× প্রচ্ছদ অনলাইনপ্রথম পাতাশেষের পাতাখেলাবিনোদনএক্সক্লুসিভভারতবিশ্বজমিনবাংলারজমিনদেশ বিদেশশিক্ষাঙ্গনরকমারিমত-মতান্তরবই থেকে নেয়া তথ্য প্রযুক্তি শরীর ও মন চলতে ফিরতে কলকাতা কথকতাসেরা চিঠিইতিহাস থেকেঅর্থনীতি
ঢাকা, ২৬ এপ্রিল ২০২৪, শুক্রবার , ১৩ বৈশাখ ১৪৩১ বঙ্গাব্দ, ১৭ শওয়াল ১৪৪৫ হিঃ

খাগড়াছড়িতে বিদ্যুৎ উন্নয়ন প্রকল্পে দুর্নীতি ও অনিয়ম

বাংলারজমিন

খাগড়াছড়ি প্রতিনিধি
২৩ অক্টোবর ২০১৯, বুধবার

তিন পার্বত্য জেলায় বিদ্যুৎ উন্নয়নে ব্যাপক উদ্যোগ নিয়েছে সরকার। এ লক্ষ্যে প্রায় সাড়ে পাঁচশ’ কোটি টাকা বরাদ্দ দিয়ে আলাদা প্রকল্প গঠন করা হয়েছে। আর এ প্রকল্পের নাম দেয়া হয়েছে ‘তিনটি পার্বত্য জেলায় বিদ্যুৎ বিতরণ ব্যবস্থার উন্নয়ন প্রকল্প’। ২০১৭ সালের জানুয়ারি মাসে এই বিদ্যুৎ উন্নয়ন প্রকল্পের কাজ শুরু হয়। যার মেয়াদ রয়েছে ২০১৯ সালের ডিসেম্বর পর্যন্ত। কিন্তু ২ বছর ১০ মাস গত হলেও এখনো ৩০ শতাংশ কাজ শেষ করতে পারেনি কর্তৃপক্ষ। এদিকে, যতটুকু কাজ সমাপ্ত করা হয়েছে সেখানেও রয়েছে ব্যাপক দুর্নীতি ও অনিয়মের অভিযোগ। পূর্বের তুলনায় বর্তমান যে বৈদ্যুতিক খুঁটিগুলো স্থাপন করা হচ্ছে তা অত্যন্ত নিম্নমানের এবং গুণগতমান সম্পন্ন নয়।
১৫ মিটারের বৈদ্যুতিক খুঁটি বোরিং করার কথা ৮ ফুট কিন্তু সেখানে করা হচ্ছে ৫-৬ ফুট। খুঁটির গায়ে দেয়া বোরিং চিহ্ন থেকে দুই-আড়াই ফুট কম বোরিং করা হচ্ছে। ফলে ঝড়-তুফানে বৈদ্যুতিক খুঁটি হেলে যাওয়ার ঝুঁকি রয়েছে। খুঁটির নিচে প্লেট দেয়ার নীতিমালা থাকলেও সব খুঁটির নিচে প্লেট দেয়া হচ্ছে না। যেকোনো খুঁটি একবার দেবে গেলে বৈদ্যুতিক তার ছিঁড়ে যাওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে। লাইন সরু না রেখে কিলোমিটার বাড়ানোর জন্য বিনা প্রয়োজনে এক একটি প্রধান সড়কে শতাধিক বার ৩৩ হাজার ভোল্টের বৈদ্যুতিক লাইন এপার-ওপার করা হচ্ছে। খাগড়াছড়ি জেলার সব ক’টি উপজেলার প্রধান সড়কে নজরে পড়বে এই খুঁটিগুলো। শুধু দীঘিনালার মধ্যবোয়ালখালী থেকে ডাঙ্গা বাজার পর্যন্ত ১৬ কিলোমিটার রাস্তায় প্রায় ৮০ বার বৈদ্যুতিক লাইন এপার-ওপার করা হয়েছে। অথচ এর আগে পুরাতন লাইন রাস্তার এপার ওপার করা হয়েছিল মাত্র ৫ বার। ৩৩ কেভি লাইন সুনির্দিষ্ট কারণ ছাড়া রাস্তা ক্রস করতে না পারার বিধান রয়েছে। কিন্তু অদৃশ্য কারণে মানা হয়নি সে নীতিমালা। যার কারণে প্রধান সড়কে বৈদ্যুতিক ঝুঁকি থেকেই যাচ্ছে। এদিকে, দুই বছর ১০ মাস শেষ হয়েছে। বাকি রয়েছে আর মাত্র ২ মাস। এই দীর্ঘ সময় পার হলেও কিছু বৈদ্যুতিক খুঁটি বোরিং আর কিছু ইনসুলেটরের কাজ ছাড়া তেমন কোনো কাজ শেষ করতে পারেনি কর্তৃপক্ষ। এখনও প্রায় ৭০ শতাংশ কাজ বাকি রয়েছে। এর মধ্যে খুঁটি বোরিং, ইনসুলেটর, তার সংযোজন, ফিটিং, আর্থিং তার, টানা ফুলবেন, ক্রস আর্ম, ৩ ফেজের ৮৫টি ট্রান্সফরমার ও সিংগেল ফেজের ৭২টি ট্রান্সফরমার কাজ শুরুই হয়নি।
