দল পুনর্গঠনেই শুদ্ধি অভিযান চলবে বলে জানান সিলেট আওয়ামী লীগের নেতারা। তারা বলেন, পুনর্গঠনকালেই বিতর্কিতদের বাদ দিতে হবে কমিটি থেকে। এতে করে আগামীতে যে নেতৃত্ব আসবে সেই নেতৃত্ব হবে বিতর্ক মুক্ত। এজন্য তারা কেন্দ্রীয় নেতাদের হস্তক্ষেপ কামনা করেছেন। সিনিয়র নেতারা জানিয়েছেন- সিলেট আওয়ামী লীগের বর্তমান কমিটিতে তেমন বিতর্কিত নেই। এরপরও যারা নিজেদের কর্মকাণ্ডে বিতর্কিত হওয়ার পথে রয়েছেন তাদের নজরদারিতে রাখা হয়েছে। বিতর্কিত কর্মকাণ্ডের জন্য আসন্ন কমিটিতে অনেকেই বাদ পড়তে পারেন। আওয়ামী লীগের কেন্দ্রীয় সদস্য ও মহানগর সভাপতি বদরউদ্দিন আহমদ কামরান মানবজমিনকে জানিয়েছেন- সিলেট মহানগরে বিতর্কের মাত্রা কম।
এরপরও কিছু কিছু অভিযোগ রয়েছে। সেগুলো যাচাই করা হচ্ছে। সিলেটের আগামী নেতৃত্ব যাতে ত্যাগী ও পরীক্ষিত নেতাদের দিয়ে করা যায় সে দিকেই নজর রাখা হচ্ছে। আগামী নেতৃত্ব হবে- দুর্নীতি ও সন্ত্রাসমুক্ত। আগামী বৃহস্পতিবার সিলেট জেলা ও মহানগর আওয়ামী লীগের সম্মেলন। দীর্ঘ ৮ বছর পর এই সম্মেলনের আয়োজন করা হচ্ছে। সম্মেলনকে ঘিরে ইতিমধ্যে জেলা ও মহানগরের দুটি পদে অন্তত ২০ জন প্রার্থী প্রতিদ্বন্দ্বিতায় নেমেছেন। তাদের নিয়ে চুলচেরা বিশ্লেষণ চলছে সিলেটে। নতুন কমিটি গঠনকে সামনে রেখে ইতিমধ্যে নেতাকর্মীদের মধ্যে কাদা ছুড়াছুড়ি শুরু হয়েছে। সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে একেক নেতা একেক জনের বিরুদ্ধে বিষোদগার করছেন। এর মধ্যে কয়েকজনের বিরুদ্ধে গুরুতর অভিযোগ উঠেছে। টেন্ডারবাজি, ভূমি দখল, পাথর কোয়ারি নিয়ন্ত্রণ সহ নানা বিষয়ে এসব নেতাদের নাম উঠে এসেছে। সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে এই বিতর্কের কারণে কিছুটা উত্তাপ ছড়িয়েছে সিলেট আওয়ামী লীগের সম্মেলন। বিশেষ করে সাবেক কয়েকজন ছাত্রনেতাকে নিয়ে আলোচনা বেশি। এসব ছাত্রনেতারা বর্তমান সরকারের শাসনে সিলেটে এক তরফা প্রভাব খাটিয়েছেন। তারা গ্রুপিং রাজনীতিতে সক্রিয় ভূমিকা রাখছেন। এই গ্রুপিং রাজনীতির কারণে বর্তমান সরকারের শাসনামলে কয়েকটি হত্যাকাণ্ডের ঘটনা ঘটেছে। এছাড়া বিতর্কিত কর্মকাণ্ডের কারণে সিলেট জেলা ও মহানগর ছাত্রলীগের কমিটি বিলুপ্ত করা হয়েছে। আওয়ামী লীগের কেন্দ্রীয় নেতারা জানিয়েছেন- দলের হাইকমান্ড সিলেট আওয়ামী লীগের গ্রুপিং ও কোন্দল নিয়ে বিব্রত। এই গ্রুপিংয়ের কারনে সিলেটে বিগত দুই সিটি করপোরেশন নির্বাচনে নৌকার বিজয় নিশ্চিত হয়নি। ফলে গ্রুপিং রাজনীতির নিয়ন্ত্রকদের বিরুদ্ধে কেন্দ্রের অবস্থান সুস্পষ্ট। আওয়ামী লীগ সভানেত্রী ও সরকার প্রধান শেখ হাসিনার চলমান শুদ্ধি অভিযানে সিলেটের শীর্ষ নেতারা বিব্রত নন। বরং তারা প্রধানমন্ত্রীর এ অভিযানে সন্তুষ্ট। এবার সিলেটে কমিটি গঠনে এই শুদ্ধি অভিযান চান তারা। সিলেট জেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক শফিকুর রহমান চৌধুরী মানবজমিনকে জানিয়েছেন- ‘যারা ত্যাগী কর্মী তারা কখনোই টাকার পেছনে দৌড়ায় না। আওয়ামী লীগ হচ্ছে দেশের মানুষের সংগঠন। এই সংগঠনে কোনো দুর্নীতিবাজদের ঠাঁই হবে না। প্রধানমন্ত্রী শুদ্ধি অভিযানের যে উদ্যোগ নিয়েছে সেটিকে আমরাই শুধু নয়, দেশের মানুষ স্বাগত জানাচ্ছে। আমাদের উচিত হবে কমিটি পুনর্গঠনে এর বাস্তবায়ন ঘটানো। সিলেটে যে ৮ উপজেলায় নতুন কমিটি হয়েছে সেখানে বিতর্কিত ও দুর্নীতিবাজদের ঠাঁই দেয়া হয়নি। এই ধারা জেলা ও মহানগর আওয়ামী লীগের নতুন কমিটিতে বিরাজমান থাকবে বলে মনে করেন তিনি।’ এদিকে- বহিরাগতদের ব্যাপারে এবার শক্ত অবস্থানে সিলেটের আওয়ামী লীগ। বিগত দিনে বিভিন্ন সময় মন্ত্রী-এমপিদের আশীর্বাদ নিয়ে অনেক বহিরাগতরা সুবিধা নিয়েছে। এবার তারা আওয়ামী লীগের কমিটিতে ঢুকতে চায়। এজন্য তারা লবিংও চালাচ্ছে। এ নিয়ে বিব্রত হয়ে উঠেছেন সিলেটের নেতারা। সিলেট মহানগর আওয়ামী লীগের যুগ্ম সম্পাদক ফয়জুল আনোয়ার আলোয়ার জানিয়েছেন- বহিরাগতরা দলে এসে সুবিধা নিতে চাইলে কোনোভাবেই সেটি মেনে নেয়া হবে না। কারন- আওয়ামী লীগের নেতারা সাধারণ মানুষকে নিয়ে রাজনীতি করে। টাকার কাছে আওয়ামী লীগের নেতৃত্ব বিক্রি হয় না। কেউ হঠাৎ করে এসে ঢুকতে চাইলে সবাই মিলে তাকে প্রতিহত করতে হবে।