× প্রচ্ছদ অনলাইনপ্রথম পাতাশেষের পাতাখেলাবিনোদনএক্সক্লুসিভভারতবিশ্বজমিনবাংলারজমিনদেশ বিদেশশিক্ষাঙ্গনরকমারিমত-মতান্তরবই থেকে নেয়া তথ্য প্রযুক্তি শরীর ও মন চলতে ফিরতে কলকাতা কথকতাসেরা চিঠিইতিহাস থেকেঅর্থনীতি
ঢাকা, ১৮ এপ্রিল ২০২৪, বৃহস্পতিবার , ৫ বৈশাখ ১৪৩১ বঙ্গাব্দ, ৯ শওয়াল ১৪৪৫ হিঃ

ইরাক-আফগানিস্তানে যুদ্ধাপরাধ ধামাচাপা দেয়ার অভিযোগ বৃটিশ সরকার ও সেনাবাহিনীর বিরুদ্ধে

বিশ্বজমিন

মানবজমিন ডেস্ক
(৪ বছর আগে) নভেম্বর ১৭, ২০১৯, রবিবার, ১০:৫৬ পূর্বাহ্ন

আফগানিস্তান ও ইরাকে যুদ্ধাপরাধকে ধামাচাপা দেয়ার জন্য অভিযোগ করা হয়েছে বৃটিশ সরকার ও সেনাবাহিনীর বিরুদ্ধে। এ দুটি দেশে তারা বেসামরিক লোকজনকে হত্যার বিষয়টি ধামাচাপা দিয়েছে বলে এ অভিযোগ করা হয়েছে। এ নিয়ে তদন্তের অংশ হিসেবে বৃটিশ ১১ জন গোয়েন্দার সঙ্গে কথা বলেছে বিবিসি প্যানোরমা এবং দ্য সানডে টাইমস। ওই গোয়েন্দারা বলেছেন, যুদ্ধাপরাধের বিশ্বাসযোগ্য তথ্যপ্রমাণ তারা পেয়েছেন। এ বিষয়ে সেনা সদস্যদের বিচার হওয়া উচিত বলে মন্তব্য করেছেন বিভিন্ন জন। তবে ধামাচাপা দেয়ার এ ধরনের অপ্রমাণিত অভিযোগ প্রত্যাখ্যান করেছে বৃটিশ প্রতিরক্ষা মন্ত্রণালয়। এ খবর দিয়েছে অনলাইন বিবিসি।

এতে বলা হয়েছে, নতুন এসব তথ্যপ্রমাণ এসেছে ইরাক হিস্টরিক অ্যালিগেশনস টিম (আইএইচএটি)-এর ভিতর থেকে।
ইরাক আগ্রাসনের সময় বৃটিশ সেনাবাহিনী যেসব যুদ্ধাপরাধ ঘটিয়েছে তা অনুসন্ধান করেছে এই আইএইচএটি। এ ছাড়া আফগানিস্তানে একই অভিযোগ তদন্ত করেছে অপারেশন নর্থমুর। তাদের কাছ থেকে পাওয়া তথ্যে বলা হয়েছে, যুদ্ধাপরাধের তথ্যপ্রমাণ রয়েছে।
 
এখানে উল্লেখ্য যে, ফিল শিনার নামে একজন আইনজীবী আইএইচএটি’র কাছে কমপক্ষে ১০০০ এমন অভিযোগ উত্থাপন করেছিলেন। কিন্তু অভিযোগ ওঠে যে, তিনি ইরাকে ক্লায়েন্ট পেতে দালালদের অর্থ দিয়েছেন। এরপর থেকে তার সলিসিটরের সুবিধা বাতিল করা হয়। এ অভিযোগ ওঠার পরই সরকার আইএইচএটি এবং অপারেশন নর্থমুর বন্ধ করে দেয়ার সিদ্ধান্ত নেয়। কিন্তু সাবেক এ দুটি গোয়েন্দা সংস্থার কর্মকর্তারা বলেছেন, ফৌজদারি অপরাধকে ধামাচাপা দিতে ফিল শিনারের কর্মকান্ডকে একটি অজুহাত হিসেবে ব্যবহার করা হয়েছে। আইএইচএটি অথবা অপারেশন নর্থমুর যেসব অভিযোগের তদন্ত করেছে তার একটিরও বিচার হয় নি।