দীঘিনালার বাসিন্দা আবদুল জলিল অভিযোগ করে বলেন, খুঁটি স্থাপনে প্রকল্পটিতে যথেষ্ট দুর্নীতি ও অনিয়ম হচ্ছে। খুঁটির নিচে দাগ কাটা অংশ পর্যন্ত মাটির নিচে পুঁতে রাখা এবং খুঁটির নিচে একটি প্লেট দেয়ার বিধান থাকলেও বাস্তবে তা করা হয়নি। অহেতুকভাবে খুঁটি রাস্তার এপার ওপার করা হচ্ছে। তা দ্রুত সংশোধন করা প্রয়োজন। সরেজমিন গেলে মাঝি পরিচয়দানকারী আরিফ বলেন, ৮ ফুট নয়, অফিস থেকে বলা হয়েছে ৭ ফুট করে গর্ত করতে। তবে আমরা অনেক সময় ৭ ফুট গর্ত করতে পারি না ৬ ফুট করেও গর্ত করতে হয়। জায়গা বুঝে কখনো কখনো আরো কম গর্তও করতে হয়। আসলে বাস্তব হলো খুঁটিতে যে দাগ আছে, সে দাগ সমান গর্ত করার নিয়ম। সেটা হলো ৮ফুট। খুঁটির নিচে প্লেট দিতে গেলে অনেক বড় গর্ত করতে হয়, অনেক সময়ের প্রয়োজন। আমরা সব গর্তে প্লেট দিই না। বিদ্যুৎ উন্নয়ন প্রকল্পের খাগড়াছড়ি জেলার মাঠ তত্ত্বাবধায়ক যত্ন মানিক চাকমা বলেন, আমি মানুষ একজন। সব সময় সব সাইটে থাকতে পারি না। কোথায় কি অনিয়ম হচ্ছে না হচ্ছে তা তথ্য পেলে আমরা সেটা দেখবো। তবে, পিডিবি থেকে আমরা যতটুকু মালামাল পেয়েছি, আমরা ততটুকু কাজ করেছি। পিডিবি সময় মত মালামাল দিতে পারেনি। এছাড়াও বড় বড় ঠিকাদাররা এখানে কখনো আসে না। ওনারা সাব কন্ট্রাক্ট দেয়, সাব কন্ট্রক্ট আবার সাব কন্ট্রাক্ট দেয়। এভাবে কাজ একটু স্লো হয়ে যায়। কোনো অনিয়ম হওয়ার তো কথা না। ভালো করে কাজ করতে সবাইকে বলা আছেচ। খাগড়াছড়ি পিডিবি নির্বাহী প্রকৌশলী কামাল উদ্দিন বলেন, বিদ্যুৎ উন্নয়ন প্রকল্প কাজ শেষ করে আমাদের বুঝিয়ে দিলে আমরা সেটা বুঝে নিব। অবশ্যই কাজ ভালোভাবে করতে হবে এবং নীতিমালা দেখে কাজ করতে হবে। কোথাও কমবেশি করা যাবে না। তারা যদি কাজে কোনো অনিয়ম বা গাফলতি করে সেটা আমাদের জন্য ক্ষতিকর। আমরা চাই, তারা আমাদের ভালমত কাজ বুঝিয়ে দিক, অনিয়ম হলে আমরা কাজ বুঝে নিব না। যেখানে প্রায় তিন বছরে ৩০ শতাংশ কাজ শেষ করা যায়নি, সেখানে শতভাগ কাজ শেষ করতে কত বছর সময় লাগবে তা নিয়ে এখন দুশ্চিন্তাতা। তবে, তিনটি পার্বত্য জেলায় বিদ্যুৎ বিতরণ ব্যবস্থার উন্নয়ন প্রকল্প্থের খাগড়াছড়ি জেলার দায়িত্বে থাকা নির্বাহী প্রকৌশলী শেখ সাকিব হোসেন কাজে ধীরগতির বিষয়ে বলেন, মালামাল সময়মতো না পাওয়ায় কাজে কিছুটা ব্যাঘাত ঘটেছে। তবুও আমরা অনেক কাজ করতে পেরেছি। এই মেয়াদে কাজ শেষ না হলে আরও এক বছরের জন্য কাজের সময়ের মেয়াদ বাড়ানো হবে। সব খুঁটির জন্য ৮ ফুট করে গর্ত করতে হবে, খুঁটির নিচে অবশ্যই প্লেট দিয়ে তা বোরিং করতে হবে। বিনা কারণে লাইন এপার-ওপার করা যাবে না।

কাজে কোন অনিয়ম সহ্য করা হবে না। আমরা অবশ্যই এর বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিব।
অবশ্যই দিতে হবে *
অবশ্যই দিতে হবে *
অন্যান্য খবর