বিগত নির্বাচন নিয়ে সাবেক মন্ত্রী ও ওয়ার্কার্স পার্টির সভাপতি রাশেদ খান মেননের বক্তব্যে তোলপাড় রাজনৈতিক অঙ্গন। তার এ বক্তব্য প্রচারের পর আওয়ামী লীগ সাধারণ সম্পাদক তীব্র প্রতিক্রিয়া জানিয়েছেন। বিএনপি ও ঐক্যফ্রন্টের তরফে প্রতিক্রিয়া এসেছে। তার এ বক্তব্য নিয়ে আলোচনা চলছে মুখে মুখে। নির্বাচনের এতদিন পর মেনন কেন এমন বক্তব্য দিলেন এ নিয়েও প্রশ্ন জেগেছে অনেকের মনে। নিজের বক্তব্যের পক্ষে বিপক্ষে ব্যাপক প্রতিক্রিয়া আসায় ওই বক্তব্যের ব্যাখ্যা দিয়ে গতকাল বিবৃতি দিয়েছেন মেনন। শনিবার বরিশাল ওয়ার্কার্স পার্টির সম্মেলনে মেনন বলেন, আমি সাক্ষ্য দিয়ে বলছি, জনগণ নির্বাচনে ভোট দিতে পারেনি। উন্নয়ন মানে গণতন্ত্র হরণ নয়।
উন্নয়ন মানে ভিন্ন মতের সংকোচন নয়। উন্নয়ন মানে মত প্রকাশের স্বাধীনতা হরণ নয়। উন্নয়ন মানে গণতন্ত্রের স্পেস কমিয়ে দেয়া নয়। মেনন বলেন, ক্যাসিনো মালিকদের ধরা হচ্ছে, দুর্নীতিবাজদের ধরা হচ্ছে। কিন্তু দুর্নীতির আসল জায়গা নির্বিঘ্ন আছে। যারা দুর্নীতি করছে তাদের বিচার কবে হবে? রাশেদ খান মেননের এ বক্তব্য প্রচারের পর থেকেই নানামুখি প্রতিক্রিয়া আসতে থাকে। খোদ নিজ জোটের নেতারা প্রশ্ন তুলেন জনগণের ভোট ছাড়া নির্বাচিত হয়ে থাকলে তিনি পদত্যাগ করছেন না কেন? এমন দাবির প্রেক্ষিতে মেনন অবশ্য বলেছেন, পদত্যাগের প্রশ্নই উঠে না। মেননের বক্তব্য নিয়ে প্রশ্ন তুলেছেন আওয়ামী লীগ সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদের। তিনি বলেছেন, মেনন মন্ত্রীত্ব পেলে কি এমন বক্তব্য দিতে পারতেন। ১৪ দলের বৈঠকে মেননের কাছে বক্তব্যের ব্যাখ্যা চাওয়া হবে বলেও জানিয়েছেন আওয়ামী লীগ সাধারণ সম্পাদক। বিএনপির সিনিয়র যুগ্ম মহাসচিব রুহুল কবির রিজভী গতকাল এক সংবাদ সম্মেলনে বলেন, বিবেকের তাড়নায় মেনন সত্য কথাটি বলেছেন। ভবিষ্যতে এমন বক্তব্য আরও অনেক নেতার মুখে শোনা যাবে। জাতীয় ঐক্যফ্রন্টের শীর্ষ নেতা ড. কামাল হোসেন রাশেদ খান মেননকে ধন্যবাদ জানিয়ে বলেন, দেরিতে হলেও তিনি সত্য কথা বলেছেন।
ওদিকে আলোচনা-সমালোচনার মুখে রোববার এক বিবৃতিতে মেনন দাবি করেন, তার বক্তব্য উপস্থাপনের মাধ্যমে গণমাধ্যমে ভুল বার্তা দেয়া হয়েছে। বক্তব্য আংশিক উপস্থাপন করায় বিভ্রান্তি সৃষ্টি হয়েছে। তিনি বলেন, বরিশাল জেলা ওয়ার্কার্স পার্টির সম্মেলনে আমার একটি বক্তব্য সম্পর্কে জাতীয় রাজনীতি ও ১৪ দলের রাজনীতিতে একটা ভুল বার্তা গেছে। আমার বক্তব্য সম্পূর্ণ উপস্থাপন না করে অংশ বিশেষ উত্থাপন করায় এই বিভ্রান্তি সৃষ্টি হয়েছে। আমি স্পষ্ট করে বলতে চাই এ যাবতকালের নির্বাচন ১৪ দলের সংগ্রামেরই ফসল এবং সরকারও গঠিত হয়েছে ১৪ দলের লড়াইয়ের মধ্য দিয়ে। আজকে মৌলবাদ-সামপ্রদায়িকতার যে বিপদ বিদ্যমান তাকে মোকাবিলা করতে ১৪ দলের ওই সংগ্রামকেই এগিয়ে নিতে হবে। মেনন বলেন, আমি কেবল এখনই নয়, জাতীয় নির্বাচন সম্পর্কে আমি পার্লামেন্টে রাষ্ট্রপতি ভাষণের ওপর বক্তব্য রাখতে গিয়ে বলেছিলাম ‘একাদশ সংসদের সফল নির্বাচন অনুষ্ঠিত হয়েছে। কিন্তু অভিজ্ঞতাটি সুখকর নয়। বিএনপি-জামায়াত নির্বাচনে এলেও নির্বাচনকে ভন্ডুল করা, নিদেনপক্ষে জাতীয়-আন্তর্জাতিকভাবে প্রশ্নবিদ্ধ করার কৌশল প্রয়োগ করেছে নির্বাচনে। ...এটা যেমন সত্য, তেমনি এ ধরনের পরিস্থিতিতে অতি উৎসাহী প্রশাসনিক কর্মকর্তারা বাড়াবাড়ি করতে পারে। কিন্তু তাতে এই নির্বাচন অশুদ্ধ বা অবৈধ হয়ে যায় না।’ বক্তৃতায় আমি বলেছি স্বাধীনতা উত্তরকাল থেকে এ যাবত জিয়া-এরশাদ-বিএনপি-জামায়াত আমলের ধারাবাহিক অনিয়ম অব্যবস্থাপনা ও ক্ষমতার অপব্যবহার ঘটেছে। বিভিন্ন সময় আমি প্রার্থী হিসেবে এ সব ঘটনার সাক্ষী। আমি বলেছি প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গে মিলে ভোটাধিকার ও ভোটের মর্যাদা প্রতিষ্ঠা করতে আমরা যে লড়াই করেছি তা যেন বৃথা না যায়, সেজন্য নির্বাচনকে যথাযথ মর্যাদায় ফিরিয়ে আনতে হবে।