× প্রচ্ছদ অনলাইনপ্রথম পাতাশেষের পাতাখেলাবিনোদনএক্সক্লুসিভভারতবিশ্বজমিনবাংলারজমিনদেশ বিদেশশিক্ষাঙ্গনরকমারিমত-মতান্তরবই থেকে নেয়া তথ্য প্রযুক্তি শরীর ও মন চলতে ফিরতে কলকাতা কথকতাসেরা চিঠিইতিহাস থেকেঅর্থনীতি
ঢাকা, ২৬ এপ্রিল ২০২৪, শুক্রবার , ১৩ বৈশাখ ১৪৩১ বঙ্গাব্দ, ১৭ শওয়াল ১৪৪৫ হিঃ

৫ দিন পর কন্যা শিশুটি পেলো মায়ের পরশ

বাংলারজমিন

পঞ্চগড় প্রতিনিধি
২৩ অক্টোবর ২০১৯, বুধবার

রাস্তায় ফেলে রেখে যাওয়া নবজাতক কন্যা শিশুটি ৫ দিন পর নিজ মায়ের কোলে আশ্রয় পাওয়াসহ দুধ পেয়েছে। প্রশাসনের তত্ত্বাবধানে হাসপাতালের শিশু পরিচর্যা কেন্দ্রে থাকা ফুটফুটে সুন্দর শিশুটিকে তার মা স্বামীর সঙ্গে দাম্পত্য কলহের জের ধরে গত বৃহস্পতিবার রাত ৮টার দিকে পঞ্চগড় পৌরসভাধীন কামাতপাড়া এলাকার রাস্তার ধারে ফেলে রেখে পালিয়ে যায়। পুলিশ ও আত্মীয়স্বজন অনেক খোঁজাখুঁজি করার পর নবজাতক শিশুটির মা রিমু আক্তারকে গত সোমবার পাওয়া যায়। এতে মিলেছে শিশুটির পুরো পরিচয়। শিশুটির নাম রাখা হয়েছে মোনালিসা। সন্ধ্যার আগে ওই নারী পঞ্চগড় আধুনিক সদর হাসপাতালের সিসিইউ ইউনিটে গিয়ে তার সন্তানকে কোলে তুলে নিয়ে আদর করেন। এ সময় খবর পেয়ে দেখতে যাওয়া শিশুটির মাকে বিভিন্ন শ্রেণি-পেশার মানুষ ধিক্কার জানায়। এর আগে ওই নারী ও তার বাবা আইবুল ইসলাম ও মা শিল্পী আক্তারকে পঞ্চগড় জেলা প্রশাসকের কার্যালয়ে জিজ্ঞাসাবাদ করা হয়।
প্রথমে শিশুটির বয়স এক মাস ধারণা করা হলেও তার মা রিমু জানায়, শিশুটির বয়স মাত্র ১৬ দিন। স্বামীর সঙ্গে দাম্পত্য কলহের জের ধরে শিশুটিকে দত্তক দিতে চেয়েছিলেন মা রিমু। কিন্তু কেউ না নেয়ায় তাকে রেখেই পালিয়ে যান বলে স্বীকার করেন। গত বৃহস্পতিবার কামাতপাড়া এলাকার অশোক চন্দ্র মোদকের বাড়ির সামনে ওই কন্যা শিশুটিকে পড়ে থাকতে দেখেন ওই এলাকার জুয়েল ও তার মা জুলেখা খাতুন। পরে তারা পুলিশকে বিষয়টি জানান। খবর পেয়ে পুলিশ শিশুটিকে উদ্ধার করে পঞ্চগড় আধুনিক সদর হাসপাতালে ভর্তি করে।

