দরজায় কেউ নক করলেই ‘বাবা বাবা’ বলে চিৎকার করতে করতে এগিয়ে যায় ১১ মাস বয়সী শিশু কান্তাশ্রীরী। ঘুমের ঘোরে একইভাবে ডেকে ওঠে। মায়ের ফোনে কল এলেই ফোন কেড়ে নিয়ে আধো আধো ভাষায় ‘বাবা বাবা’ বলে ডাকতে থাকে। বাবা আসবে ভেবে প্রতিদিন বাড়ির রাস্তার দিকে তাকিয়ে থাকে অবোধ শিশুটি। কিন্তু তার বাবা আর ফিরে না।
এই সন্তানের পিতা ও নিজের স্বামী কমল কান্তির সন্ধান পেতে গতকাল সকালে জাতীয় প্রেসক্লাবের সামনে মানবন্ধনে দাঁড়িয়েছিলেন অনিতা রানী। বাংলাদেশ হিন্দু পরিষদের উদ্যোগে আয়োজিত মানববন্ধনে মেয়ে কান্তাশ্রীরীকে কোলে নিয়ে দাঁড়িয়ে থাকা অনিতা কেঁদে কেঁদে স্বামীর সন্ধান দাবি করেন। বাংলাদেশ হিন্দু পরিষদের সভাপতি দীপঙ্কর শিকদার দিপুর সভাপতিত্বে মানববন্ধনে কমল কান্তির বাবা, স্ত্রী, সন্তান ছাড়াও উপস্থিত ছিলেন, বাংলাদেশ হিন্দু পরিষদের মুখপাত্র অ্যাডভোকেট সুমন কুমার রায়, সহ-সভাপতি ড. বিপ্লব ভট্টাচার্য, অসীম দেবনাথ প্রমুখ। নিখোঁজ কমল কান্তির বাড়ি বরগুনার বামনা থানা এলাকায়।
ওই এলাকার মা ব্রিকসের
ম্যানেজার কমল কান্তি গত ২১শে সেপ্টেম্বর ঢাকার উদ্দেশ্যে বাড়ি থেকে বের হন। বের হওয়ার আগে শিশু কন্যাকে নিজ হাতে খাবার খাওয়ান তিনি। কোলে নিয়ে আদর করে বাড়ি থেকে বের হয়ে যান। কথা ছিলো ঢাকায় পৌঁছেই কল দিবেন। মেয়ের সঙ্গে কথা বলবেন। তারপর থেকেই শুধুই অপেক্ষা। কত কল আসে ফোনে কিন্তু কমল কান্তির কল আসে না। স্ত্রী, সন্তানসহ স্বজনরা অপেক্ষায় থাকে কিন্তু কমল কান্তি আর ফিরেন না। মানববন্ধনে অনিতা রানী বলেন, কমল কান্তি ২১শে সেপ্টেম্বর ঢাকার পথে রওনা হওয়ার পর আর তার সঙ্গে কোনো যোগাযোগ হয়নি। তাকে গুম করা হয়েছে। আমি আমার স্বামীর সন্ধান চাই। সেইসঙ্গে ওকে গুম করার পেছনে যারা জড়িত, তাদের শাস্তি চাই। এ বিষয়ে প্রধানমন্ত্রীর হস্তক্ষেপ কামনা করেন এই নারী।
কমল কান্তির গুম প্রসঙ্গে তার বাবা বলেন, শত্রুতার জের ধরে আমার ছেলেকে গুম করা হয়েছে। পরে অন্য একটা লাশ দেখিয়ে তারা বলে, ঢাকা যাওয়ার পথে মাওয়া ঘাটে ডুবে মারা গেছে কমল। ওরা যে ছবি দেখিয়েছে, ওই ছবির সঙ্গে আমার ছেলের কোনো মিল নেই।
কমল কান্তির সন্ধান দাবি করে বাংলাদেশ হিন্দু পরিষদের পরিষদের সাধারণ সম্পাদক সাজন কুমার মিশ্র বলেন, বাংলাদেশে যেন সংখ্যালঘু সমপ্রদায়ের ব্যক্তিরা নিরাপদে বসবাস করতে পারে, সেদিকে সরকারকে দৃষ্টি রাখতে হবে। সংখ্যালঘুদের সুরক্ষায় আওয়ামী লীগের নির্বাচনি ইশতেহার বাস্তবায়নের অনুরোধ জানান।