× প্রচ্ছদ অনলাইনপ্রথম পাতাশেষের পাতাখেলাবিনোদনএক্সক্লুসিভভারতবিশ্বজমিনবাংলারজমিনদেশ বিদেশশিক্ষাঙ্গনরকমারিমত-মতান্তরবই থেকে নেয়া তথ্য প্রযুক্তি শরীর ও মন চলতে ফিরতে কলকাতা কথকতাসেরা চিঠিইতিহাস থেকেঅর্থনীতি
ঢাকা, ১৯ এপ্রিল ২০২৪, শুক্রবার , ৬ বৈশাখ ১৪৩১ বঙ্গাব্দ, ১০ শওয়াল ১৪৪৫ হিঃ

মারা গেছেন ১৪০০ জন /দেশে এইডস রোগী ১২ থেকে ১৫ হাজার

এক্সক্লুসিভ

ফরিদ উদ্দিন
১ ডিসেম্বর ২০১৯, রবিবার

এইচআইভি পজেটিভ রোগীদের সঙ্গে চিকিৎসক ও কর্মচারীরা ভালো ব্যবহার করছেন না বলে বেশ অভিযোগ পাওয়া গেছে। তাদেরকে অবহেলা করা হচ্ছে সেন্টারগুলোতে। এমন অভিযোগ করেছেন কুমিল্লার একজন রোগী। এইচআইভি পজেটিভ এই রোগী দাবি করেছেন, তাকে আগে এডিকম-এন ওষুধ দিতো সরকার। ওই ওষুধটি খেয়ে তিনি শারীরিকভাবে ভালো অনুভব করতেন। কিন্তু সম্প্রতি তাকে ওষুধটি না দিয়ে ল্যাম্পডিন নামের ওষুধ দিচ্ছেন, এতে তার শরীরির দিন দিন দুর্বল হয়ে যাচ্ছে। এডিকম-এন ওষুধের সংকট বলে কুমিল্লা মেডিকেল কলেজ ও হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ জানিয়েছে। ২০০৩ সালে কুয়েতে যান ‘স’ অদ্যাক্ষরের ওই রোগী।
কুয়েতে এক সড়ক দুর্ঘটনাই তার জীবনের কালো অধ্যায় নেমে আসে। দুর্ঘটনার পর শরীরির থেকে প্রচুর রক্তক্ষরণ হয়। তখন অনেক রক্তের প্রয়োজন দেখা দেয়। ওই সময়ে বহু লোক রক্ত দিয়ে তাকে বাঁচিয়ে তুলেন। কিন্তু এখন বেঁচে থেকেও মৃত। শুধু  তার একার নন, পরিবারের তিনজনই এখন এইচআইভি পজেটিভে আক্রান্ত। প্রথমে তার শরীরে এই রোগ ধরা পড়ে। তিনি জানান, তার মনে হচ্ছে ওই রক্ত থেকেই তার শরীরে এইচআইভি পজেটিভে বাসা বেঁধেছে। এরপর ধারাবাহিকভাবে তার স্ত্রী এবং ৯ বছরের কন্যা সন্তানও এই রোগে আক্রান্ত। ২০০৯ সালে দেশে ফিরে আসেন এই যুবক। ২০১৫ সালে তার এই রোগ ধরা পড়ে। এরপর থেকে চিকিৎসা নিচ্ছে পরিবারটি। তার আরো বড় এক ছেলে ও মেয়ে রয়েছেন। তারা ভালো আছেন বলে তিনি উল্লেখ করেন। সংশ্লিষ্টরা জানান, দেশের ২৩টি জেলা বেশি এইডস  ঝুঁকিতে রয়েছে। ১৯৮৯ সাল থেকে এ পর্যন্ত ৬ হাজার ৫৫৪ জনকে এইচআইভি হিসেবে চিহ্নিত করা হয়েছে। এই পর্যন্ত মারা গেছে ১৪০০জন। বাংলাদেশে মাসে একজন এইডস আক্রান্ত রোগীর পিছনে সরকারের খরচ ২০ থেকে ২৫ হাজার টাকা। গেলো বছর ১০২০ জন নতুন রোগী সনাক্ত হয়েছেন। এর মধ্যে ১০৫ জন রহিঙ্গা। মারা গেছেন ১২৭ জন।  যেসব জেলা এইডস-এর ঝুঁকিতে এগুলো হচ্ছে- ঢাকা, গাজীপুর, নারায়ণগঞ্জ, মুন্সীগঞ্জ, ময়মনসিংহ, কিশোরগঞ্জ, বরিশাল, পটুয়াখালী, চট্টগ্রাম, কক্সবাজার, কুমিল্লা, চাঁদপুর, সিলেট, মৌলভাবাজার, দিনাজপুর, রাজশাহী, বগুরা, পাবনা, সিরাজগঞ্জ, খুলনা, বাগেরহাট, যশোর, ও সাতক্ষীরা।

