যেখানে আগের দিন সোনালি হাসি হেসেছিলেন দীপু চামকা। কাল সেই সাদদোপাতো স্পোর্টস কমপ্লেক্সে আরো তিনটি স্বর্ণ জেতে বাংলাদেশ। তিন স্বর্ণের তিনটিই এসেছে কারাতে থেকে। কাঠমান্ডুর ঠাণ্ডা সকালে বাংলাদেশের আড়মোড়া ভাঙে কুমিতে অনূর্ধ্ব-৬১তে আল আমিনের স্বর্ণ জয়ের মধ্য দিয়ে। বিজয়ের মাসে পাকিস্তানের জাফরকে ৭-৩ পয়েন্টে হারান তিনি। এর আগে সেমিফাইনালে নেপালের রাজীব পোদাসানিকে হারিয়ে রৌপ্য নিশ্চিত করেন আল আমিন। আল আমিনের স্বর্ণপদকের পরেই কারাতের ম্যাটে আবার বাংলাদেশের উল্লাসের উপলক্ষ এনে দেন মারজান আক্তার প্রিয়া। কুমি অনূর্ধ্ব ৫৫ কেজিতে পাকিস্তানের কাউসার সানাকে ৪-৩ পয়েন্টে হারান।
কিছুক্ষণ পর কুমিতে অনূর্ধ্ব-৬১ কেজিতে হুমায়রা আক্তার নেপালের আনু গুরংকে ৫-২ পয়েন্টে হারান।
আগের দিন তায়কোয়ান্দোতে স্বর্ণ আসার পর এই ডিসিপ্লিনটিতে বাড়তি নজর ছিল সবার। অ্যাথলেটিক্স বাদ দিয়ে সবার দৃষ্টি ছিল সাদদোপাতোতে। তায়কোয়ান্দোতে প্রত্যাশা পূরণে ব্যর্থ হলেও এদিন দু’হাত ভরে দিয়েছে কারাতে। গেমসের তৃতীয় দিনে বাংলাদেশের প্রাপ্তির প্রায় সবকিছুই এসেছে এই ডিসিপ্লিনে। দিনের শুরুটা হয় আল আমিনের স্বর্ণ জয়ের মধ্যদিয়ে। আল আমিনের স্বর্ণই আত্মবিশ্বাসী করে তুলেছে জানিয়ে কুমিতে স্বর্ণ জয়ী মারজান আক্তার প্রিয়া বলেন, আমরা এখানে যারা এসেছি সবাই দেশে যার যার ইভেন্টে সেরা। একটু ভুলের জন্য আগের দিন অনেকে স্বর্ণ মিস হয়েছে। গতকাল যখন সকালে একটি স্বর্ণ এলো, তখন আমার আত্মবিশ্বাস বাড়লো। একটু চেষ্টা করলে আমিও জিততে পারবো। আত্মবিশ্বাসের সঙ্গে খেলে শেষ পর্যন্ত সফল হয়েছি।’ ফাইনালে এক প্রকার মধুর প্রতিশোধ নিয়েছেন মারজান। নভেম্বরে ঢাকায় সাফ কারাতে চ্যাম্পিয়নশিপে নেপালের আনুঙের কাছে হেরে স্বর্ণ হাতছাড়া হয়েছিল তার।
ফেনীর দাগনভূঁঞার এই কন্যা বেড়ে উঠেছেন ঢাকার শান্তিনগরে। ভিকারুননিসা নূন স্কুল ও কলেজে পড়া অবস্থাতেই খেলাধুলার দিকে ঝোঁকেন মারজান। শুরুর দিকে অ্যাথলেটিক্সে থাকলেও পরে কারাতেতে মনোযোগী হন। ২০১৬ সালে কারাতে শুরু করেন। ২০১৮ সালে এই ইভেন্টে চ্যাম্পিয়ন হন। গেমসে আগের দিনই পদকের খাতা খোলেন হোমায়রা আক্তার অন্তরা। সেই অন্তরা গতকাল স্বর্ণ নিশ্চিত হওয়ার পর হাফ ছেড়ে বাঁচলেন। তিনি বলেন ‘গত দুই রাত একদম ঘুমাতে পারিনি। খুব স্বপ্ন নিয়ে এসেছিলাম স্বর্ণ জয়ের। সেই স্বপ্ন পূরণ হওয়ায় এখন তৃপ্ত।’ হুমায়রা বলেন, ‘আমি জিতেছি এটা ভাবিনি। আমার দেশ একটি স্বর্ণ পেল। আমার দেশের পতাকা উঁচুতে উঠলো এটা ভেবেই চোখে পানি এসেছে।’ অন্তরা তার সাফল্যের পেছনে কোচদের বেশি কৃতিত্ব দিলেন, ‘কোচরা আমাদের চেয়ে বেশি পরিশ্রম করেছেন। আমরা অনেক বিষয় বুঝিনি তারা কষ্ট করে কৌশল শিখিয়েছেন। কোচরা আমার উপর বিশ্বাস রেখেছেন।
সেই বিশ্বাসের প্রতিদান দিতে পেরে ভালো লাগছে।’ আত্মত্যাগ রয়েছে তার নিজেরও। কারাতের ক্যাম্পের জন্য তিনি মেডিকেল ও ভার্সিটিতে ভর্তি পরীক্ষা দিতে পারেননি। হুমায়রা বলেন, ‘সবারই স্বপ্ন থাকে ভালো একটা বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়ার। দেশের সম্মানের জন্য আমি আমার স্বপ্ন বিসর্জন দেয়েছি। এখন আমাকে বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তির সুযোগ দেয়া হোক।’ তৃতীয় দিনে বাংলাদেশের স্বর্ণের সূচনাকারী আল আমিন বলেন, ‘এ আবেগ আসলে ভাষায় প্রকাশ করার মতো নয়। দেশের জন্য কিছু নিয়ে আসতে পেরেছি, বিদেশের মাটিতে দেশের পতাকা তুলে ধরতে পেরেছি, এ জন্য গর্ববোধ হচ্ছে আমার।’