নারায়ণগঞ্জে রেলওয়ের জমি পরিদর্শন করতে এসে বেদখল হয়ে যাওয়া জমির বিষয়ে ক্ষোভ প্রকাশ করেছেন রেলমন্ত্রী নুরুল ইসলাম সুজন। গতকাল দুপুরে মন্ত্রী নারায়ণগঞ্জ নগরে থাকা রেলওয়ের জমি পরিদর্শন করেন। ওই সময় নগরের দেওভোগে নাসিক কর্তৃপক্ষ কর্তৃক রেলের জমি দখল করে গড়ে তোলা একটি পার্কের কাজ বন্ধ করে দেন এবং সেখানে কর্মরত ২১ শ্রমিককে আটকের নির্দেশ দেন। পরে মন্ত্রীর নির্দেশেই বিকেলে ১৯ শ্রমিককে ছেড়ে দিয়ে ২ জনকে গ্রেপ্তার দেখানো হয়। বাকি ২ জনকে গ্রেপ্তার দেখিয়ে নিয়মিত মামলার প্রস্তুতি চলছে। রেলের জমি পরিদর্শনকালে রেলমন্ত্রী নুরুল ইসলাম সুজন বলেন, এসব সম্পত্তির মালিক রেলওয়ে। এখানে অন্য কেউ কাজ করতে চাইলে কিংবা জমি নিতে চাইলে নিয়ম আছে। অবশ্যই সেটা মানতে হবে।
আমাদের জমি আমাদের দখলে রাখতে যা ব্যবস্থা করার দরকার তা আমরা করবো। সেখানে গায়ের জোরে কোন কাজ করতে দেয়া হবে না। মন্ত্রী ওই সময়ে রেলওয়ের দখলকৃত জায়গা পরিদর্শন করে ক্ষোভ প্রকাশ করেন। সেই সঙ্গে সেখানে থাকা রেলওয়ের স্টাফ কোয়ার্টার ভেঙে ফেলায় চরম ক্ষোভ প্রকাশ করেন তিনি। তখন মন্ত্রীর নির্দেশে কাজ বন্ধ করে দেয়া হয়। মন্ত্রীর সঙ্গে তখন জেলা পরিষদের চেয়ারম্যান ও মহানগর আওয়ামী লীগের সভাপতি আনোয়ার হোসেন, জেলা আওয়ামী লীগের যুগ্ম সম্পাদক জাহাঙ্গীর আলম প্রমুখ উপস্থিত ছিলেন। এর আগে রেলপথ মন্ত্রণালয় সম্পর্কিত সংসদীয় স্থায়ী কমিটির বৈঠকে নারায়ণগঞ্জে রেলওয়ের নিজস্ব জমি ও স্টাফ কোয়ার্টার দখল করে নেয়ার ব্যাপারে নারায়ণগঞ্জ সিটি করপোরেশনের তীব্র সমালোচনা ও রক্ষাভ প্রকাশ করা হয়েছে। মন্ত্রী গতকাল দুপুরে নারায়ণগঞ্জে এসে নারায়ণগঞ্জ রেলস্টেশন ও ২ নম্বর রেলগেট এলাকায় দখলমুক্ত করা রেলের জমি পরিদর্শন করেন। এরপর নগরের দেওভোগে রেলের জমিতে নাসিকের গড়ে তোলা নগর পার্ক, জিমখানা কলোনি, জিমখানা আলাউদ্দিন খান স্টেডিয়াম ও এর আশপাশের এলাকাগুলো পরিদর্শন করেন। ওই সময় মন্ত্রী বলেন, এখানে বাংলাদেশ রেলওয়ের ৩৩ একর জমি রয়েছে। এখানে কিছু ঘরবাড়ি গড়ে উঠেছে। পাশাপাশি কিছু কোয়ার্টার রয়েছে আমাদের। এ পার্ক কারা করেছে আমরা তা জানি না। আজকে আমরা রেলওয়ের জমিগুলো দেখতে এসেছি। আমাদের জমি কাউকে অবৈধভাবে দখল করতে দেয়া হবে