× প্রচ্ছদ অনলাইনপ্রথম পাতাশেষের পাতাখেলাবিনোদনএক্সক্লুসিভভারতবিশ্বজমিনবাংলারজমিনদেশ বিদেশশিক্ষাঙ্গনরকমারিমত-মতান্তরবই থেকে নেয়া তথ্য প্রযুক্তি শরীর ও মন চলতে ফিরতে কলকাতা কথকতাসেরা চিঠিইতিহাস থেকেঅর্থনীতি
ঢাকা, ১৯ এপ্রিল ২০২৪, শুক্রবার , ৬ বৈশাখ ১৪৩১ বঙ্গাব্দ, ১০ শওয়াল ১৪৪৫ হিঃ

‘রোহিঙ্গা শিশুদের শিক্ষা বঞ্চিত রাখা ভুল নীতি’

শেষের পাতা

মানবজমিন ডেস্ক
৪ ডিসেম্বর ২০১৯, বুধবার

রোহিঙ্গা শিশুদের শিক্ষার অধিকারের ওপর বিধিনিষিধ জরুরি ভিত্তিতে তুলে নিতে বাংলাদেশ সরকারের প্রতি আহ্বান জানিয়েছে মানবাধিকার বিষয়ক আন্তর্জাতিক সংগঠন  হিউম্যান রাইটস ওয়াচ। ২রা ডিসেম্বর এ বিষয়ে ৮১ পৃষ্ঠার একটি রিপোর্ট প্রকাশ করে তারা। এর শিরোনাম ‘আর উই নট হিউম্যান?’: ডিনায়াল অব এডুকেশন ফর রোহিঙ্গা রিফিউজি চিলড্রেন ইন বাংলাদেশ’। এতে বলা হয়, বাংলাদেশের ওইসব বিধিনিষেধের ফলে অন্যায়ভাবে রোহিঙ্গাদের প্রায় ৪ লাখ শরণার্থী শিশু তাদের শিক্ষার অধিকার থেকে বঞ্চিত হচ্ছে। এতে বলা হয়, শরণার্থী শিবিরে রোহিঙ্গা শিশুদের জন্য অর্থপূর্ণ শিক্ষা বিস্তারে সাহায্য বিষয়ক গ্রুপগুলোকে (এইড গ্রুপ) নিষেধাজ্ঞা দিয়েছে বাংলাদেশ। একই সঙ্গে রয়েছে আশ্রয় শিবিরের বাইরের স্কুলগুলোতে এসব শিশুর জন্য নিষেধাজ্ঞা। হিউম্যান রাইটস ওয়াচের নিজস্ব ওয়েবসাইটে এ বিষয়ে একটি রিপোর্ট প্রকাশ করা হয়েছে। ৮১ পৃষ্ঠার ওই রিপোর্টে প্রামাণ্য হিসেবে তুলে ধরা হয়েছে কক্সবাজারের শরণার্থী শিবিরে কীভাবে সাহায্য বিষয়ক গ্রুপগুলোকে বাধা দেয়া হচ্ছে।

