× প্রচ্ছদ অনলাইনপ্রথম পাতাশেষের পাতাখেলাবিনোদনএক্সক্লুসিভভারতবিশ্বজমিনবাংলারজমিনদেশ বিদেশশিক্ষাঙ্গনরকমারিমত-মতান্তরবই থেকে নেয়া তথ্য প্রযুক্তি শরীর ও মন চলতে ফিরতে কলকাতা কথকতাসেরা চিঠিইতিহাস থেকেঅর্থনীতি
ঢাকা, ২৩ এপ্রিল ২০২৪, মঙ্গলবার , ১০ বৈশাখ ১৪৩১ বঙ্গাব্দ, ১৪ শওয়াল ১৪৪৫ হিঃ

কুলাউড়ার তেলিবিল উচ্চ বিদ্যালয়ের এডহক কমিটির সভা

বাংলারজমিন

স্টাফ রিপোর্টার, মৌলভীবাজার থেকে
২০ অক্টোবর ২০১৯, রবিবার

মৌলভীবাজারের কুলাউড়ার তেলিবিল উচ্চ বিদ্যালয়ের সহকারী শিক্ষিকাকে যৌন হয়রানির ঘটনাসহ নানা অপকর্মের অভিযোগে বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক নোমান আহমদের বিরুদ্ধে পুলিশ, শিক্ষা অফিস, নির্বাহী কর্মকর্তা ও অতিরিক্ত জেলা ম্যাজিস্ট্রেটের সরজমিন তদন্ত শেষ হয়েছে। ইতিমধ্যে থানায় দায়েরকৃত মামলার চার্জশিটও আদালতে জমা দেয়া হয়েছে। আগামীকাল প্রধান শিক্ষকের বিরুদ্ধে যৌন হয়রানিসহ বিভিন্ন অনিয়ম ও দুর্নীতির প্রতিকারে করণীয় নির্ধারণে বিদ্যালয়ের শিক্ষক, শিক্ষার্থী, জনপ্রতিনিধি ও এলাকাবাসীদের নিয়ে উপজেলা নির্বাহী অফিসারের নেতৃত্বে এডহক কমিটির জরুরি সভা অনুষ্ঠিত হবে। জানা যায় এনটিআরসিএর মাধ্যমে শিক্ষক নিবন্ধন পরীক্ষায় উত্তীর্ণ হয়ে সরকারি নিয়মে চলতি বছরের ১লা ফেব্রুয়ারি তেলিবিল উচ্চ বিদ্যালয়ে সহকারী শিক্ষক হিসেবে নিয়োগ পান একই উপজেলার এক অবসরপ্রাপ্ত বিজিবি সদস্যের মেয়ে। নিয়োগ পেয়ে ১৪ই ফেব্রুয়ারি তেলিবিল উচ্চ বিদ্যালয়ে শিক্ষক হিসেবে যোগদান করেন। এপ্রিল মাসে তিনি এমপিওভুক্ত হন। যার ইনডেস্ক নম্বর ১১৪৯৬৬৫। গত ৬ই জুলাই বিদ্যালয় প্রধান শিক্ষক নোমান আহমদের কাছে যৌন হয়রানির শিকার হয়ে কুলাউড়া থানায় একটি মামলা করেন তিনি।
একই সঙ্গে কুলাউড়া উপজেলা নির্বাহী অফিসার, মাধ্যমিক শিক্ষা অফিসার, জেলা মাধ্যমিক শিক্ষা অফিসার ও জেলা প্রশাসকসহ বিভিন্ন দপ্তরে লিখিত অভিযোগ করেন। ফলে প্রধান শিক্ষকের অনুসারীদের হুমকিতে ভীত হয়ে তিনি গত তিনমাস ধরে তেলিবিল উচ্চ বিদ্যালয়ে যেতে পারছেন না। এই সুযোগে প্রধান শিক্ষক নোমান আহমদ এডহক কমিটির সভাপতি উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা, উপজেলা মাধ্যমিক শিক্ষা কর্মকর্তা ও জেলা শিক্ষা কর্মকর্তাকে অবহিত না করে নিজ ক্ষমতাবলে এলাকার আতিক হাসান নামে একজনকে শিক্ষিকার স্থলে খণ্ডকালীন শিক্ষক নিয়োগ দেন। এমনকি এর আগে প্রধান শিক্ষক নিয়ম বহির্ভূতভাবে বিদ্যালয়ে আরো ৭ জনকে খণ্ডকালীন শিক্ষক হিসেবে নিয়োগ দেন। স্থানীয় লোকজন জানান, প্রধান শিক্ষকের স্বেচ্ছাচারিতা ও অনিয়মের কারণে গত ১২ বছর ধরে এ বিদ্যালয়ে অভিভাবকদের ভোটে নির্বাচিত কোনো পরিচালনা কমিটি দায়িত্ব পালন করতে পারেননি। বর্তমানে কুলাউড়া উপজেলা নির্বাহী অফিসার এ বিদ্যালয়ের এডহক কমিটির সভাপতি হিসেবে দায়িত্ব পালন করছেন। প্রধান শিক্ষক স্থানীয় কয়েকজন আওয়ামী লীগ নেতার সহায়তা নিয়েও নিজেকে আওয়ামী লীগ নেতা পরিচয় দিয়ে একের পর এক অনিয়ম, দুর্নীতি ও যৌন হয়রানি করে যাচ্ছেন। থানায় দায়ের করা মামলায় উচ্চ আদালত ও নিম্ন আদালত থেকে জামিন  নিয়ে উপজেলা ও জেলা আওয়ামী লীগের কতিপয় নেতার প্রভাবে প্রধান শিক্ষক নোমান আহমদ এসব অপকর্ম চালিয়ে যাচ্ছেন। প্রধান শিক্ষকের যৌন হয়রানির শিকার হয়েছেন অনেক ছাত্রীও। সামাজিক নিরাপত্তা, ভয় ও লজ্জায় কোনো ছাত্রী অভিযোগও করেননি। ফলে গত কয়েক বছরে এলাকার অনেক ছাত্রছাত্রী বিদ্যালয় ত্যাগ করে কমলগঞ্জ উপজেলার শমশেরনগরে বিভিন্ন শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে ভর্তি হয়েছেন। তাছাড়া অভিযুক্ত প্রধান শিক্ষক নোমান আহমদ তেলিবিল উচ্চ বিদ্যালয়ের এমপিওভুক্তির সরকারি বেতন ভাতা গ্রহণ একইসঙ্গে সরকারি ডাকঘরের পোস্ট মাস্টার হিসেবেও সরকারি অর্থ গ্রহণ করছেন। তার বাড়িতেই রয়েছে সাব পোস্ট অফিস। নির্যাতিতা ও অভিযোগকারী শিক্ষিকা জানান, ঘটনার পর থেকে তিনি প্রধান শিক্ষক ও তার অনুসারীদের ভয়ে বিদ্যালয়ে যেতে পারছেন না। ফলে জুলাই মাস থেকে তার বেতন ভাতা বন্ধ রয়েছে। প্রধান শিক্ষক বিদ্যালয়ের বেতন শিট থেকে তার নামও কেটে দিয়েছেন। তিনি ছুটির নির্দেশনা চেয়ে ইতিমধ্যে ৩টি আবেদন করেছেন। অভিযোগ সম্পর্কে প্রধান শিক্ষক নোমান আহমদ জানান, তার উপর আনীত অন্যান্য অভিযোগ সত্য নয়। তবে শিক্ষিকাসহ একাধিক শিক্ষিকা, ছাত্রী ও এলাকার মহিলাদের প্রমাণসহ অভিযোগ উল্লেখ করলে তিনি তার কোনো সদুত্তর না দিয়ে ওই প্রশ্নের পাশ কেটে যান। তিনি বলেন দীর্ঘ কয়েক মাস ধরে বিদ্যালয়ে আসছেন না, বিদ্যালয় চালাতে গিয়ে সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষকে অবহিত করে তিনি খণ্ডকালীন শিক্ষক নিয়োগ দিয়েছেন। উপজেলা মাধ্যমিক শিক্ষা কর্মকর্তা মো. আনোয়ার হোসেন প্রধান শিক্ষকের ওপর নানা অভিযোগের সত্যতা স্বীকার করে জানান, প্রধান শিক্ষক নোমান আহমদ বিভিন্ন অনিয়মের সঙ্গে জড়িত। নিয়োগপ্রাপ্ত শিক্ষিকাকে রেখে কোনো অবস্থাতেই তার স্থলে নতুন একজন খণ্ডকালীন শিক্ষক নিয়োগ দিতে পারেন না। যেটা করেছেন তা সম্পূর্ণ নিয়ম বহির্ভূত। বিদ্যালয়ের নিয়মিত কমিটি করার জন্য একটি সিদ্ধান্ত নেয়া হবে মতবিনিময় সভায়। বিদ্যালয় এডহক কমিটির সভাপতি ও উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা এটিএম ফরহাদ চৌধুরী বলেন, নিয়োগ প্রাপ্ত স্থায়ী শিক্ষিকার স্থলে নতুন করে একজন খণ্ডকালীন শিক্ষক নিয়োগের অভিযোগ তিনি শুনেছেন। এই খণ্ডকালীন নিয়োগ সম্পূর্ণরূপে অবৈধ হয়েছে। তদন্ত প্রমাণিত হলে তার বিরুদ্ধে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে। ২১শে অক্টোবর সোমবার সকল শিক্ষক, শিক্ষার্থী, অভিভাবক ও এলাকার গণ্যমান্য ব্যক্তিবর্গের উপস্থিতিতে বিদ্যালয়ের সকল সমস্যা ও মান উন্নয়নে একটি মতবিনিময় সভার আয়োজন করা হয়েছে। তিনি আশাবাদী এ সভায় বিদ্যালয়ের সব সমস্যার সমাধান হবে।
অবশ্যই দিতে হবে *
অবশ্যই দিতে হবে *
অন্যান্য খবর