× প্রচ্ছদ অনলাইনপ্রথম পাতাশেষের পাতাখেলাবিনোদনএক্সক্লুসিভভারতবিশ্বজমিনবাংলারজমিনদেশ বিদেশশিক্ষাঙ্গনরকমারিমত-মতান্তরবই থেকে নেয়া তথ্য প্রযুক্তি শরীর ও মন চলতে ফিরতে কলকাতা কথকতাসেরা চিঠিইতিহাস থেকেঅর্থনীতি
ঢাকা, ১৮ এপ্রিল ২০২৪, বৃহস্পতিবার , ৫ বৈশাখ ১৪৩১ বঙ্গাব্দ, ৯ শওয়াল ১৪৪৫ হিঃ

বাসের পর এবার ট্রাক ধর্মঘট

প্রথম পাতা

স্টাফ রিপোর্টার
২০ নভেম্বর ২০১৯, বুধবার

সড়ক নিরাপত্তায় করা নতুন আইনের সংস্কার চেয়ে বিভিন্ন জেলায় গণপরিবহন ধর্মঘটের সঙ্গে আজ থেকে ট্রাক ধর্মঘটের ডাক দিয়েছে মালিক-শ্রমিক সমিতি। ৯ দফা দাবিতে গতকাল থেকে অনির্দিষ্টকালের জন্য ধর্মঘট শুরু করেছে বাংলাদেশ ট্রাক-কাভার্ডভ্যান পণ্য পরিবহন মালিক শ্রমিক ঐক্যপরিষদ। বেলা সাড়ে ১১টায় রাজধানীর তেজগাঁওয়ে সংগঠনটির কার্যালয়ে সংবাদ সম্মেলনে কর্মসূচি ঘোষণা করেন পরিষদের আহ্বায়ক রুস্তম আলী খান। এদিকে সোমবারের মতো গতকালও দিনভর দেশের বিভিন্ন স্থানে বাস চলাচল বন্ধ ছিল। বাস ও ট্রাক বন্ধ হওয়ায় সারা দেশেই বিরূপ প্রভাব পড়ে। দুর্ভোগ পোহাতে হয় সাধারণ যাত্রীদের। এ ছাড়া হঠাৎ করেই পণ্যবাহী ট্রাক বন্ধের ঘোষণায় বিপাকে পড়তে হয়েছে ব্যবসায়ীদেরও। অপরদিকে দ্বিতীয় দিনের মতো নতুন সড়ক আইন বাস্তবায়ন করতে বাংলাদেশ সড়ক পরিবহন কর্তৃপক্ষের (বিআরটিএ) ভ্রাম্যমাণ আদালতের কার্যক্রম অব্যাহত ছিল।
 

ধর্মঘট ঘোষণা করে বাংলাদেশ ট্রাক-কাভার্ডভ্যান পণ্য পরিবহন মালিক-শ্রমিক ঐক্যপরিষদের আহ্বায়ক রুস্তম আলী খান জানান, আজ (বুধবার) থেকে পরবর্তী নির্দেশনা আসার আগ পর্যন্ত মালিক-শ্রমিকরা কর্মবিরতি পালন করবেন। দাবি আদায় না হওয়া পর্যন্ত তাদের এ কর্মসূচি চলবে বলেও জানান তিনি। ৯ দফা দাবি তুলে ধরে রুস্তম আলী খান জানান, নতুন সড়ক আইন স্থগিত করে মালিক-শ্রমিকদের আয়ের সঙ্গে সামঞ্জস্যপূর্ণ জরিমানার বিধান রেখে সংশোধন করে একটি বাস্তবসম্মত আইন প্রণয়ন করতে হবে। সড়ক দুর্ঘটনায় শুধু চালকদের দায়ী করা যাবে না। চালকের বিরুদ্ধে কোনো মামলা হলে তা অবশ্যই জামিনযোগ্য ধারায় হতে হবে। তিনি বলেন, পরিবারের একমাত্র উপার্জনক্ষম একজন ড্রাইভারকে যদি ৩ থেকে ৪ মাসের দণ্ড দেয়া হয়, তাহলে তার পরিবার কীভাবে চলবে? এই মানবিক চিন্তাটি কেউ করতে পারছেন না? তিনি আরো বলেন, দেশের পণ্য পরিবহন ব্যবস্থা আজ কতোটা হুমকির মুখে তার বাস্তব অবস্থা অনুধাবন না করলে কাউকে বুঝানো সম্ভব নয়। পণ্য পরিবহন শিল্প আজ নানা সমস্যায় জর্জরিত। পুলিশ-প্রশাসন, বিআরটিএ, মেট্রোপলিটন, সিটি করপোরেশন, পৌরসভা, বন্দরসমূহ, সড়ক-মহাসড়কসহ প্রতিটি ক্ষেত্রেই পণ্য পরিবহন মালিক-শ্রমিকরা অবহেলিত ও নির্যাতিত। গ্রেপ্তার, চাঁদাবাজিসহ নানা হয়রানির শিকার হচ্ছেন। যা অত্যন্ত দুর্ভাগ্যজনক এবং মানবিক ও মৌলিক অধিকারবিরোধী বলে আমরা মনে করি।  