রিপোর্টে আরো বলা হয়েছে, শরণার্থীদের আশ্রয় শিবিরে কোনো মাধ্যমিক পর্যায়ের শিক্ষা নেই। সাহায্য বিষয়ক গ্রুপগুলোকে বাংলা ভাষা শিক্ষা দেয়ার ক্ষেত্রে বাধা দেয়া হয়েছে। বাংলাদেশি কারিকুলাম ব্যবহারেও রয়েছে নিষেধাজ্ঞা। শরণার্থী শিবিরের বাইরে কোনো বেসরকারি বা সরকারি স্কুলে শিক্ষা অব্যাহত রাখার কোনো সুযোগ নেই রোহিঙ্গা শিশুদের জন্য। এ বিষয়ে হিউম্যান রাইটস ওয়াচের শিশু অধিকার বিষয়ক পরিচালক বিল ভ্যান এসভেল্ড বলেছেন, বাংলাদেশ এটা পরিষ্কার করে বলেছে যে, তারা অনির্দিষ্ট সময় পর্যন্ত রোহিঙ্গাদের এখানে রাখতে চায় না। কিন্তু শিশুদের শিক্ষা বঞ্চিত রাখার ফলে তাদের অনেক ক্ষতি হচ্ছে। একই সঙ্গে শরণার্থীদের সংকট দ্রুততম সময়ে সমাধানও হচ্ছে না। তিনি আরো বলেন, সীমান্ত খুলে দিয়ে এবং আশ্রয় দিয়ে অসংখ্য রোহিঙ্গা শরণার্থীর জীবন রক্ষা করেছে বাংলাদেশ সরকার। কিন্তু রোহিঙ্গা শিশুদের শিক্ষাবঞ্চিত রাখার ভুলনীতি তাদের বন্ধ করা উচিত।
হিউম্যান রাইটস ওয়াচ বলেছে, তারা ওই রিপোর্ট করতে গিয়ে রোহিঙ্গা ১৬৩ জন শিশু, পিতামাতা, শিক্ষক, সরকারি কর্মকর্তা, মানবিক গ্রুপগুলোর স্টাফ, জাতিসংঘ এজেন্সিগুলোর কর্মরতদের সাক্ষাৎকার নিয়েছে। এ ছাড়া সরকারের পলিসি ডকুমেন্ট এবং সহায়তা পরিকল্পনা নিয়ে তারা বিশ্লেষণ করেছে। তারা গবেষণা করেছে কীভাবে সহায়ক গ্রুপগুলো শিবিরের ভেতরে শিশুদের শিক্ষা কার্যক্রম পরিচালনা করে, এক্ষেত্রে তারা সরকারের বিধিনিষেধ অনুসরণ করে। এতে আরো বলা হয়, এর আগের নৃশংসতা থেকে পালানো জাতিগত রোহিঙ্গা প্রজন্মগুলোকে আশ্রয় দিয়েছে বাংলাদেশ। তবে তাদের আনুষ্ঠানিক শিক্ষা কখনো অনুমোদন করেনি। সর্বশেষ নৃশংসতা থেকে পালানো আরো কমপক্ষে ৭ লাখ ৪০ হাজার রোহিঙ্গার জন্য সীমান্ত উন্মুক্ত করে দেয় বাংলাদেশ। কিন্তু এসব শিবিরে বাংলাদেশ কারিকুলামের অনানুষ্ঠানিক সংস্করণ ব্যবহারে এইড গ্রুপগুলোর বিরুদ্ধে নিষেধাজ্ঞা রয়েছে। বাংলাদেশ দাবি করেছে, দুই বছরের মধ্যে রোহিঙ্গারা ফিরে যাবে মিয়ানমারে।
এখনো মিয়ানমারে রোহিঙ্গাদের নিরাপদে, স্বেচ্ছায় ও মর্যাদার সঙ্গে ফিরে যাওয়ার মতো পরিস্থিতি সৃষ্টি হয়নি বলে বার বার বলে যাচ্ছে জাতিসংঘের শরণার্থী বিষয়ক এজেন্সি ইউএনএইচসিআর, জাতিসংঘের অন্যান্য এজেন্সিগুলো। বাংলাদেশ দু’দফা শরণার্থীদের ফেরত পাঠানোর উদ্যোগ নেয়া সত্ত্বেও কোনো শরণার্থী স্বেচ্ছায় ফিরে যেতে রাজি হয়নি। ওদিকে শরণার্থী শিবিরের ভেতরে নিজেদের কারিকুলাম ব্যবহার করতে