কুমিল্লার লালমাই উপজেলার পেরুল উত্তরের উৎসবপদুয়া গ্রামস্থ ঢাকা-চট্টগ্রাম রেল সড়কের পাশ থেকে ২০১৬ সালের ১০ই অক্টোবর রাতে একই উপজেলার ভুলইন দক্ষিণ ইউনিয়নের গোলাচোঁ গ্রামের সিরাজুল হকের ছেলে শরিফুল ইসলাম শরিফের (২২) লাশ উদ্ধার করে লাকসাম রেলওয়ে থানা পুলিশ। ট্রেনের ধাক্কায় মারা গেছে উল্লেখ করে রেলওয়ে থানা পুলিশ একটি অপমৃত্যুর মামলা রুজু করে মরদেহ ময়নাতদন্তের জন্য মর্গে পাঠায়। তবে নিহতের মাথায় জখম, শরীরে আঘাতের চিহ্ন ও হাত ভাঙ্গা দেখে কিছুতেই বিষয়টি দুর্ঘটনা বলে মেনে নিতে পারেননি শরিফের পিতা সিরাজুল হক। সে সময় হতদরিদ্র সিরাজ হত্যা মামলা করতে চাইলেও রেলওয়ে থানা পুলিশ এবং এলাকার প্রভাবশালীদের চাপে করতে পারেননি। পরবর্তী সময় ২০১৭ সালের ৭ই নভেম্বর কুমিল্লার আদালতে ছেলে শরিফকে হত্যা করার অভিযোগে একটি মামলা দায়ের করেন সিরাজ। সে সময় আদালত মামলাটি আমলে নিয়ে ফের লাকসাম রেলওয়ে থানা পুলিশকে তদন্তের নির্দেশ দেন। দীর্ঘ তদন্তের পর ময়নাতদন্ত রিপোর্টে আঘাতজনিত কারণে মৃত্যু হলেও রেলওয়ে থানা পুলিশ ট্রেনের ধাক্কায় শরিফের মৃত্যু হয়েছে বলে মামলাটির চূড়ান্ত রিপোর্ট দাখিল করা হয় আদালতে। মামলাটির বর্তমান তদন্তকারী কর্মকর্তা, পিবিআই কুমিল্লার পুলিশ পরিদর্শক মো. মতিউর রহমান জানান, গত ২০ দিন আগে আমি মামলাটির তদন্তের দায়িত্ব পাই।
এরপর পিবিআই প্রধান ডিআইজি বনজ কুমার মজুমদার বিপিএম, পিপিএম এবং পিবিআই কুমিল্লা জেলা ইউনিটের প্রধান অতিরিক্ত পুলিশ সুপার মোহাম্মদ ওসমান গনি পিপিএমের নির্দেশনা মতে ওই যুবকের মৃত্যুর প্রকৃত রহস্য উদঘাটনে কাজ শুরু করি। মামলাটির তদন্ত শুরুর পর প্রথমেই জানতে পারি লালমাই উপজেলার উৎসবপদুয়া গ্রামের মোরশেদ আলম ও রোকেয়া বেগমের মেয়ে রহিমা আক্তার শিপার (২১) সঙ্গে নিহত শরিফের প্রেমের সম্পর্ক ছিল। এরপর আমাদের ধারণা হয় প্রেম সংক্রান্ত ঘটনার জেরে ওই যুবককে খুন করা হতে পারে। গত ১৪ই নভেম্বর নিহত শরিফের তৎকালীন প্রেমিকা রহিমা আক্তার শিপাকে টাঙ্গাইল জেলার মির্জাপুর থানাধীন টাকিয়াকদমা গ্রামে তার বর্তমান শ্বশুরবাড়ি থেকে অভিযান চালিয়ে গ্রেপ্তার করি এবং ঘটনার বিষয়ে ব্যাপক জিজ্ঞাসাবাদ করি। পরদিন ১৫ই নভেম্বর আসামি রহিমা আক্তার খুনের নেপথ্য কাহিনী স্বীকার করে আদালতে জবানবন্দি দিয়েছেন। ওইদিনই তাকে আদালতের মাধ্যমে জেলহাজতে পাঠানো হয়েছে।