল। কিন্তু প্রধান নির্বাহী ক্যারি লাম অধিবেশন শুরু হতেই তার বক্তব্য দেয়া শুরু করতে যান। এ সময় বিরোধী দলীয় সদস্যরা চিৎকার চেচামেচি করতে থাকেন। তাদের অনেকে টেবিলের ওপর উঠে যান। এ সময় তারা ‘পাঁচটি দাবি- একটিও কম নয়’ বলে স্লোগান দিতে থাকেন ক্যারি লামের চারপাশে দেয়ালের বাইরে। বিক্ষোভ শুরু হওয়ার পর থেকেই তারা বিলের বিপরীতে ৫টি মূল দাবি উত্থাপন করতে থাকেন। এর মধ্যে রয়েছে সার্বজনীন ভোটাধিকার। বিরোধী দলীয় সদস্য তানিয়া চ্যান হংকংয়ের সঙ্কটের জন্য দায়ী করেন ক্যারি লামকে।
তিনি বলেন ক্যারি লামের দুই হাত রক্তে রঞ্জিত। আমরা চাই ক্যারি লামের প্রত্যাহার ও পদত্যাগ। তার সরকার চালানোর মতো কোনো সক্ষমতা নেই। প্রধান নির্বাহী হওয়ার মতো যোগ্যতাসম্পন্ন নন তিনি। এখানে উল্লেখ্য, এবারই প্রথম পার্লামেন্টে পলিসি উত্থাপনে ব্যর্থ হলেন হংকংয়ের কোনো নির্বাহী। তবে ক্যারি লামকে যারা বাধা দিয়েছেন তাদের নিন্দা প্রকাশ করেছেন সরকারপন্থিরা। তারা বলেছেন, হংকংয়ের ভবিষ্যত অর্থনীতির জন্য ক্যারি লামের বক্তব্য খুব গুরুত্বপূর্ণ ছিল।
পার্লামেন্টের অধিবেশন স্থগিত হয়ে যাওয়ার পরে, আগে থেকে রেকর্ড করা ক্যারি লামের একটি বক্তব্য প্রচার করা হয়েছে লেজিসলেটিভ কাউন্সিলের ওয়েবসাইটে। এতে ‘একদেশ, দুই ব্যবস্থা’ নীতির প্রতি তার প্রতিশ্রুতি ব্যক্ত করেন। এই নীতি বৃটিশ শাসনের পর থেকে হংকংয়ে প্রচলিত। তিনি আরো বলেছেন, হংকংয়ের স্বাধীনতার ডাক মোটেও সহ্য করা হবে না।
যুক্তরাষ্ট্রের আইন প্রণেতাদের পক্ষ থেকে হংকংয়ের বিক্ষোভকারীরা সমর্থন পাওয়ার কয়েক ঘন্টা পরে এসব ঘটনা ঘটেছে হংকংয়ে। যুক্তরাষ্ট্রের ওই আইন প্রণেতারা হংকংয়ে মানবাধিকার সমুন্নত রাখার বিষয়ে একটি বিল পাস করেছে। হংকং চীনের অংশ হলেও তারা স্বায়ত্তশাসন ভোগ করে। জনগণের রয়েছে অধিকতর অধিকার। এখান থেকে সন্দেহভাজন অপরাধীদের মূল ভূখন্ড অর্থাৎ চীনের হাতে তুলে দেয়া সংক্রান্ত একটি প্রত্যাবর্তন বিল উত্থাপন করে সরকার। এর মধ্য দিয়ে ভিন্নমত দমন করা হবে এমন আতঙ্কে জুনে শুরু হয় বিক্ষোভ। বিক্ষোভের মধ্যে সেপ্টেম্বরে সরকার ঘোষণা দিতে বাধ্য হয় যে, পার্লামেন্ট অধিবেশন শুরু হলেই বিলটি প্রত্যাহার করা হবে। কিন্তু বিক্ষোভ চলতেই থাকে। বিক্ষোভকারীদের মূল ৫টি দাবি হলোÑ ১. এই বিক্ষোভকে দাঙ্গা হিসেবে দেখা যাবে না। ২. গ্রেপ্তারকৃত নেতাকর্মীদের সাধারণ ক্ষমা দিতে হবে। ৩. পুলিশি নৃশংসতার নিরপেক্ষ তদন্ত হতে হবে। ৪. সার্বজনীন ভোটাধিকার বাস্তবায়ন করতে হবে এবং ৫. প্রত্যাবর্তন বিষয়ক বিল প্রত্যাহার করতে হবে।