খুলনার ডুমুরিয়া উপজেলা সদরের বাজার সংলগ্ন এলাকায় রহস্যজনক অগ্নিদগ্ধে তুফানি মণ্ডল (৩২) নামে এক কন্যাসন্তানের জননীর মৃত্যু হয়েছে। এ ঘটনার পর ওই গৃহবধূর লাশ ময়নাতদন্ত ছাড়াই গতকাল দুপুরে তড়িঘড়ি করে সৎকার করা হয়েছে। ঘটনাটি হত্যা না আত্মহত্যা এ নিয়ে এলাকাবাসীর মধ্যে চলছে নানা গুঞ্জন। তুফানির প্রতিবেশি সঞ্জয় জানান, তিনদিন আগে সন্ধ্যার দিকে হঠাৎ চিৎকার শুনে তিনি ঘর থেকে বের হন। এরপর দেখেন তুফানি মণ্ডল গায়ে আগুন নিয়ে উঠানে চেঁচাচ্ছে। এ অবস্থায় কাপড়-চোপড় দিয়ে চেপে ধরে তার গায়ের আগুন নেভানো হয়। এরপর দেখি স্থানীয় এমপির মেজো ছেলে সত্যজিৎ চন্দ্র চন্দ ওই মহিলা ঘরের ভেতরে। গায়ের আগুন নিভিয়ে মহিলাকে ঘরের বারান্দায় বসালাম।
কিন্তু সে আগুনে পোড়ার জ্বালা সহ্য করতে পারছিল না। এ অবস্থায় আহতের শরীর এবং কাপড়-চোপড় থেকে কেরোসিনের গন্ধ পাওয়া যায়। এম্বুলেন্স এনে হাফিজুল ও মহিলার বাবা গুরুদাস মন্ডলকে নিয়ে তিনজন মিলে মহিলাকে প্রথমে খুলনার গাজী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে ভর্তি করা হয়। সেখানে তার অবস্থার অবনতি হলে ইসলামী ব্যাংক হাসপাতালে নেয়া হয়। সেখানে দু্ই ঘণ্টা রাখার পর তারা উন্নত চিকিৎসার জন্য ঢাকায় স্থানান্তরের কথা বলে। সেখান থেকে ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের বার্ন ইউনিটে ভর্তি করা হয়। ঢাকায় চিকিৎসাধীন অবস্থায় রোববার রাতে তুফানি মন্ডল মারা যায়। সোমবার তার লাশ ডুমুরিয়ায় আনা হয় এবং কাপালিডাঙ্গার শ্মশানে তার সৎকার করা হয়। তিনি বলেন, আগুনে পোড়া তুফানীর বাবার বাড়ি বটিয়াঘাটা উপজেলার জলমা ইউনিয়নের চক্রাখালী গ্রামে। আর শ্বশুর বাড়ি ডুমুরিয়া উপজেলার কাপালি ডাঙ্গা গ্রামে। গুরুদাস স্থানীয় এমপি সাবেক মন্ত্রী নারায়ণ চন্দ্র চন্দ’র মেজো ছেলে সত্যজিতের ঘেরে কাজ করে। সে সুবাধে সত্যজিতের সাথে তুফানি মন্ডলের পরিচয় হয়। ৩ মাস আগে তুফানি কাপালিডাঙ্গার শ্বশুরবাড়ি ছেড়ে ডুমুরিয়া বাজারের পাশে একটি বাসা ভাড়া নেয়। সত্যজিৎ প্রায় তুফানির এ ভাড়া বাসায় যাতায়াত করত। ঘটনার সময়ও সত্যজিৎ নিজেই তুফানির বাসায় উপস্থিত ছিলেন।
তুফানির বাবা গুরুদাস মন্ডল জানান, আমি ও সত্যজিৎ মিলে আগুন নিভিয়েছিলাম। এ সময় সত্যজিতের হাতও পুড়িয়ে যায়। তাকে প্রাথমিক চিকিৎসা দেয়া হয়েছে। এরপর ঢাকায় নিয়েও আমার মেয়েকে বাঁচাতে পারলাম না। একই এলাকার আওয়ামী লীগ নেতা মাসুদ রানা নান্টু অভিযোগ করে বলেন, ঘটনার রাতে তুফানির বাসায় তুফানি, তার বাবা, ৭ বছরের কন্যা ও এমপি পুত্র সত্যজিৎ ছিলেন। গুরুদাসই সত্যজিতকে দাওয়াত করেছিলেন। তার জন্য মুরগি রান্না চলছিল। কিন্তু এ সময় হঠাৎ করেই তুফানির ওড়নায় আগুন লেগে যায়। যা গায়ে ছড়িয়ে পড়ে। এ আগুন নিভাতে গিয়ে সত্যজিতের হাতেও আগুন লাগে। তাকে স্থানীয় হাসপাতাল থেকে প্রাথমিক চিকিৎসা প্রদান করা হয়। ডুমুরিয়া থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) আমিনুল ইসলাম বলেন, ডুমুরিয়ার এক গৃহবধূ আগুনে পুড়ে ঢাকায় চিকিৎসাধীন অবস্থায় মারা গেছে। যা রোববার ঢাকা থেকে পুলিশ তাকে ফোন করে জানায়। তবে এ ব্যাপারে তিনি কোন অভিযোগ পাননি।