সূত্র জানায় জানান, বর্তমানে দেশে চিকিৎসা সেবা ও এইচআইভি শনাক্তকরণ কার্যক্রম সরকারি ১২টি হাসপাতালের মাধ্যমে পরিচালিত হচ্ছে, যার মধ্যে ৪টি সরকারি হাসপাতাল থেকে এইডস আক্রান্ত রোগীদের বিনামূল্যে ওষুধ সরবরাহ করা হচ্ছে। এইডস  নিয়ে কাজ করেন এমন একটি সংগঠন ‘আশার আলো সোসাইটির’ পরিচালক হাবিবা আক্তার। তিনি জানান, দাতা সংস্থাগুলোর কিছু সংখ্যক বাংলাদেশে এ সংক্রান্ত অর্থায়ন বন্ধ করে দিয়েছে। এখন সরকারি হাসপাতালে এই ব্যাপারে কাজ করছে। এর বেশি আর কিছু বলতে রাজি হননি তিনি।  এইডস নিয়ে কাজ করেন অপর আরেকটি সংগঠন ‘মুক্ত আকাশ বাংলাদেশ’। এই সংগঠনটি ৫টি  কেন্দ্রে পরীক্ষা নিরীক্ষা করে এই রোগী সনাক্ত করে।

জাতিসংঘের এইডস বিষয়ক শাখার এক তথ্য মতে, সারা বিশ্বে ৩ কোটি ওপর মানুষ এইডস আক্রান্ত। ২০১৪ সালে ২০ লাখ প্রাপ্ত বয়স্ক ও শিশু এইডস আক্রান্ত হয়েছে। ২০০০-১৪ সাল পর্যন্ত এন্টি      পৃষ্ঠা ১৭ কলাম ৪
রেট্রোভাইরাল ট্রিটমেন্টের মাধ্যমে ৭০ লাখ ৮০ হাজার এইডস আক্রান্ত মানুষকে বাঁচানো গেছে। ২০১৪ সালে ২ লাখ ২০ হাজার শিশু নতুন করে এইডস আক্রান্ত হয়েছে। ২০১৪ সালের এন্টি রেট্রোভাইরাল ট্রিটমেন্টের মাধ্যমে ১০ লাখ ৪০ হাজার শিশু সুস্থ হয়েছে। ২০১৪ সালে এশিয়া-প্যাসিফিক অঞ্চলে ৩ লাখ ৪০ হাজার মানুষ নতুন করে এইডস আক্রান্ত হয়। ২০০০-১৪ সাল পর্যন্ত নতুন করে আক্রান্ত হওয়ার অনুপাতে যা ৩১ শতাংশ কম। এইডস’র বিরুদ্ধে প্রতিরোধ ও জনসচেতনতা সৃষ্টির লক্ষ্যে বিশ্ব সমপ্রদায় ১৯৮৮ সাল থেকে বিশ্ব এইডস দিবস পালন করে আসছে। এ পর্যন্ত প্রায় ৩৫ মিলিয়ন মানুষ এ মরণঘাতি রোগে মৃত্যুবরণ করেছে বিশ্বে।

 এইচআইভি নিয়ে কাজ করে জাতিসংঘের সংস্থা ইউএনএইডস ২০১৮ সালের জানুয়ারিতে প্রকাশিত প্রতিবেদনে বলেছে,  এশিয়ার দেশগুলোতে প্রাণঘাতী এইচআইভিতে আক্রান্ত হয়ে মৃত্যুর ঘটনায় বাংলাদেশের অবস্থা ১০ম। তালিকায় শীর্ষে রয়েছে ভারত।

মাইগ্রেশনের মাধ্যমে বাংলাদেশে এইডস ঝুঁকি বাড়ছে। আন্তর্জাতিক অর্থায়ন, সরকারি-বেসরকারি অর্থায়ন বাড়ানোর মাধ্যমে বাংলাদেশের এইডস আক্রান্তের ঝুঁকি কমানোর পাশাপাশি চিকিৎসা নিশ্চিত করা সম্ভব বলে এসব তথ্য তুলে ধরেন সেভ দ্য চিলড্রেনের উপ-পরিচালক শেখ মাসুদুল আলম। তিনি আরো বলেন, ২০১৪ সালে ৫০ শতাংশ টার্গেট গ্রুপকে কভারেজের আওতায় আনার চেষ্টা থাকলেও তা সম্ভব হয়নি। সারা বিশ্বের মতো বাংলাদেশেও টিবি রোগ থেকে এইডস হওয়ার ঝুঁকি রয়েছে। ১৭২টি সেন্টারের মাধ্যমে ১৪ হাজার মাদকাসক্ত, ২৮ হাজার ৬০০ যৌনকর্মী, ১ হাজার ১০৬ এইচআইভি আক্রান্তকে চিকিৎসা দেয়া সম্ভব হয়েছে। এইচআইভি আক্রান্ত রোগীদের সরকারি হাসপাতালগুলোতে চিকিৎসা দেয়া হচ্ছে। সরকারি হাসপাতালগুলোতে রোগ নির্ণয় পদ্ধতির সঙ্গে যদি এইচআইভি পরীক্ষা করার ব্যবস্থা যুক্ত করা যায় তাহলে এইচআইভি নির্ণয় করাটা আরও সহজ হবে। যখন বাংলাদেশে এইচআইভি আক্রান্তের ঝুঁকি বাড়ছে তখন অর্থ বরাদ্দ কমে যাচ্ছে।