তিনি বলেন, সড়ক-মহাসড়কে গাড়ির কাগজপত্র চেকিং করার নামে পুলিশের অযথা হয়রানি বন্ধ করতে হবে। সকল ট্রাকস্ট্যান্ড অথবা লোডিং পয়েন্টে গাড়ির কাগজপত্র ও ড্রাইভিং লাইসেন্স চেকিং করতে হবে। বৈধ কাগজপত্র থাকলেও অযথা বিভিন্ন অজুহাতে মামলা বন্ধ করতে হবে।

রুস্তম আলী খান বলেন, নভেম্বরের পূর্ব পর্যন্ত বিআরটিএ কর্তৃক রেজিস্ট্রেশনপ্রাপ্ত যে সকল পণ্য পরিবহন গাড়ি রপ্তানিযোগ্য পণ্য পরিবহনের সুবিধার্থে দৈর্ঘ্য, প্রস্থ, উচ্চতা নির্ধারণপূর্বক তৈরি করা হয়েছে, সে সব গাড়ির মডেল থাকাকালীন অবস্থায় চলাচলের অনুমতি দিতে হবে। সহজ শর্তে স্বল্প সময়ের মধ্যে ড্রাইভিং লাইসেন্স দিতে হবে। যেসব চালক যেসব গাড়ি চালনায় পারদর্শী তাদেরকে সেরকম লাইসেন্স দিতে হবে। বর্তমানে হালকা পেশাদার লাইসেন্স দিয়ে ভারী যানবাহন চালানোর অনুমতি দিতে হবে। জরিমানা মওকুফ করে গাড়ির কাগজপত্র হালনাগাদ করার ন্যূনতম ৬ মাস সময় দিতে হবে। তিনি আরো বলেন, বিগত পণ্য পরিবহনের আন্দোলনে যেসব মালিক-শ্রমিকদের বিরুদ্ধে মামলা হয়েছে তা অবিলম্বে প্রত্যাহার করতে হবে। সারা দেশে একই নিয়মে একই ওজনে ওভারলোডিং নিয়ন্ত্রণ করতে হবে। সড়ক-মহাসড়কে ৩০ মিটারের মধ্যে কোনো স্থাপনা থাকা যাবে না।

এদিকে সোমবারের মতো গতকালও দিনভর রাজধানীর বিভিন্নস্থানে বিআরটিএ’র ভ্রাম্যমাণ আদালত পরিচালিত হয়। রাজধানীর সাতটি স্পটে ভ্রাম্যমাণ আদালত বসেন। এসময় যানবাহনের ফিটনেস, রুট পারমিট, ট্যাক্স টোকেন এবং ড্রাইভিং লাইসেন্স না থাকার অভিযোগে মোট ৭৯টি মামলা দেয়া হয়। জরিমানা করা হয় ১ লাখ ১৯ হাজার টাকা। বিআরটিএ’র তৎপরতার কারণে গত দুইদিনে রাজধানীতে গণপরিবহনের সংখ্যা কিছুটা কমে গেছে। ফিটনেস না থাকায় অনেক বাস রাজধানীর পথে নামাননি মালিকরা। ফলে দেখা দিয়েছে পরিবহন সংকট। রাজধানীর বিভিন্ন পয়েন্টে বাসের অপেক্ষায় থাকতে দেখা যায় যাত্রীদের। শুধু তাই নয়, সঠিক সময়ে বাস না পেয়ে অনেকে গন্তব্যে পৌঁছাতে পারেননি বলেও অভিযোগ করেছেন।