তাৎক্ষণিক শিশুটির মায়ের নাম জানা যায়নি এবং তাকে খুঁজে পাওয়া যাচ্ছিল না। হাসপাতালে সিসিইউতে পুলিশি পাহারায় ভর্তি ছিল শিশুটি। এর মধ্যে অনেক নিঃসন্তান দম্পতি শিশুটিকে দত্তক নেয়ার জন্য হাসপাতালে ভিড় করতে থাকে। জানা যায়, পঞ্চগড় সদর উপজেলার ভিতরগড় এলাকার আইবুল ইসলামের মেয়ে রিমু আক্তারের বিয়ে হয় পঞ্চগড় কামাতপাড়া এলাকার মাসুদের সঙ্গে। পরে পার্বতীপুরের এক ট্রাকচালকের সঙ্গে পালিয়ে যায় রিমু। রিমু গত ২রা অক্টোবর ওই কন্যা সন্তান প্রসব করে। তার আগে আরেকটি ছেলে সন্তান রয়েছে তার। কিন্তু ওই কন্যা সন্তান প্রসবের পর তা নিয়ে স্বামীর সঙ্গে দাম্পত্য কলহ দেখা দেয়। নিরুপায় হয়ে শিশুটিকে দত্তক দেয়ার উদ্দেশ্যে সাজিয়ে নিয়ে পঞ্চগড়ে আসে। পঞ্চগড় কামাতপাড়া এলাকার তার নানির বাড়িতে শিশুটিকে রেখে যেতে চাইলে তারা নিতে রাজি হয়নি। পরে ওই এলাকার পেয়ারা মজুমদারসহ আরো কয়েকটি বাড়িতে শিশুটিকে দত্তক দিতে ব্যর্থ হয়ে এক গলিতে ফেলে রেখে চলে যায় রিমু। শিশুটিকে  রেখে তার সাড়ে ৪ বছরের ছেলেকে নিয়ে ঠাকুরগাঁও রেলস্টেশনে ছিলেন। সেখান থেকে আটোয়ারী উপজেলার মালিগাঁও এলাকার আলেমা খাতুন নামের এক নারী তাকে নিজ বাড়িতে আশ্রয় দেন। পরে তারা বিষয়টি পুলিশকে জানালে পুলিশ ওই নারীকে উদ্ধার করে সোমবার পঞ্চগড় জেলা প্রশাসকের কাছে হাজির করে। পঞ্চগড় সদর থানার ওসি তদন্ত জামাল হোসেন বলেন, শিশুটির মায়ের কথাবার্তা অসংলগ্ন। আপাতত হাসপাতালে তার সন্তানকে দেখভাল করার দায়িত্ব ওই নারী ও তার বাবা-মাকে দেয়া হয়েছে। কয়েকদিন পুলিশি পাহারায় তার আচরণবিধি লক্ষ্য রাখা হবে।  
পঞ্চগড় জেলা প্রশাসক সাবিনা ইয়াসমিন বলেন, ওই শিশুটির মাকে পাওয়া গেছে। বর্তমানে স্বামীর সঙ্গে টানাপড়েনের জেরে ওই নারী শিশুটিকে রেখে যাওয়ার কঠিন সিদ্ধান্ত নেয় বলে আমরা জেনেছি। টেলিভিশন ও পত্রপত্রিকায় জেলা প্রশাসক তার সন্তানকে কোলে তুলে নেয়ার ছবি দেখে ওই নারীর বুকে মাতৃত্ব জেগে উঠেছে। সে এখন তার সন্তানকে ফিরে পেতে চায়। সে এখন তার সন্তানকে হাসপাতালে কয়েকদিন দেখাশুনা করবে। সেখানে বোঝা যাবে সে শিশুটি লালন পালনে যোগ্য কিনা। তারপর পরবর্তী সিদ্ধান্ত নেয়া হবে।
উল্লেখ্য, পঞ্চগড় আধুনিক সদর হাসপাতালের শিশু পরিচর্যা কেন্দ্রে গিয়ে দেখা যায়, আঁখি আক্তার নামে এক মা শিশুটিকে বুকের দুধ খাওয়াচ্ছেন। নিজের শিশু অসুস্থ হওয়ায় শিশুটি নিয়ে আঁখি সেখানে দুইদিন ধরে অবস্থান করছেন। হাসপাতালের সিনিয়র ও শিক্ষানবিশ নার্সরা শিশুটির সার্বক্ষণিক দেখাশোনা করছেন। সঙ্গে একজন মহিলা পুলিশও শিশুটির নিরাপত্তার বিষয়টি দেখভালের দায়িত্বে ছিলেন।
হাসপাতালে নিজের অসুস্থ শিশু নিয়ে আসা মা মুনমুন আক্তার বলেন, আমার বাচ্চা অসুস্থ। সে বুকের দুধ টেনে খেতে পারে না এজন্য হাসপাতালে ভর্তি করেছি। এখানে মা-ছাড়া ওই শিশুটিকেও মাঝে মধ্যে দুধ খাওয়াচ্ছি। এরকম একটি বাচ্চাকে দুধ খাওয়াতে পেরে ভালোই লাগছে। হাসপাতালের সিনিয়র স্টাফ নার্স ফাতেমা আক্তার বলেন, শিশুটি হাসপাতালে আমাদের নজরদারিতে ভালোই আছে। শিশু পরিচর্যা কেন্দ্রে প্রায় ২০ থেকে ২২ জন মা তাদের অসুস্থ শিশু নিয়ে এসেছেন। এখানে আসা মায়েরাই ওই শিশুটিকে ধারাবাহিকভাবে বুকের দুধ খাওয়াচ্ছেন। পঞ্চগড় আধুনিক সদর হাসপাতালের চিকিৎসা কর্মকর্তা মঈন খন্দকার বলেন, শিশুটিকে উদ্ধার করে আনার সময়ও সুস্থ ছিল এবং এখনো সুস্থ রয়েছে। হাসপাতালে রোগী নিয়ে আসা অন্যান্য মায়েদের মাধ্যমে শিশুটির খাবারের ব্যবস্থা করা হয়েছে। তবে হাসপাতালে যেহেতু অনেক রোগী থাকে সেক্ষেত্রে নানাদিক থেকে সংক্রমণের আশঙ্কা থাকে।
অবশ্যই দিতে হবে *
অবশ্যই দিতে হবে *
অন্যান্য খবর