এইডস কী এবং এইচআইভি কী: এইচআইভি একটি ভাইরাসের ছোট নাম। হিউমেন ইমিউনো ডেফিসিয়েন্সি ভাইরাস থেকে নাম হয়েছে এইচআইভি। এই ভাইরাসটা মানুষের শরীরে সংক্রমণ হলেই রোগ হয়ে যায় না। সংক্রমণ হয়ে রোগ হতে অনেক বছর লাগে। ১০ থেকে ১৫ বছর বা ২০ বছর পর এই রোগ হয়। এজন্য যাদের এইচআইভি আছে, তাদের অনেকের ক্ষেত্রে কোনো রোগ নেই। এই এইচআইভি ইনফেকশনের কারণে যখন কতগুলো লক্ষণ শরীরের মধ্যে দেখা দিতে শুরু করে- সেটা জ্বর, ওজন কমে যাওয়া, ডায়রিয়া হওয়া, টিবি রোগ হওয়া। এইচআইভির কারণে যখন মানুষের মধ্যে এই রোগগুলো দেখা দেয়, তখন একে এইডস বলে। এর মানে এইচআইভি পজিটিভ কেউ হলেও তার মধ্যে এটি কেরিয়ার (বহনকারী) হিসেবে থাকছে, তখনই এটি রোগ নয়। যখন এটা রোগে পরিণত হচ্ছে, তখন একে আমরা এইডস বলি বলে চিকিৎসকরা উল্লেখ করেন। বাংলাদেশে রিকশাচালকদের মধ্যে একটি গবেষণা চালিয়ে দেখা গেছে, তাদের মধ্যে শতকরা ৯০ ভাগ লোক এইডস কীভাবে ছড়ায় তা জানে না।

একজন মানুষের থেকে অন্য মানুষের শরীরে এইচআইভি কীভাবে ছড়ায়: এর তিনটি পদ্ধতি রয়েছে। এই তিনটির বাইরে কোনো পদ্ধতি নেই। একটি হলো, দুজন মানুষের শারীরিক মিলনের মাধ্যমে হচ্ছে। দ্বিতীয়, ইনজেকশনের মাধ্যমে হতে পারে, ইনজেকশন যদি শেয়ার করে বা রক্ত দেয়ার মাধ্যমে হতে পারে। তিন নম্বর হচ্ছে, মায়ের থেকে সন্তানের হতে পারে। মা যদি এইচআইভি পজিটিভ হয়, তখন এটি হতে পারে, তাও এর সম্ভাবনা খুব কম। ১০০ ভাগের এক ভাগও নয়, দশমিক পাঁচ শতাংশ সম্ভাবনা থাকে। এই দশমিক পাঁচ শতাংশের মধ্যে পড়ে গেলে সন্তানও এইচআইভি পজিটিভ হতে পারে। যৌন কার্যক্রমের মধ্যে নারী, পুরুষ, সমকামীদের মধ্যে ছড়িয়ে এইচআইভি ছড়িয়ে পড়ার হার বেশি বলে চিকিৎসকরা জানিয়েছেন।
 
এ ব্যাপারে স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের এইডস বিষয়ক কর্মসূচির লাইন ডিরেক্টর অধ্যাপক ডা. সামিউল ইসলাম মানবজমিনকে বলেন, এইডস রোগীর সুবিধা বৃদ্ধি করা হয়েছে। তারা এখন ১২টি সেন্টার থেকে সুবিধা নিতে পারছেন। প্রিভেনশন ওয়ার্ক এবং ট্রিটমেন্ট বা শনাক্তকরণ করে চিকিৎসা দেয়া হচ্ছে। সরকার ফ্রি ওষুধ দিচ্ছে। মায়েরা যাতে সুস্থ বাচ্চা দিতে পারেন, এমন কর্মসূচিও রয়েছে তাদের। তিনি জানান, দেশে এই পর্যন্ত আক্রান্তের সংখ্যা আনুমানিক ১২ থেকে ১৫ হাজার। মারা গেছেন ১৪০০ জন। এই পরিস্থিতিতে অন্যান্য দেশের মতো বাংলাদেশেও আজ বিশ্ব এইডস পালন করা হচ্ছে।
......... ফরিদ উদ্দিন আহমেদ
অবশ্যই দিতে হবে *
অবশ্যই দিতে হবে *
অন্যান্য খবর