না। রেলওয়ের সব অবৈধ জায়গাগুলো উদ্ধার করে রেলওয়ের নিয়ন্ত্রণে আনা হবে। রেলের কোয়াটার ভেঙে ফেলায় ইতিমধ্যে এব্যাপারে প্রায় সাড়ে ৪ কোটি টাকা ক্ষতি হয়েছে বলে দাবি করে নারায়ণগঞ্জ সদর মডেল থানা ও ঢাকা কমলাপুর রেলওয়ে থানায় পৃথক দুটি অভিযোগ করেছে রেলওয়ে কর্তৃপক্ষ। মামলার অভিযোগে বলা হয়, সিটি কর্পোরেশন কর্তৃপক্ষ অবশিষ্ট কোয়ার্টারগুলোও ভাঙ্গার পাঁয়তারা করছে বলে আশংকা করা হয়। দখলকারী বহিরাগতরা নারায়ণগঞ্জ সিটি মেয়র সেলিনা হায়াৎ আইভীর কর্মী বলে রেল কর্মকর্তা দাবি করছেন।
জানা গেছে, নগরীর পুরাতন জিমখানা রোডে রেলওয়ে কলোনির এ স্থানটিতে অর্ধশত বছরের বেশি সময় ধরে রেল কর্মচারীগণ বসবাস করতেন। গত ৫ই অক্টোবর দুপুরে কলোনি ভাঙতে এসকেভেটরসহ সিটি করপোরেশনের কর্মকর্তা ও কর্মচারীরা ছাড়াও প্রায় ৫০ থেকে ৬০ জন বহিরাগতরা অবস্থান নেন।
সেখানে ৩২টি বাসা ও বাড়ীতে থাকা লোকজন কিছু বুঝে উঠার আগেই শুরু হয় ভাঙচুর ও দখল কার্যক্রম। এসময় বসবাসকারীরা তাদের জিনিসপত্রও ঘর থেকে বের করতে পারেননি। এমনকি রক্ষা পায়নি সেখানে থাকা শিক্ষার্থীদের বই-পুস্তকও। এক কাপড়েই বের হতে হয়েছে সেখানে থাকা প্রায় অর্ধশত পরিবারকে। এর আগে রেলমন্ত্রী নগরীর চাষাঢ়ায় রেলস্টেশন সংলগ্ন ডাবল রেললাইন প্রকল্পের চাইনিজ ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠানের অস্থায়ী ক্যাম্প পরিদর্শন করেন এবং কাজের অগ্রগতি সম্পর্কে খোঁজ খবর নেন। এসময় কাজের ধীরগতির জন্য অসন্তোষ প্রকাশ করে দ্রুত সময়ের মধ্যে সেগুলো সম্পন্ন করতে রেলের ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তাদের নির্দেশ দেন তিনি। পরে মন্ত্রী শহরের কালিরবাজার এক নম্বর রেলস্টেশন পরিদর্শন করে এটি আধুনিকায়ন করার পরিকল্পনার কথাও সাংবাদিকদের জানান। ওই সময় মন্ত্রীর সঙ্গে উপস্থিত ছিলেন রেলওয়ের মহাপরিচালক সামসুজ্জান, অতিরিক্ত মহা-পরিচালক (অবকাঠামো) শহীদুল ইসলাম, বিভাগীয় ব্যবস্থাপনা পরিচালক আতিকুর রহমান, বিভাগীয় ভূমি কর্মকর্তা নজরুল ইসলাম, বিভাগীয় নির্বাহী প্রকৌশলী মোস্তাফিজুর রহমানসহ অন্যান্য কর্মকর্তারা। এ ব্যাপারে নাসিক মেয়র ডা. সেলিনা হায়াত আইভীর সঙ্গে যোগাযোগ করা হলে তিনি এ বিষয়ে এখনই কোন মন্তব্য করতে রাজি হননি।