আমাদের চুয়াডাঙ্গা প্রতিনিধি জানান, চুয়াডাঙ্গা জেলায় দ্বিতীয় দিনের মতো অঘোষিতভাবে বাস-মিনিবাস ও দূরপাল্লার যাত্রীবাহী যানবাহন চলাচল বন্ধ ছিল। কোনো ঘোষণা ছাড়াই শ্রমিকরা সোমবার থেকে এসব যানবাহন চলাচল বন্ধ করে দেয়। এতে দুর্ভোগে পড়তে হয় যাত্রীদের। মঙ্গলবারও বাস-মিনিবাস ও দূরপাল্লার যাত্রীবাহী যানবাহন চলাচল করতে দেখা যায়নি। চুয়াডাঙ্গা জেলা বাস-ট্রাক সড়ক পরিবহন শ্রমিক ইউনিয়নের সভাপতি এম জেনারেল ইসলাম জানান, সংগঠন থেকে কোনো ঘোষণা নেই। পাশের জেলাগুলোতে বাস চলাচল বন্ধ হয়ে যাওয়ার পর চুয়াডাঙ্গার শ্রমিকরাও কর্মবিরতি শুরু করেছে। চুয়াডাঙ্গার দৌলতদিয়াড় গ্রামের বাস শ্রমিক ইকবাল হোসেন বলেন, নতুন পরিবহন আইন শ্রমিকদের জন্য অনেক কঠিন। আইনের বিষয়ে শ্রমিকদের সঙ্গে আলোচনা করে চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত নিতে হবে। নতুন আইনের শ্রমিকদের অসুবিধার জন্যই আমরা যানবাহন চলানো বন্ধ রেখেছি।

রাজশাহী থেকে স্টাফ রিপোর্টার জানান, রাজশাহীতে নতুন সড়ক পরিবহন আইন সংশোধনের দাবিতে গত সোমবার থেকেই ‘অঘোষিত’ ধর্মঘট করেছে পরিবহন শ্রমিকরা। তবে বিকালে ধর্মঘট কাটিয়ে গতকাল থেকে বাস চলাচল শুরু হয়। রাজশাহী থেকে যাত্রীদের নিয়ে দেশের বিভিন্ন রুটে বাস ছেড়ে যায়। রাজশাহী থেকে বরিশালগামী আকিব পরিবহনের চালক হামিদুল বলেন, আইনটা বড্ড কড়া হয়ে গেছে। চালকরাও তো মানুষ, ভুল-ত্রুটি হতে পারে। আর দুর্ঘটনা তো দুর্ঘটনাই। কোনো চালক ইচ্ছে করে দুর্ঘটনা ঘটান না। তাই চালকদের বিষয়টি বিবেচনা করে আইনটা আরেকটু শিথিল করলে ভালো হয়। আমরা আশা করছি, শ্রমিক নেতারা সরকারের মন্ত্রীদের সঙ্গে বসে একটা সমাধান করবেন। রাজশাহী থেকে সাতক্ষীরাগামী জনি পরিবহনের চালক সিরাজুল ইসলাম বলেন, আমার নিজের কাগজপত্র সব ঠিক আছে, গাড়ি চালাতে আমার কোনো সমস্যা নেই। আমি গাড়ি চালিয়েছি। তবে দুপুরে রাজশাহী এসে গাড়ি আর ছাড়তে দেয়নি। আমার মনে হয়, যাদের কাগজ নেই, দ্রুত করে নেয়া উচিত। কারণ আইন যেহেতু পাস হয়ে গেছে, এখন মানতেই হবে। রাজশাহী জেলা মোটর শ্রমিক ইউনিয়নের সভাপতি জাহাঙ্গীর আলম বলেন, আমরা কোনো ধর্মঘট সমর্থন করছি না। শ্রমিকদের বলা হয়েছে, কাগজপত্র কাছে রেখে গাড়ি চালাতে। একদিন বন্ধ রাখার পর মঙ্গলবার থেকে রুটে বাস চলছে। তবে যাদের কাগজপত্র ও গাড়ির ফিটনেস ঠিক নেই, তারা জরিমানার ভয়ে রাস্তায় গাড়ি নামাননি। সেটা তাদের ব্যক্তিগত ব্যাপার।

