× প্রচ্ছদ অনলাইনপ্রথম পাতাশেষের পাতাখেলাবিনোদনএক্সক্লুসিভভারতবিশ্বজমিনবাংলারজমিনদেশ বিদেশশিক্ষাঙ্গনরকমারিমত-মতান্তরবই থেকে নেয়া তথ্য প্রযুক্তি শরীর ও মন চলতে ফিরতে কলকাতা কথকতাসেরা চিঠিইতিহাস থেকেঅর্থনীতি
ঢাকা, ২০ এপ্রিল ২০২৪, শনিবার , ৭ বৈশাখ ১৪৩১ বঙ্গাব্দ, ১১ শওয়াল ১৪৪৫ হিঃ

গুলশান মার্কেট তালালই শেষ কথা

শেষের পাতা

স্টাফ রিপোর্টার
২০ নভেম্বর ২০১৯, বুধবার

গুলশান-১। ডিএনসিসি পাকা মার্কেট। ব্ল্যাঙ্ক চেক আর স্ট্যাম্প নিয়ে সুদে টাকা দেন তিনি। শুরুতেই দেয়া ঋণ থেকে সুদের প্রথম কিস্তি কেটে রেখে দেন। তারপর বছরের পর বছর চলে তার শোষণ। সুদের টাকা পরিশোধ করতে না পারলে চলে নির্যাতন আর দোকান বন্ধের মতো ঘটনা। এ কাণ্ডের নায়ক গুলশান এক নম্বর ডিএনসিসি পাকা মার্কেট ব্যবসায়ী সমিতির সভাপতি তালাল রিজভী। ১৩ বছর ধরে এ মার্কেটের সভাপতি পদ ধরে রেখেছেন তিনি।
এই মার্কেটে তার কথাই শেষ কথা। নিজেই বসান আদালত। খেয়ালখুশি মতো করেন বিচার। মার্কেটের ফুটপাত এবং ভাসমান দোকানগুলো থেকে প্রতিমাসে মোটা অংকের চাঁদা তুলার অভিযোগ রয়েছে তার বিরুদ্ধে। কোমরে অস্ত্র আর  ক্যাডার বাহিনী নিয়ে পুরো মার্কেটে তার বিচরণ। ভয়ে কথা বলার সাহস নেই কারো।
মার্কেটের চারদিকে ফুডের দোকান বসিয়ে লাখ লাখ টাকা চাঁদা তুলেন তিনি। সরেজমিনে কথা হয় এমন কয়েকজনের সঙ্গে। ফুটপাতের  এক দোকানী বলেন, এখানে বসতে আমাকে প্রথমে ২০ হাজার টাকা দিতে হয়েছে তালাল সাহেবকে। এর পর প্রতিমাসে চার হাজার টাকা করে দেই । তার লোকজন এসে নিয়ে যায়। আরেক দোকানি বলেন, আমরা গরিব মানুষ। সভাপতির কাছে আসছিলাম, এক জায়গায় একটু বসিয়ে দেয়ার জন্য। তিনি বলেন, বসো সমস্যা নেই। আমাকে দশ হাজার টাকা দিতে হবে। মাসে মাসে টাকা দিতে হবে। কি আর করার দিতে হয়। না হয় এখান থেকে তো আবার তুলে দিবে।
ফুটপাতে প্রায় শতাধিক দোকান রয়েছে। যেগুলো থেকে নিয়মিত চাঁদা তুলে নিজের পকেটে নেন তালাল। শুধু তাই নয় কেউ কোনো মাসে টাকা কম দিলে তাদের গায়ে হাত তুলার মতো ঘটনাও ঘটান তিনি। এসব দোকানদারকেও তিনি সুদে টাকা দিয়ে জিম্মি করে রেখেছেন। মার্কেটে ফুটপাতের ফল ব্যবসায়ী মোশারফ। পাঁচ লাখ টাকা সুদে ঋণ নেন তালালের কাছ থেকে। এখন এই ঋণের পরিমাণ দাঁড়িয়েছে ১৭ লাখ টাকা। জানা যায় এই ফল দোকানি কিস্তিতে ১৭ লাখ টাকারও বেশি শোধ করেছেন তালালকে। অথচ এখনো তালাল তার কাছে আরো ১৭ লাখ টাকা পাবেন বলে দাবী করছেন।