বিবিসি প্যানোরমাকে আইএইচএটির একজন গোয়েন্দা বলেছেন, কোনো সেনা সদস্যের বিরুদ্ধেই বিচার করার কোনো মানসিকতা ছিল না প্রতিরক্ষা মন্ত্রণালয়ের। আরেকজন গোয়েন্দা বলেছেন, যুদ্ধাপরাধের শিকারে যারা পরিণত হয়েছেন তাদেরকে হতাশায় ফেলে দেয়া হয়েছে। আমি এক্ষেত্রে ন্যক্কারজনক শব্দটি ব্যবহার করবো। ওইসব নির্যাতিত পরিবারগুলোর বেদনাকে আমি অনুভব করি। কারণ, তারা ন্যায়বিচার পান নি। কিভাবে আপনি নিজে একজন বৃটিশ হয়ে মাথা উঁচু করতে পারেন?

যুদ্ধাপরাধের এমন অনেক অভিযোগের মধ্যে কয়েকটির তথ্যপ্রমাণ নতুন করে যাচাই করেছে বিবিসি প্যানোরমা। এমন একটি অভিযোগের তদন্ত করেছিল আইএইচএটি। এটা ছিল ২০০৩ সালের ঘটনা। ওই সময়ে ইরাকের বসরায় টহল দেয়ার সময় একজন বৃটিশ সেনা সদস্য ইরাকি একজন পুলিশ কর্মকর্তাকে গুলি করে হত্যা করে। ওই পুলিশ সদস্যের নাম রাইদ আল মুসাবি। তিনি বাড়ি থেকে বের হওয়ার পরই তাকে গুলি করা হয়। পরে তিনি মারা যান। ওই সময়কার বৃটিশ সেনাবাহিনীর কমান্ডিং অফিসার মেজর ক্রিস্টোফার সুস-ফ্রাঙ্কসেন এই হত্যাকান্ডের তদন্ত করেছিলেন। ২৪ ঘন্টার মধ্যে তিনি রিপোর্ট দেন যে, পুলিশ সদস্য রাইদ আল মুসাবিকে আইন মেনেই গুলি করা হয়েছে। কারণ, ইরাকের এই পুলিশ কর্মকর্তা প্রথমে গুলি করেছিলেন। তার ফলেই আত্মরক্ষার্থে বৃটিশ সেনারা গুলি চালায়। তার রিপোর্টে আরো বলা হয়, এই গুলির ঘটনা প্রত্যক্ষ করেন আরেকজন বৃটিশ সেনা। তিনি নিশ্চিত করেছেন যে, ইরাকি ওই পুলিশ কর্মকর্তা প্রথমে গুলি করেছিলেন।

দু’বছর ধরে এ অভিযোগের তদন্ত করেছেন আইএইচএটির গোয়েন্দারা। এ সময়ে তারা বৃটিশ ৮০ জন সেনা সদস্যের সাক্ষাতকার নিয়েছে। এর মধ্যে রয়েছেন প্রত্যক্ষদর্শী হিসেবে সাক্ষ্য দেয়া বৃটিশ সেই সেনা সদস্য। কিন্তু তিনি আইএইচএটির গোয়েন্দাদের বলেছেন, তিনি ঘটনাস্থলেই ছিলেন না। আইএইচএটির কাছে দেয়া বিবৃতিতে ওই সেনা সদস্য সরাসরি মেজর সুস-ফ্রাঙ্কসেনের বর্ণনার বিপরীত মন্তব্য করেছেন। তিনি বলেছেন, ওই রিপোর্ট ত্রুটিপূর্ণ। এতে এমনটা বলা হয়েছে যে, আমি একজন প্রত্যক্ষদর্শী ছিলাম। আসলে এ কথাটি সত্য নয়।