অনুমতি দিতে অস্বীকৃতি জানিয়েছে মিয়ানমার। ফলে একটি অনানুষ্ঠানিক শিক্ষা কর্মসূচি হাতে নিয়েছে জাতিসংঘের শিশু বিষয়ক এজেন্সি ইউনিসেফ। এই কর্মসূচি অনুমোদনের জন্য ২০১৮ সালের এপ্রিলে সরকারের কাছে জমা দেয়া হয়েছে। বাংলাদেশে সরকারের আনুষ্ঠানিক শিক্ষার ক্ষেত্রে যে নিষেধাজ্ঞা রয়েছে তা এড়ানোর জন্য এই কর্মসূচি ডিজাইন করা হয়েছে। কিন্তু প্রথম দুটি লেভেল অনুমোদন দিতে এক বছর সময় নিয়েছে ঢাকা। এ দুটি লেভেল হলো প্রি-স্কুল এবং প্রাথমিক বিদ্যালয়ের সূচনা পর্যায়ের। কিন্তু এখনো এর চেয়ে উচ্চতর তিনটি লেভেলের অনানুষ্ঠানিক কর্মসূচি অনুমোদন দেয়নি সরকার। অবকাঠামোগত শিক্ষার সুযোগ যেখানে নেই সেখানে অনানুষ্ঠানিক শিক্ষা কর্মসূচি খুবই গুরুত্বপূর্ণ। যদি সরকার অনানুষ্ঠানিক শিক্ষার পাঁচটি লেভেলের সব ক’টি অনুমোদন দেয় তবুও শিশুরা জাতীয় পর্যায়ের পরীক্ষায় অংশ নিতে পারবে না অথবা মাধ্যমিক স্কুলের মাধ্যমে তাদের শিক্ষাকে অব্যাহত রাখতে পারবে না।
ওদিকে রোহিঙ্গাদের নাগরিকত্ব প্রত্যাখ্যান করে মিয়ানমার সরকার। তাদের চলাচলের স্বাধীনতা সীমিত। শিশুদের স্কুলে যোগ দেয়ায় বাধা রয়েছে সেই ২০১২ সাল থেকে। কিন্তু রোহিঙ্গাদের নিরাপদে, স্বেচ্ছায় এবং মর্যাদার সঙ্গে দেশে ফেরার বিষয়টি নিশ্চিত করতে বাধ্য মিয়ানমার। তাদের ওপর ভয়াবহ নৃশংসতার জন্য যারা দায়ী তাদের বিচার করতে বাধ্য তারা।
হিউম্যান রাইটস ওয়াচ আরো লিখেছে, আনুষ্ঠানিক শিক্ষায় নিষেধাজ্ঞা বাংলাদেশের নিজের স্বার্থের জন্য ক্ষতিকর। রোহিঙ্গাদের নতুন প্রজন্মকে এ অবস্থা ধ্বংস করে দেবে। সার্বিকভাবে এতে রোহিঙ্গা সম্প্রদায়ের ভবিষ্যৎ শেষ হয়ে যাবে। শিক্ষাবঞ্চিত শিশুরা শিশুশ্রম, বাল্যবিয়ে, দারিদ্র্যের ফাঁদে পড়ার মতো বড় ঝুঁকিতে থাকে। তারা তাদের সমাজের সঙ্গে পুরোপুরি অংশগ্রহণে সক্ষম হয় না। যেসব শরণার্থী শিশু শিক্ষা পায় তারা অপরাধী চক্র ও সশস্ত্র গ্রুপের শিকারে কম পড়ে। তারা তাদের সম্প্রদায়ের কল্যাণে অবদান রাখতে পারে। আন্তর্জাতিক মানদণ্ড অনুযায়ী, শিক্ষা বিষয়ক কর্মসূচি পরিকল্পনা, বাস্তবায়ন ও নজরদারিতে অংশগ্রহণ করা উচিত শরণার্থীদের। তাই মিয়ানমারের উচিত অবিলম্বে এসব আশ্রয় শিবিরে তাদের কারিকুলাম অনুমোদন দেয়া। আর বাংলাদেশের উচিত এইড গ্রুপগুলোকে গুণগত শিক্ষা দিতে অনুমোদন দেয়া। যাতে বাংলাদেশ ও মিয়ানমারের কারিকুলাম ব্যবহার করে তাদেরকে শিক্ষা দেয়া যায়।
অবশ্যই দিতে হবে *
অবশ্যই দিতে হবে *
অন্যান্য খবর