সবুজের সমারোহ আর প্রাকৃতিক সৌন্দর্যে ভরপুর নিঝুমপুরীর ক্যাম্পাস খ্যাত চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়। প্রতিষ্ঠার ৫৩ বছর পেরিয়ে ৫৪তে পা রাখলো প্রাণোচ্ছল এই পাঠশালা।
কাটাপাহাড়, হতাশার মোড়, দোলা স্মরণী, একখন্ড ঝুলন্ত সেতু, চালন্দা গিরিপথ, চবির সৌন্দর্য শুধু এগুলো নয়। ঋতু রাজ বসন্ত, ঝুম বৃষ্টির আষাঢ়, ঘন কুয়াশার চাদরে ঢাকা শীতে শাটলের ক্যাম্পাস বদলায় তার রূপ। এই রূপে শুধুমাত্র চবির শিক্ষার্থীরাই বিমোহিত হয়না বরং ক্যাম্পাসে অতিথি হয়ে আসা যে কেউই অনায়াসে আপন করে নেয় নিঝুমপুরীর জ্ঞানগৃহের এই সৌন্দর্যকে। শিক্ষার্থীদের যাতায়াতের একমাত্র বাহন শাটল। একে‘ভ্রাম্যমাণ বিশ্ববিদ্যালয়’ও বলেন অনেকেই। আড্ডা, গল্প, গান, পড়ালেখা কী নেই এই শাটলে! বিভিন্ন বগিতে সবাই একসঙ্গে গান গেয়ে মাতিয়ে রাখেন পুরো ট্রেন।
শুধু ছাপ্পান্ন হাজার বর্গমাইলেই নয়, বিশ্বজুড়ে জ্ঞানতাপস হয়ে শিক্ষার আলো ছড়াচ্ছে চবির শিক্ষার্থীরা।
সকাল বেলায় শিশিরভেজা ঘাসে হাটতে, দুপুর বেলায় কলার ঝুপড়ির হরেক রকমের খাবার, সন্ধ্যায় মুক্তমঞ্চে গানের আসর, শহীদ মিনারে বসে বন্ধুত্বের খুনসুটি,কেন্দ্রীয় লাইব্রেরিতে দলবদ্ধ হয়ে অধ্যয়ন,লেডিস ঝুপড়িতে সিরাজ মামার ফুচকা আরও নানা রুপ।
আমি যখন এই ক্যাম্পাসে প্রথম আসি সেই স্মৃতি আজও আমাকে মুগ্ধ করে। যত দিন যাচ্ছে ততই এই ক্যাম্পাসের প্রতি মায়া বেড়ে চলছে। ভাবতেই খারাপ লাগছে প্রাণের ক্যাম্পাস ছেড়ে চলে যাবো শীঘ্রই। নিয়তি বড়ই মর্ম।চবি'র মায়া বড় মায়া। যুগ থেকে যুগান্তরে নিজেকে ছাড়িয়ে যাক প্রিয় ক্যাম্পাস।
এভাবেই নিজের অব্যক্ত কথা মানবজমিনকে বলেন সাংবাদিকতা বিভাগের মাস্টার্সের শিক্ষার্থী এনামুল হক।
মিশ্র প্রতিক্রিয়া জানাতে গিয়ে দৃষ্টিপ্রতিবন্ধী শিক্ষার্থী গোলাম কিবরিয়া বলেন, চোখের আলোতে নয় মনের আলোতে প্রতিনিয়ত আবিষ্কার করি চবির সৌন্দর্যকে। চবিকে নিয়ে বলতে গেলে অন্নদাশঙ্কর রায়ের একটা কবিতার লাইন মনে পড়ে যায়, অর্ধেক মানবী তুমি অর্ধেক কল্পনা।ইশ! যদি চোখের আলোতে প্রিয় ক্যাম্পাসের সৌন্দর্যকে একবার আলিঙ্গন করতে পারতাম। বিশ্ব দরবারে চিরকাল মাথা উঁচু করে দাড়িয়ে থাকুক এই ক্যাম্পাস।৫৪ তম জন্মদিনে এটাই আমার চাওয়া।
১৯৬৬ সালের ১৮ই নভেম্বর চট্টগ্রামের হাটহাজারী উপজেলার ফতেহপুর ইউনিয়নে ১৭৫৩.৮৮একর সমতল ও পাহাড়ি ভুমিতে প্রতিষ্ঠিত হয় এ বিদ্যাপীঠ। নিঝুমপুরীর জ্ঞানরাজ্য খ্যাত এই ক্যাম্পাসের পথচলা শুরু উপাচার্য ড. আজিজুর রহমান মল্লিকের হাত ধরে। বর্তমানে ১৮তম ভিসি হিসেবে দায়িত্ব পালন করছেন অধ্যাপক ড. শিরীণ আখতার।
তৎকালীন পাকিস্তান আমলের অনুমোদিত ক্যাম্পাসেও ছিল বীরদের পদচারণা। বাংলাদেশের স্বাধীনতা যুদ্ধে প্রাণ দিয়েছেন একজন শিক্ষক, ১১ জন শিক্ষার্থীসহ চবির ১৫ জন ব্যক্তি।
৪টি বিভাগ ৮জন শিক্ষক ও ২০৪জন শিক্ষার্থী নিয়ে ২৮শে নভেম্বর শুরু হয় এর শিক্ষা কার্যক্রম। বর্তমানে ৪৮ টি বিভাগ ৯টি অনুষদ আর ৬টি ইনস্টিটিউট ও ২৭ হাজার ৮৩৯ জন শিক্ষার্থী নিয়ে চলছে প্রাতিষ্ঠানিক কার্যক্রম। বিশ্ববিদ্যালয়ের ১৭টি ডিগ্রি অর্জনে অধ্যয়ন করছে এসব শিক্ষার্থীরা। যাতে পাঠদানে নিয়োজিত রয়েছেন ৮৭২ জন শিক্ষক। প্রতিষ্ঠার পর থেকে বিশ্ববিদ্যালয়টি নানা প্রতিবন্ধকতা মোকাবেলা করে আসছে। কাটিয়ে উঠা চ্যালেঞ্জ এবং ভবিষ্যৎ কর্মপন্থা সম্বন্ধে কথা বলেছেন চবি উপাচার্য অধ্যাপক ড. শিরীণ আখতার।তিনি বলেন, চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয় আজকের অবস্থানে আসতে অনেক বিড়ম্বনা পোহাতে হয়েছে। শিক্ষার গুণগত মান বৃদ্ধি ও গবেষণাবান্ধব পরিবেশ তৈরিতে আমরা কাজ করে যাচ্ছি। বিশ্ববিদ্যালয়ে এখন সেশনজট নেই বললেই চলে। এ ছাড়াও একমাত্র বিশ্ববিদ্যালয় হিসেবে আমরা ক্যাম্পাস আঙিনায় হাইটেক পার্ক নির্মাণ করতে যাচ্ছি। আগামীতে শিক্ষা আর অবকাঠামোতে চবি হবে আরও সমৃদ্ধ।