গাজীপুর থেকে স্টাফ রিপোর্টার জানান,  নতুন সড়ক নিরাপত্তা আইন বাতিলের দাবিতে সকালে গাজীপুরের শ্রীপুরের মাওনা চৌরাস্তায় ঢাকা-ময়মনসিংহ মহাসড়ক অবরোধ করে পরিবহন শ্রমিকরা। এতে ওই মহাসড়কে প্রায় দু’ঘণ্টা যানবাহন চলাচলে বিঘ্ন ঘটে। পূর্ব নির্ধারিত কর্মসূচির ঘোষণা না থাকায় সড়কে বের হয়ে সকাল ৮টা থেকে ১০ পর্যন্ত দু’ঘণ্টা ধরে অবরোধের মুখে পড়ে দুর্ভোগে পড়েন শত শত যাত্রী। বিশেষ করে কর্মজীবী লোকজন ও স্কুল-কলেজের শিক্ষার্থীরা চরম বিপাকে পড়েন। অন্যদিকে ময়মনসিংহ ও ঢাকা থেকে এই রুটের বাস ছেড়ে না আসায় বন্ধ রয়েছে দূরপাল্লার বাস চলাচল। ট্রাকসহ মালামাল পরিবহনের বাহনও কম সংখ্যক চলাচল করছে। অবশ্য জেলার অভ্যন্তরীণ রুটের বাস ও লোকাল বাসসহ ব্যক্তিগত যানবাহন চলাচল করছে। তাও অনেক ক্ষেত্রে চলাচল করছে সীমিত সংখ্যক। নানা যুক্তি তুলে ধরে বাসচালকরা নতুন সড়ক নিরাপত্তা আইন বাতিলের দাবি করছে। তবে যাত্রীরা বলছেন, এই আইন বাস্তবায়ন হলে দুর্ঘটনা কমবে আর জীবনের নিরাপত্তা বাড়বে।

গাজীপুর মেট্রোপলিটন পুলিশের  ট্রাফিক বিভাগের এসি (নর্থ) মাজহারুল ইসলাম জানান, এ নিয়ে যাতে সড়কে কোনো মহল নৈরাজ্য সৃষ্টি করতে না পারে এবং নতুন এই আইন বাস্তবায়নের জন্য সড়কে সব ধরনের প্রস্তুতি নিয়ে দায়িত্ব পালন করছে বলে জানিয়েছেন।

স্টাফ রিপোর্টার, বরিশাল থেকে জানান, পূর্ব ঘোষণা ছাড়াই বরিশালের সকল রুটে বাস চলাচল বন্ধ করে দেয় পরিবহন শ্রমিকরা। গতকাল সকাল ১০টার পর থেকে বরিশালের অভ্যন্তরীণ সকল রুট এবং দূরপাল্লার আংশিক রুটে বাস চলাচল বন্ধ করে দেয় শ্রমিকরা। পরিবহন শ্রমিকরা জানান, নতুন সড়ক নিরাপত্তা আইনে জেল-জরিমানার ভয়ে বাস চলাচল বন্ধ রেখেছেন তারা। কোনো ধরনের ঘোষণা ছাড়াই হঠাৎ বাস চলাচল বন্ধ করে দেয়ায় চরম দুর্ভোগে পড়েন যাত্রীরা। পরিবহন মালিক-শ্রমিক নেতারা জানান, বিভিন্ন স্থানে বাস চলাচল করতে বাধার সম্মুখীন হচ্ছেন তারা।

ভাঙচুর করা হচ্ছে বাস। এ ছাড়া নতুন সড়ক নিরাপত্তা আইনে  জেল-জরিমানা বেশি থাকায় শ্রমিকরা ভয়ে বাস চলাচল করা থেকে বিরত থাকছেন। এক্ষেত্রে মালিক-শ্রমিক নেতারা অসহায়। এরইমধ্যে মাদারীপুর এবং মোস্তফাপুরে বরিশাল রুটের দু’টি বাস ভাঙচুর করা হয়েছে। ঝালকাঠিতে বাস চলাচলে বাধা দেয়া হচ্ছে। সকাল ১০টার পর বরিশাল নগরীর নতুল্লাবাদ কেন্দ্রীয় বাস টার্মিনাল থেকে অভ্যন্তরীণ এবং দূরপাল্লার কিছু রুটে বাস চলাচল বন্ধ রাখেন শ্রমিকরা। তারা নতুন সড়ক নিরাপত্তা আইন সংশোধন কিংবা বাতিল না করা পর্যন্ত বাস চালাতে অপারগতা প্রকাশ করেন। বরিশাল জেলা বাস মালিক গ্রুপের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক কিশোর কুমার দে এবং জেলা সড়ক পরিবহন শ্রমিক ইউনিয়নের সাধারণ সম্পাদক ফরিদ হোসেন জানান, নতুন সড়ক নিরাপত্তা আইনের বিরুদ্ধে তারা আনুষ্ঠানিকভাবে কোনো ধর্মঘট কিংবা কর্মবিরতি করেননি। বিভিন্ন স্থানে বাধা এবং ভাঙচুরসহ নতুন আইনে জেল-জরিমানার ভয়ে শ্রমিকরা স্বেচ্ছায় বাস চলাচল বন্ধ  রেখেছেন। তারা বাস চালানোর জন্য কোনো শ্রমিক খুঁজে পাচ্ছেন না।
অবশ্যই দিতে হবে *
অবশ্যই দিতে হবে *
অন্যান্য খবর