× প্রচ্ছদ অনলাইনপ্রথম পাতাশেষের পাতাখেলাবিনোদনএক্সক্লুসিভভারতবিশ্বজমিনবাংলারজমিনদেশ বিদেশশিক্ষাঙ্গনরকমারিমত-মতান্তরবই থেকে নেয়া তথ্য প্রযুক্তি শরীর ও মন চলতে ফিরতে কলকাতা কথকতাসেরা চিঠিইতিহাস থেকেঅর্থনীতি
ঢাকা, ২০ এপ্রিল ২০২৪, শনিবার , ৭ বৈশাখ ১৪৩১ বঙ্গাব্দ, ১১ শওয়াল ১৪৪৫ হিঃ

তৃতীয় লিঙ্গের প্রথম মহিলা ভাইস চেয়ারম্যান পিংকি

বাংলারজমিন

ঝিনাইদহ প্রতিনিধি
১৭ অক্টোবর ২০১৯, বৃহস্পতিবার

কোটচাঁদপুর উপজেলা পরিষদ নির্বাচনে নারী ভাইস চেয়ারম্যান পদে নির্বাচিত সাদিয়া আক্তার পিংকিকে (৩৭) নিয়ে তোলপাড় সৃষ্টি হয়েছে। নির্বাচিত হওয়ার পর নিজেই জানিয়েছেন তিনি তৃতীয় লিঙ্গের মানুষ। এতে বাংলাদেশে তৃতীয় লিঙ্গের প্রথম জন প্রতিনিধি হিসেবে তার নাম উঠে এসেছে। জানতে চাইলে সাদিয়া আক্তার পিংকি মানবজমিনকে বলেছেন, নির্বাচনের আগে তিনি নিজেকে হিজড়া হিসেবে পরিচয় দেননি। গত সোমবার কোটচাঁদপুর উপজেলা পরিষদ নির্বাচনে নারী হিসাবে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করে ১২ হাজার ৮৮০ ভোট পেয়ে মহিলা ভাইস চেয়ারম্যান নির্বাচিত হয়েছেন পিংকি। তার নিকটতম প্রতিদ্বন্দ্বী রুবিনা খাতুন পেয়েছেন ১২ হাজার ১৩৯ ভোট।

হাড্ডাহাড্ডি লড়াইয়ে ৭৪১ ভোটের ব্যবধানে একজন তৃতীয় লিঙ্গের প্রার্থী হিসাবে তিনি বিজয়ী হয়ে ইতিহাস রচনা করেন। তার বিরুদ্ধে মোট দুজন মহিলা প্রার্থী নির্বাচনী লড়াই করেন।
কোটচাঁদপুর উপজেলার দোড়াই উনিয়নের সুয়াদি গ্রামের নওয়াব আলীর সন্তান পিংকি লেখাপড়া করেছেন দশম শ্রেণি পর্যন্ত। মেয়ে হিসেবে বড় করার পর পরিবার বিয়েও দিয়েছিল, কিন্তু হিজড়া হওয়ায় সেই সংসার টেকেনি। পিংকিরা চার ভাই-বোন। বাবা অনেক আগেই মারা গেছেন। মা কুলসুম বেগম জীবিত আছেন। দুই ভাই শেখ জালাল ও শেখ রতন কৃষি কাজ করে জীবিকা নির্বাহ করেন। বোনের বিয়ে হয়ে গেছে। সংসার ভাঙার পর এক সময় কোটচাঁদপুরে পোশাকের দোকান চালালেও পরে রাজনীতি আর সমাজকর্মে মন দেন পিংকি। গত তিন বছর ধরে তিনি উপজেলা যুব মহিলা লীগের নেতৃত্ব দিচ্ছেন। বিজয়ী হওয়ার পর সবার সঙ্গে শুভেচ্ছা ও কুশল বিনিময় করে ব্যস্ত সময় পার করছেন পিংকি। তিনি বলেন, জয়ী হয়ে ভালো লাগছে। কোটচাঁদপুরের সকল শ্রেণি পেশার জনগণ আমার সঙ্গে আছে। তারা আমাকে ভালোবেসে ভোট দিয়ে জয় যুক্ত করেছেন। এজন্য আমি তাদের প্রতি কৃতজ্ঞ। জনগণ আমাকে তাদের আপনজন ও কাছের মানুষ মনে করে আমাকে বিজয়ী করেছেন। তৃতীয় লিঙ্গের একজন মানুষ হিসাবে এই ভালবাসার প্রতিদান দেওয়ার চেষ্টা করবো। পিংকি বলেন, ‘কোটচাঁদপুরের জনগণের উন্নয়ন ও তৃতীয় লিঙ্গের মানুষদের সম্মান এবং অধিকার প্রতিষ্ঠা করতে চেষ্টা করব।