অভিযোগ রয়েছে, মার্কেটে রয়েল কালেকশন নামে একটি শার্ট-প্যান্টের দোকান তুলে দিয়েছেন তিনি। দোকানের মালিক সোহারবকে প্রথমে পাঁচ লাখ টাকা দিয়ে প্রায় ৪৫ লাখ টাকা হাতিয়ে নেন তালাল। আরো টাকা না দেয়ায়  গত রমজান মাসে ঈদের পাঁচদিন আগে তাকে এখান থেকে উচ্ছেদ করে দেন তিনি। নামপ্রকাশ না করার শর্তে এক দোকানি বলেন, আমরা কতবার অনুরোধ করলাম সভাপতিকে । শেষবারের মতো ঈদ পর্যন্ত তাদের দোকানটা চালু রাখতে। কিন্তু সে সুযোগ দেননি।
কয়েকদিন আগে সুদের টাকা পরিশোধ করতে না পারায় দোকানে তালা দিয়েছেন শামসু প্লাজা ও গিফট গ্যালারিতে। এসব দোকানের মালিক প্রথমে কিছু টাকা সুদে ঋন নেন। সেই টাকা দ্বিগুন হওয়ার পর শোধ করতে পারেননি তারা। যার কারণে তাদের দোকানে কয়েকবার তালা দেয়ার ঘটনা ঘটেছে। খোঁজ নিয়ে জানা যায়, সিটি করপোরেশনের এই মার্কেটটিতে ২৩৬ দোকানের মধ্যে প্রায় অর্ধশতাধিক দোকানে তিনি সুদে টাকা দিয়েছেন।
অভিযোগ রয়েছে, রাতে মার্কেটের পার্কিং-এর যায়গায় প্রায় ১’শটি পিকাপ গাড়ির পার্কিং সুবিধা  দেন তিনি। এই সুবিধা দিয়ে মাসে লক্ষাধিক টাকা আয় হলেও, মার্কেটের ফান্ডে প্রতি মাসে নামে মাত্র কিছু টাকা দেয়া হয়। আর বাকি টাকা যায় তার পকেটে। মার্কেটের বেশকয়েকজন দোকানির সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, মার্কেটে দোকানি বা মালিকদের মধ্যে কোনো ধরনের সমস্যা হলে সঙ্গে সঙ্গে তার ক্যাডারবাহিনী এসে মার্কেটের নিয়ন্ত্রন নেয়। এক দোকানি বলেন, এক সঙ্গে চলতে গেলে অনেক সমস্যাই হয়। কিন্তু উনি যেভাবে ক্যাডার নিয়ে মার্কেটে আসেন, পুরো মার্কেটে আতংক ছড়িয়ে পড়ে। অভিযোগ রয়েছে প্রায় ১৩ বছর ধরে কোনো ধরনের নির্বাচন না দিয়ে পদটি দখল করে রেখেছেন তিনি। তার ইচ্ছে মতো বাকি সদস্যদেন তিনি পদ দেন, পদ থেকে সরিয়ে নেন। এই নিয়ে কেউ কথা বললে নেমে আসে নির্যাতন। তাই কেউ কথা বলার সাহস পায় না।
তালাল ছিলেন বাড্ডা থানা আওয়ামী লীগের যুগ্ম সাংগঠনিক সম্পাদক এবং ঢাকা মহানগর  দোকান মালিক সমিতির সাধারন সম্পাদক। এখন এই মার্কেটের সভাপতি পদ ছাড়া কোনো পদই নেই তার। অভিযোগ রয়েছে, বিভিন্নভাবে ক্ষমতার অপব্যহার করার কারণে তাকে এসব পদে বেশি দিন রাখেননি সংশ্লিষ্টরা।
এসব অভিযোগের ব্যপারে তালাল রিজভী বলেন, আমি ৪২ বছর ধরে এই মার্কেটের সঙ্গে আছি। কেউ আমাকে নিয়ে  কোনো কথা বলতে পারবে না। নির্বাচন নিয়ে তিনি বলেন, আমাদের এখানে নির্বাচন হয় না। সিলেকশনের মাধ্যমেই হয়। আর সুদে টাকা দিবো কেন ভাই। এগুলো মিথ্যা কথা। পার্কিং বা ফুটপাতের কোনো টাকা আমি নেই না। আর দোকানদারদের ভালো না লাগলে ওরা চলে যায়। এখানে তো আমার কিছু করার থাকে না।
অবশ্যই দিতে হবে *
অবশ্যই দিতে হবে *
অন্যান্য খবর