একটুর জন্য জয় হাতছাড়া। আর দুই-তিন মিনিট ভারতকে আটকে রাখতে পারলেই কলকাতা থেকে ৩ পয়েন্ট নিয়ে দেশে ফিরতে পারতো বাংলাদেশ ফুটবল দল। তবে প্রতিপক্ষের হাজার হাজার দর্শকের সামনে যেভাবে লড়াই করলো জামাল ভূঁইয়ার দল, তাতে ঘরের মাঠে আরো ভালো কিছুর স্বপ্ন দেখছে বাংলাদেশের ফুটবল ভক্তরা। আর অধিনায়ক জামালও প্রতিশ্রুতি দিলেন ভক্তদের। গতকাল নিজেদের টিম হোটেলে জামাল বলেন, ‘ঢাকায় আমরা জিতবো, হান্ড্রেড পার্সেন্ট। আগামী বছর ৪ঠা জুন হবে ম্যাচটি। এর আগে আমরা আরো তিনটি ম্যাচ খেলবো। আগামী মাসেই আমাদের ম্যাচ আছে ওমানে।
তাদের মাঠে গিয়ে আমাদের খেলতে হবে।’
মঙ্গলবার কলকাতার যুবভারতীয় স্টেডিয়ামে ম্যাচের ৪২তম মিনিটে সাদ উদ্দিনের হেডে এগিয়ে যায় বাংলাদেশ। দ্বিতীয়ার্ধের শুরুতে বেশ কয়েকটি সুযোগ নষ্ট করে লাল-সবুজের দল। একবার বল ক্রসবারে লেগে ফিরে আসে। পরে নির্ধারিত সময়ের শেষ মিনিটে গোল হজম করে জয় বঞ্চিত হয় বাংলাদেশ। জামাল ভূঁইয়া বলেন, ’আমাদের সবার মন খারাপ। খুব কষ্ট পেয়েছি। জয়ের এত কাছে গিয়েও ফিরে আসতে হলো!’
ম্যাচের শেষ ৩০ মিনিটে বাংলাদেশি ফুটবলারদের কিছুটা ক্লান্ত ও দমশূন্য দেখাচ্ছিল। দ্বিতীয়ার্ধের শুরুতেই যে ধার ছিল খেলায় সেটি শেষের দিকে দেখা যায়নি আর। ক্লান্তি ও নার্ভাসনেসের কারণেই কি গোলটা হজম করতে হলো? এমন প্রশ্নের জবাবে জামাল বলেন, ‘কোনটাই না। সময় যখন শেষ হয়ে আসছিল তখন ভারত তাদের সর্বশক্তি দিয়ে চেষ্টা করছিল ম্যাচে ফিরতে। তারা সফল হয়েছে। ফুটবলে এমন তো হয়ই। আমরা ভালো খেলেছি, জেতার মতো খেলেছি। জয়টা পাইনি।’
যুবভারতী স্টেডিয়াম ছিল ভারতের সমর্থকদের দখলে। ম্যাচের আগে এমন কথাও শোনা গিয়েছিল যে ভারতীয় দর্শকদের চাপে পড়বে বাংলাদেশ। জামাল বলেন, ‘আমাদের পারফরম্যান্সই প্রমাণ করে দর্শকরা আমাদের চাপে ফেলতে পেরেছিল, কি পারেনি। আর ফুটবল বেশি দর্শকের সামনে খেলে আনন্দও আছে।’
ফিফা র্যাঙ্কিংয়ে বাংলাদেশ ১৮৭তম। যেভাখে ভারতের অবস্থান ১০৪তম। র্যাঙ্কিংয়ে বিশাল তফাৎ থাকলেও মাঠের পারফরম্যান্সে মনে হয়নি ভারত খুব এগিয়ে বাংলাদেশের চেয়ে। যদিও অন টার্গেট শট, বল পজেশন, কর্নার কিক ইত্যাদিতে ভারত এগিয়ে ছিল। জামাল ভূঁইয়া বলেন, ‘৯০ মিনিটের ম্যাচে ৪৬ মিনিট আমরা এগিয়েছিলাম। আমাদের সব কিছুই ঠিক ছিল। আরেকটা গোল পেয়ে গেলে কিন্তু ভারত আর ম্যাচে ফিরতে পারতো না।’
ইংলিশ কোচ জেমি ডে’র অধীনে যে বদলে গেছে বাংলাদেশ দল, তার প্রমাণ পাওয়া গিয়েছিল ঢাকায় কাতারের বিপক্ষে ম্যাচেই। এশিয়ার বর্তমান চ্যাম্পিয়নদের বিপক্ষে দুর্দান্ত লড়াই করে হারে জামালরা। ম্যাচে গোলের বেশ কয়েকটি সুযোগ তৈরি করেছিল বাংলাদেশ। কয়েকবার তো গোলমুখ থেকে বল প্রতিহত করেন কাতারের ডিফেন্ডাররা। আর বদলে যাওয়া বাংলাদেশের অন্যতম কারিগর জামাল ভূঁইয়া। ডেনমার্কে জন্ম নেয়া জামাল চাইলে ডেনমার্কেই নিজের ফুটবল ক্যারিয়ার এগিয়ে নিতে পারতেন। কিন্তু বাংলাদেশের ফুটবলকে কিছু দিতে চেয়েছিলেন প্রতিভাধর এই ফুটবলার। বাংলাদেশের হয়ে খেলার সম্মতি প্রকাশ করার পর ২০১৩ সালে জাতীয় দলে অভিষেক হয় জামালের। এখন তাকে ছাড়া দল কল্পনাই করা যায় না। ভারতের বিপক্ষে সাদের গোলটা তার ফ্রিকিক থেকেই। এ দেশের ফুটবল বোদ্ধারা মনে করেন আক্রমণভাগে জামালের মতো ভালো মানের খেলোয়াড় পেলে আরো দুর্দান্ত হয়ে উঠবে বাংলাদেশ।