পশ্চিমবঙ্গের হাবড়ায় দুই বাংলাদেশি ব্যবসায়ীকে অপহরণ করে মুক্তিপণ আদায়ের ঘটনার তদন্ত শুরু করেছে পুলিশ। পুলিশের অনুমান, অপহরণের সঙ্গে যুক্ত রয়েছে একটি আন্তর্জাতিক চক্র। বাংলাদেশের ফরিদপুরের সদরপুর উপজেলার কাপড়ের ব্যবসায়ী বসির মিঞা এক বন্ধুকে নিয়ে ব্যবসার কাজেই কলকাতায় এসেছিলেন। ব্যবসার সূত্রেই তাঁর সঙ্গে কলকাতায় আলাপ হয়েছিল সেলিম নামে এক ব্যক্তির। সেই ব্যক্তি তাঁদের হাবড়ায় নিয়ে গেলে সেখানে কয়েকজন দুষ্কৃতিকারী তাদের অপহরণ করে ৩০ লক্ষ রূপি মুক্তিপণ দাবি করে। দুইদিন অপহৃতদের হেফাজতে থাকার পর ৬ লক্ষ রুপি মুক্তিপণ দিয়ে কোনওরকমে পালিয়ে আসেন তারা। গত বুধবার কলকাতায় ফিরে বাংলাদেশি ব্যবসায়ী এন্টালি থানায় অভিযোগ জানিয়েছেন। তিনি অভিযোগ করেছেন, শুধু মুক্তিপণই নয়, তার সঙ্গে থাকা ৭৫০০ মার্কিন ডলার এবং ৪৫ হাজার টাকা নিয়েছে দুষ্কৃতিরা। বসির তদন্তকারীদের জানিয়েছেন, ৭ই নভেম্বর বাংলাদেশি বন্ধু ইলিয়াসকে সঙ্গে নিয়ে সেলিমের সঙ্গে দেখা করেন তিনি।
সেলিম তাঁদের ব্যবসার প্রয়োজনে হাবরায় এক আত্মীয়ের বাড়িতে যাওয়ার প্রস্তাব দিয়েছিল। শিয়ালদহ স্টেশনের কাছে তিনজন খাওয়াদাওয়াও করেন। সেখান থেকে সেলিমের সঙ্গে ট্রেনে চেপে তাঁরা রওনা হন হাবরার উদ্দেশে। অভিযোগ, হাবরাতে আগে থেকেই অপেক্ষা করছিল সেলিমের দলবল। তাঁরা পৌঁছতেই একটি গাড়িতে তোলা হয় তাঁদের। গাড়িতে তাঁদের চোখ ও হাত-পা বেঁধে দেওয়া হয়। সেখান থেকে কোনও অজ্ঞাত জায়গায় নিয়ে যাওয়া হয় বসির এবং ইলিয়াসকে। সেখানে তাঁদের আটকে রেখে প্রাণে মারার হুমকি দেওয়া হয়। অপহরণকারী প্রত্যেকের কাছেই আগ্নেয়াস্ত্র ছিল।পঞ্চাশ লাখ টাকা চাওয়া হয় মুক্তিপণ হিসাবে। বসির অপহরণকারীদের বলে তার কাছে এত টাকা নেই। তখন অপহরণকারীরা বসিরের মোবাইল থেকে বাংলাদেশে তার বাবা সিকান্দারকে ফোন করে টাকা চায়। সূত্রের খবর, বাংলাদেশ থেকেই টাকার ব্যবস্থা করা হয় এবং রাত ভোর হতেই অপহরণকারীদের কাছে ৬ লাখ টাকা পৌঁছে দেওয়া হয়। সেই টাকা পাওয়ার পর অপহরণকারীরা সীমান্তে লোক পারাপার করার দালালদের হাতে দু’জনকে তুলে দিয়ে সীমান্ত পার করে বাংলাদেশে পাঠিয়ে দিতে বলে।
পুলিশ সূত্রে খবর, ওই দালালদের বসির ভয় দেখায় যে তারা বিএসএফকে সব কথা বলে দেবে। তখন দালালরা তাদের ছেড়ে দিয়েছে। ট্রেনে চেপেই কলকাতায় ফিরে এসে তাঁরা এন্টালি থানায় অভিযোগ দায়ের করেছেন। পুলিশ অপহরণের মামলা শুরু করেছে। পুলিশের মতে, এই ঘটনার পিছনে একটি বড় চক্র রয়েছে। সেই চক্রে ভারত এবং বাংলাদেশের দুষ্কৃতীরা যুক্ত রয়েছে। পুলিশ সূত্রে খবর, বেশ কিছু সূত্র পাওয়া গিয়েছে। সেই অনুযায়ী অপরাধীদের ধরার চেষ্টা চলছে।