তিনি বলেছেন, মাত্র একটি গুলির শব্দ তিনি শুনতে পেয়েছেন। যেহেতু মাত্র একটি গুলির শব্দ হয়েছে, তার মানে হলো ওই গুলিটি ছুড়েছে বৃটিশ সেনারা। এই গুলিতেই নিহত হয়েছেন ইরাকি ওই পুলিশ কর্মকর্তা। অর্থাৎ ইরাকি পুলিশ কর্মকর্তা রাইদ আল মুসাবি আদৌ গুলি করেন নি। আইএইচএটিকে দেয়া অন্য প্রত্যাক্ষদর্শীরাও একই রকম সাক্ষ্য দিয়েছেন।

গোয়েন্দারা রিপোর্টে বলেছেন, ইরাকি পুলিশ কর্মকর্তা রাইদ আল মুসাবিকে হত্যাকারী সেনা সদস্যের বিচার হওয়া উচিত। একই সঙ্গে মূল ঘটনাকে ধামাচাপা দেয়ার জন্য মেজর সুস ফ্রাঙ্কসেনকে অভিযুক্ত করা উচিত। কিন্তু সেনা প্রসিকিউটররা কাউকে কাঠগড়ায় দাঁড় করান নি। জবাবে মেজর সুস ফ্রাঙ্কসেনের আইনজীবী বলেছেন, তার মক্কেল আইএইচএটির অভিযোগের বিষয়টি দেখেন নি। ফলে তারা যেসব তথ্যপ্রমাণ দিয়েছে, সে বিষয়ে কোনো মন্তব্য করবেন না।

অন্যদিকে ২০১৪ সালে অপারেশন নর্থমুর গঠন করে সরকার। তারা আইন বহির্ভূত ৫২টি হত্যার অভিযোগ আমলে নেয়। তাদের কাজ ছিল আফগানিস্তানে যুদ্ধাপরাধ সংঘটনের অভিযোগ তদন্ত করা। কিন্তু রয়েল মিলিটারি পুলিশের গোয়েন্দারা আফগানিস্তানের মূল প্রত্যক্ষদর্শীদের সাক্ষাতকার নেয়ার সুযোগ পাওয়ার আগেই সরকার বন্ধ ঘোষণা করে অপারেশন নর্থমুর। এর একজন গোয়েন্দা বলেছেন, যতক্ষণ উভয় পক্ষের সঙ্গে কথা বলতে পারবো না, ততক্ষণ কোনো উপসংহার লিখতে পারবো না। যদি বৃটেনের বর্ণনাকেই প্রাধান্য দিয়ে একটি রিপোর্ট দিয়ে দিই তাহলে সেটা কেমন তদন্ত হবে? আমার দৃষ্টিভঙ্গি হলো ওইসব হত্যার প্রতিটিই তদন্ত করে দেখা উচিত এবং এমন দাবি রাখে। এরপর আইন অনুযায়ী এ অভিযোগের বিষয়ে ব্যবস্থা নেয়া উচিত।

তবে বৃটিশ প্রতিরক্ষা মন্ত্রণালয় বলেছে, সামরিক অপারেশনগুলো আইন মেনেই সম্পন্ন হয়। অভিযোগের বিষয়ে বিস্তৃত তদন্ত হয়েছে। একজন মুখপাত্র বিবিসিকে বলেছেন, তদন্ত এবং বিচার করার সিদ্ধান্তের বিষয়টি সম্পূর্ণত স্বাধীন। এর সঙ্গে প্রতিরক্ষা মন্ত্রণালয়ের কোনো প্রভাব নেই এতে। যেসব অভিযোগ এসেছে তা সতর্কতার সঙ্গে বিবেচনা করে নিরপেক্ষ সার্ভিস প্রসিকিউটিং অথরিটি। তারা সিদ্ধান্ত নিয়েছে বিচার না করার। বিবিসির অভিযোগ সার্ভিস পুলিশ এবং সার্ভিস প্রসিকিউটিং অথরিটির কাছে পাঠিয়ে দেয়া হয়েছে।
অবশ্যই দিতে হবে *
অবশ্যই দিতে হবে *
অন্যান্য খবর