সকল ধরনের উন্নয়নের কাজে সবার সহযোগিতা কামনা করছি।’ রাজনীতিতে আসার পর পরিবারের সদস্য এবং প্রতিবেশীরা তাকে নানা ভাবে সাহায্য সহযোগিতা করছেন বলেও জানান পিংকি। তিনি বলেন, ‘তিন বছর যাবৎ উপজেলা যুব মহিলালীগের আহ্বায়ক ও দোরা ইউনিয়নের একটি সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের ম্যানেজিং কমিটির সভাপতির দায়িত্ব পালন করছি। এলাকার গরিব, দুঃখী ও অসহায় মানুষদের পাশে থেকে তাদের উন্নয়নে কাজ করে যাচ্ছি। কেউ অসুস্থ হলে তাকে ডাক্তার দেখানোর জন্য হাসপাতালে নিয়ে যাই। গভীর রাতে কেউ বিপদে পড়লে সাহায্যের চেষ্টা করি। সব সময় মানুষের বিপদে পাশে থাকার চেষ্টা করি।’ নির্বাচিত হওয়ার পর এখন আপনি কোন কোন বিষয়ে কাজ করতে চান ? এমন প্রশ্ন করা হলে সাদিয়া আক্তার পিংকি বলেন, ‘আমি জনগণের উন্নয়নে কাজ করতে চাই। অসহায় নারীদের পাশে থাকতে চাই। মাদকমুক্ত সমাজ গড়তে চাই। যুব সমাজের পাশে থেকে উন্নয়নের কাজ করতে চাই। সমাজকে সন্ত্রাসমুক্ত করতে চাই। আর যারা তৃতীয় লিঙ্গের আছেন, আমি চাই তারা সম্মানপাক। প্রতিটা এলাকায় প্রতিটা ক্ষেত্রে তাদের যেন সম্মান দেয়া হয় এব্যাপারে প্রধানমন্ত্রীর হস্তক্ষেপ কামনা করি।’ নির্বাচনের বিষয়ে কী ভাবে উদ্বুদ্ধ হলেন জানতে চাইলে তিনি বলেন, আমার নির্বাচনী এলাকার সকল নারী-পুরুষ আমাকে ভোটে দাঁড়ানোর উৎসাহ দিয়েছেন। তাদের ভালবাসা ও অনুপ্রেরণায় আমি ভোটের মাঠে নামি।’। শেষ মুহূর্ত পর্যন্ত তারা আমার সঙ্গে ছিলেন। শপথ গ্রহন করে বঙ্গবন্ধুর কবর জিয়ারত  শেষ করে পরে প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গে দেখা করতে চান।

ঝিনাইদহের জেলা নির্বাচন কর্মকর্তা মো. রোকনুজ্জামান বলেন, আইনে এখন তৃতীয় লিঙ্গের ভোটার হওয়ার সুযোগ আছে। ভোটার হলে নির্বাচনও করা যাবে। তবে পিংকি খাতুন হিজড়া হিসেবে পরিচয় দেননি। তিনি মহিলা হিসাবে পরিচয় দিয়ে নির্বাচন করেছেন। তার আইডি কার্ডেও তৃতীয় লিঙ্গ উল্লেখ  নেই। তবে তিনি নিজেকে তৃতীয় লিঙ্গর মানুষ বলে দাবি করেন। ২০১৩ সালের ১৩ই নভেম্বর মন্ত্রিসভার বৈঠকে হিজড়াদের ‘লিঙ্গ পরিচয়কে’ রাষ্ট্রীয় স্বীকৃতি দেয়া হয়। এর ধারাবাহিকতায় ভোটার ফরমে লিঙ্গ পরিচয়ের ঘরে নারী ও পুরুষের পাশাপাশি হিজড়াদের জন্য আলাদা ঘর রাখে নির্বাচনক মিশন। নির্বাচন কমিশনার কবিতা খানম বছরের শুরুতে এক অনুষ্ঠানে বলেছিলেন, তৃতীয় লিঙ্গের মানুষেরা ইচ্ছা করলে পুরুষ কিংবা নারী- যে কোনো পরিচয়েও ভোটার তালিকায় নাম অন্তর্ভুক্ত করতে পারবেন।
অবশ্যই দিতে হবে *
অবশ্যই দিতে হবে *
অন্যান্য খবর