গ্রামীণফোনের কাছে ১২ হাজার ৫৭৯ কোটি ৯৫ লাখ টাকা পাওনা আদায়ে বিটিআরসির আবেদনের শুনানি হবে আপিল বিভাগের নিয়মিত বেঞ্চে। গত সোমবার আপিল বিভাগের চেম্বার বিচারপতি মো. নূরুজ্জামান গ্রামীণফোনের কাছ থেকে পাওনা আদায়ে হাইকোর্টের দেয়া দুই মাসের নিষেধাজ্ঞা স্থগিতে সাড়া না দিয়ে আগামী ২৪শে অক্টোবর বৃহস্পতিবার আবেদনটি প্রধান বিচারপতি সৈয়দ মাহমুদ হোসেনের নেতৃত্বাধীন আপিল বিভাগে শুনানির জন্য রাখেন। ওই দিন বিটিআরসির আবেদনের পক্ষে ছিলেন আইনজীবী মাহবুবে আলম ও খন্দকার রেজা-ই রাকিব। রেজা-ই রাকিব সাংবাদিকদের বলেন, গ্রামীণফোনের কাছ থেকে প্রায় ১২ হাজার ৫৮০ কোটি টাকা পাওনা আদায়ে হাইকোর্টের দেয়া দুই মাসের নিষেধাজ্ঞার আদেশ স্থগিত চেয়ে চেম্বার আদালতে আবেদন করেছিলাম। আবেদনটি না শুনেই চেম্বার বিচারপতি আগামী ২৪শে অক্টোবর আপিল বিভাগের নিয়মিত বেঞ্চে শুনানির জন্য পাঠিয়েছেন। এর আগে, গত ১৭ ই অক্টোবর গ্রামীণফোনের আপিলে বিচারপতি একেএম আবদুল হাকিম ও বিচারপতি ফাতেমা নজীবের সমন্বয়ে গঠিত হাইকোর্ট বেঞ্চ গ্রামীণফোনের কাছে বিটিআরসির ১২ হাজার ৫শ ৮০ কোটি টাকা পাওনা আদায়ের ওপর দুই মাসের অন্তবর্তীকালীন নিষেধাজ্ঞা দেয়। আগামী ৫ই নভেম্বর গ্রামীণের আপিল আবেদনটি শুনানির জন্য রেখেছে হাইকোর্টের এই বেঞ্চ।
গ্রামীণফোনের কাছে ১২ হাজার ৫৭৯ কোটি ৯৫ লাখ টাকা এবং রবির কাছে ৮৬৭ কোটি ২৩ লাখ টাকা পাওনা রয়েছে বলে দাবি করে আসছে বিটিআরসি।
কয়েক দফা চেষ্টায় সেই টাকা আদায় করতে না পেরে লাইসেন্স বাতিলের হুমকি দিয়ে নোটিশ পাঠানো হয়েছে দুই অপারেটরকে। বিটিআরসির দাবি করা টাকার ওই অঙ্ক নিয়ে আপত্তি রয়েছে গ্রামীণফোন ও রবির। সালিশের মাধ্যমে বিষয়টির নিষ্পত্তিতে রাজি না হওয়ায় আদালতের দ্বারস্থ হয় দুই অপারেটর। পরে অর্থমন্ত্রী আ হ ম মুস্তফা কামালের উদ্যোগে বিষয়টি নিয়ে সমাধানে পৌঁছাতে গ্রামীণফোন ও বিটিআরসির কর্মকর্তাদের মধ্যে দুই দফা বৈঠকও করেন। এরপর নিম্ন আদালতে টাইটেল স্যুট (স্বত্তের মামলা) মামলা করে গ্রামীণফোন। ওই টাইটেল স্যুট মামলাটি আদালত গ্রহণ করে। ওই টাইটেল স্যুটের অধীনেই গ্রামীণফোন বিটিআরসির পাওনা আদায়ের ওপর অস্থায়ী নিষেধাজ্ঞার আবেদন করে, যা গত ২৮শে অগাস্ট নিম্ন আদালত খারিজ করে দেয়। নিম্ন আদালতের খারিজ আদেশের বিরুদ্ধে পরে হাইকোর্টে আপিল করে গ্রামীণফোন। সে আপিলটি গ্রহণ করেই বিটিআরসির পাওনা আদায়ের ওপর দুই মাসের নিষেধাজ্ঞা দিয়ে আপিলটি শুনানির জন্য রাখেন হাইকোর্ট। এদিকে, বেসরকারি মোবাইল অপারেটর রবি আজিয়াটার কোম্পানির কাছে বিটিআরসি’র ৮৬৭ কোটি ২৩ লাখ টাকা পাওনা আদায়ের ওপর হাইকোর্টে নিষেধাজ্ঞা চেয়ে করা আবেদনের ওপর আদেশ পিছিয়েছে। গতকাল বিচারপতি মামনুন রহমান ও বিচারপতি খিজির হায়াতের সমন্বয়ে গঠিত হাইকোর্ট বেঞ্চ আদেশের জন্য আগামীকাল বৃহস্পতিবার দিন ধার্য করেছেন। রবির আইনজীবী ব্যারিস্টার কাজী এরশাদুল আলম বলেন, গত রোববার হাইকোর্ট আমাদের আপিল শুনানির জন্য গ্রহণ করে নিষেধাজ্ঞার আবেদনের ওপর আদেশের জন্য মঙ্গলবার দিন ঠিক করেছিলেন। এখন এই আদেশের দিন পিছিয়ে কাল বৃহস্পতিবার দিন নির্ধারণ করেছে। গত বছরের ৩১ জুলাই ৮৬৭ কোটি ২৩ লাখ টাকা দাবি করে বিটিআরসি রবিকে চিঠি দেয়। পরে রবি ওই চিঠির বিষয়ে নিম্ন আদালতে টাইটেল স্যুট (মামলা) করে। একই সঙ্গে, ওই মামলা নিষ্পত্তি না হওয়া পর্যন্ত অর্থ আদায়ের ওপর অস্থায়ী নিষেধাজ্ঞা চেয়ে আবেদন করে। পরে নিম্ন আদালত রবির অস্থায়ী নিষেধাজ্ঞার আবেদন খারিজ করে দেন। ওই আদেশের বিরুদ্ধে হাইকোর্টে আপিল করে রবি।