পাবনার ভাঙ্গুড়ায় ইউপি সদস্যকে টাকা না দেয়ায় হতদরিদ্র একটি পরিবারের ভাগ্যে জোটেনি সরকারি ঘর। উপজেলার পারভাঙ্গুড়া ইউনিয়নের ১ নম্বর ওয়ার্ড পাটুলীপাড়া গ্রামের ইউপি সদস্য আব্দুল গনির বিরুদ্ধে এ অভিযোগ করেছেন ওই গ্রামের হতদরিদ্র কৃষক আব্দুর রব। তার অভিযোগ, ইউপি চেয়ারম্যান ও ইউএনও তাকে ঘর দিতে চাইলেও ইউপি সদস্যের দাবিকৃত টাকা না দেয়ায় তার নাম তালিকাভুক্ত করা হয়নি। এ ঘটনায় আব্দুর রব পারভাঙ্গুড়া ইউনিয়ন পরিষদ চেয়ারম্যান আলহাজ হেদায়েতুল হকের কাছে অভিযোগ করেছেন।
অভিযোগে জানা যায়, এ বছরের ৩১শে মে রাতে উপজেলার পাটুলীপাড়া গ্রামের হতদরিদ্র কৃষক আব্দুর রবের বাড়িতে ডাকাত চক্র হামলা করে। ডাকাত চক্রের সদস্যরা আব্দুর রব ও তার স্ত্রীকে গলায় ছুরি ধরে গোয়াল ঘর থেকে দেশীয় প্রজাতির ৬টি গরু নিয়ে যায়। বাড়ির সবগুলো গরু হারিয়ে ওই কৃষকের আয়ের উৎস একেবারে বন্ধ হয়ে যায়। এতে অভাব অনটনে ৬ সন্তানকে নিয়ে মহাবিপদে পড়েন মাত্র ১০ কাঠা জমির মালিক আব্দুর রব। গ্রামবাসী চাঁদা তুলে আব্দুর রবকে সহযোগিতা করেন।
এদিকে ডাকাতির ঘটনার পর ইউনিয়ন পরিষদ চেয়ারম্যান আলহাজ হেদায়েতুল হক ও তৎকালীন উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মাসুদুর রহমান আব্দুর রবের বাড়ি পরিদর্শনে যান।
তারা আব্দুর রবের করুণ দশা দেখে তাকে ৩ লাখ টাকা ব্যয়ে দুর্যোগ সহনীয় প্রকল্পের একটি ঘর দেয়ার প্রতিশ্রুতি দেন। কিন্তু পরের মাসে সরকারি ঘর বরাদ্দ আসলে আব্দুর রবকে বাদ দিয়ে অন্য একজনকে ঘর দেন ওই গ্রামের ইউপি সদস্য আব্দুল গনি। এ বিষয়ে গ্রামের অনেকেই প্রতিবাদ করলে ইউপি সদস্য আব্দুল গনি পরবর্তীতে ঘর দেবেন বলে ওয়াদা করেন। এ মাসে আবারো সরকারিভাবে ঘর বরাদ্দ আসে। এরপর ইউপি সদস্য আব্দুল গনি রবের বাড়ি গিয়ে ঘর নিতে টাকা দিতে হবে বলে জানান। আব্দুর রব টাকা দেয়ার সামর্থ্য নেই- জানালে ইউপি সদস্য আব্দুল গনি তাকে বাদ দিয়ে ঘর বরাদ্দের তালিকায় অন্য এক ব্যক্তির নাম অন্তর্ভুক্ত করেন। পরে টাকা চাওয়ার বিষয়ে ইউনিয়ন পরিষদ চেয়ারম্যান আলহাজ হেদায়েতুল হকের কাছে অভিযোগ করেন আব্দুর রব। এতে ক্ষিপ্ত হয়ে আব্দুল গনি আব্দুর রবের বাড়ি গিয়ে হুমকি-ধমকি দেন।
অভিযোগের বিষয় ইউপি সদস্য আব্দুল গনি বলেন, ‘আমি তার কাছে কোনো টাকা চাইনি। সে আমার বিরুদ্ধে মিথ্যা টাকা চাওয়ার অভিযোগ করেছে। আমার ওয়ার্ডে যাকে আমার পছন্দ হবে তাকে ঘর দেব। আব্দুর রবকে আমার পছন্দ হয়নি। তাই তাকে ঘর দেই নাই।’
এ বিষয়ে পারভাঙ্গুড়া ইউনিয়ন পরিষদ চেয়ারম্যান আলহাজ হেদায়েতুল হক বলেন, হতদরিদ্র আব্দুর রবের সবগুলো গরু ডাকাতি হয়ে যাওয়ায় প্রচণ্ড অভাব অনটনে পড়ে। তাই তার দুরবস্থার কথা ভেবে একটি ঘর দেয়ার কথা বলা হয়েছিল। কিন্তু তাকে ঘর দিতে ওই ওয়ার্ডের ইউপি সদস্য বাধা দিচ্ছেন। ইউপি সদস্য আব্দুল গনিকে টাকা না দেয়ায় তিনি ঘর দিচ্ছেন না বলে আব্দুর রব অভিযোগ করেছেন। বিষয়টি খতিয়ে দেখে ব্যবস্থা নেয়া হবে।
ভাঙ্গুড়া উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা সৈয়দ আশরাফুজ্জামান বলেন, সরকারি নিয়মনীতি মেনে উপযুক্ত ব্যক্তিকে এই ঘর প্রদান করা হবে। এখানে ইউপি সদস্যের স্বেচ্ছাচারিতার কোনো সুযোগ নেই। বিষয়টি তদন্ত করে দেখা হবে। যিনি এই ঘর পাওয়ার অধিকার রাখেন তিনিই পাবেন।