× প্রচ্ছদ অনলাইনপ্রথম পাতাশেষের পাতাখেলাবিনোদনএক্সক্লুসিভভারতবিশ্বজমিনবাংলারজমিনদেশ বিদেশশিক্ষাঙ্গনরকমারিমত-মতান্তরবই থেকে নেয়া তথ্য প্রযুক্তি শরীর ও মন চলতে ফিরতে কলকাতা কথকতাসেরা চিঠিইতিহাস থেকেঅর্থনীতি
ঢাকা, ২৬ এপ্রিল ২০২৪, শুক্রবার , ১৩ বৈশাখ ১৪৩১ বঙ্গাব্দ, ১৭ শওয়াল ১৪৪৫ হিঃ

প্রকাশ্যে অপহরণ, আতঙ্কে ইরাকের বিক্ষোভকারীরা

বিশ্বজমিন

মানবজমিন ডেস্ক
(৪ বছর আগে) ডিসেম্বর ৪, ২০১৯, বুধবার, ১০:৩৮ পূর্বাহ্ন

সম্প্রতি গণবিক্ষোভের মুখে ইরাকের প্রধানমন্ত্রী হিসেবে পদত্যাগ করেছেন আদেল আব্দুল মাহদি। তার পদত্যাগ বিক্ষোভকারীদের জন্য বড় ধরনের জয় হিসেবে দেখা হয়েছিল। কিন্তু অচিরেই সে জয়ের উল্লাস বাতাসে মিলিয়ে গেছে। তার জায়গায় নেমে এসেছে শিহরণ জাগানিয়া ভীতি ও আতঙ্ক। রাজধানী বাগদাদ থেকে প্রকাশ্যে অপহরণ করা হচ্ছে বিক্ষোভকারীদের। হুমকি দেয়া হচ্ছে, অনুসরণ করা হচ্ছে, নজরদারিতে রাখা হচ্ছে। এসব অপহরণকারী ও অনুসরণকারীরা কাদের হয়ে কাজ করছে সে বিষয়ে সুনির্দিষ্টভাবে কোনো তথ্য প্রকাশ পায়নি। তবে তাদের উদ্দেশ্য পরিষ্কার- সরকার বিরোধীদের দমানো।
বিক্ষোভকারীদের দাবি, ইরানপন্থি মিলিশিয়ারা এসব কর্মকাণ্ড চালাচ্ছে। বৃটিশ গণমাধ্যম দ্য টাইমসের এক প্রতিবেদনে এমনটা বলা হয়েছে।

মাহদির পদত্যাগের পর রাতভর উল্লাস করেন ইরাকিরা। কিন্তু বিক্ষোভ গুঁটিয়ে বাড়ি ফিরে যাননি তারা। প্রধানমন্ত্রীর পর পুরো সরকার ব্যবস্থা পরিবর্তনের দাবি তোলেন তারা। এরপর থেকেই অপহরণ, হুমকি ও ভীতি প্রদর্শনের শিকার হচ্ছেন তারা। প্রসঙ্গত, দুই মাসের বেশি সময় ধরে দুর্নীতি, নিম্নমানের সরকারি সেবা, বেকারত্ব, দেশের রাজনীতিতে বিদেশি প্রভাবের বিরুদ্ধে বিক্ষোভ চলছে ইরাকে। বিক্ষোভে সরকার নির্মম অবস্থান নিয়েছে। নিরাপত্তাবাহিনীর গুলিতে প্রাণ হারিয়েছে চার শতাধিক মানুষ। আহত হয়েছেন কয়েক হাজার। তবে বিক্ষোভকারীদের দৃঢ় অবস্থানের মুখে নতি স্বীকার করে পদত্যাগ করতে বাধ্য হয়েছেন মাহদি।

বিক্ষোভকারীরা অভিযোগ করেছেন, সাম্প্রতিক অপহরণ ও ভীতি প্রদর্শনের পেছনে ইরান-সমর্থিত মিলিশিয়ারা জড়িত। তারা নিজেদের পরিচয় প্রকাশ না করলেও, সরকারকে সাহায্য করতেই এসব করছে, তা স্পষ্ট। ইরাকের রাজনীতিতে ইরানের প্রভাব বিস্তর। বিক্ষোভে এর আগেও ইরানপন্থি মিলিশিয়াদের বিরুদ্ধে প্রভাব খাটানোর অভিযোগ উঠেছে। স্নাইপার মোতায়েন করে শত শত বিক্ষোভকারীকে গুলি করার অভিযোগ উঠেছে। সরকারি এক তদন্তে স্নাইপার মোতায়েনের প্রমাণও পাওয়া গেছে। তবে তার সঙ্গে ইরানের যোগসাজশের কোনো প্রমাণ পাওয়া যায়নি। বর্তমানে এ শতকের সবচেয়ে বড় রাজনৈতিক সংকটের সম্মুখীন ইরান। এ দেশটিতেও চলছে সরকারবিরোধী বিক্ষোভ। তা কঠোর হস্তে দমন করছে কর্তৃপক্ষ। তবে ইরাকে বিক্ষোভকারীদের জয় ইরানিদের উৎসাহ জোগাতে পারে। ইরাকে শৃঙ্খলা ফিরিয়ে আনা তেহরানের জন্য গুরুত্বপূর্ণ।

ইরাকের তরুণ এক নারী বিক্ষোভকারীকে উদ্ধৃত করে দ্য টাইমস জানায়, সম্প্রতি পুলিশের সামনে দিয়ে বেশ কয়েকটি গাড়ি এসে তাকে চারদিক থেকে ঘিরে ফেলে। পিস্তলের ভয় দেখিয়ে তাকে তুলে নেয়া হয়। পুলিশ কিছুই করেনি। তিনি জানান, তাকে চোখ বাঁধা অবস্থায় বেশ কয়েকদিন আটকে রাখা হয়েছিল। তাকে এক ভিডিওতে বলতে বাধ্য করা হয় যে, বিদেশি কোনো শক্তি তাকে বিক্ষোভে অংশ নিতে বাধ্য করেছে। তাকে ছেড়ে দেয়ার সময় অপহরণকারীরা তাকে নজরদারিতে রাখা হবে বলে সতর্ক করে। এমনকি ফের বিক্ষোভে অংশ নিলে মেরে ফেলার হুমকিও দেয়া হয়। তিনি বলেন, আমি নিজের ঘর থেকে বের হতে পারছি না। মূল দরজা পর্যন্তও না।

বাগদাদ ইউনিভার্সিটির প্রেস অফিসার আম্মার আব্দুল হাসান (৩৩) জানান, তাকে কালো একটি জিপ অনুসরণ করেছে একাধিকবার। একবার তিনি ও তার চার-পাঁচজন বন্ধু গাড়িতে করে মানসৌর শহরতলীর একটি রেস্তোরাঁয় খেতে বসেন। সেখান থেকে তাদের অপহরণ করা হয়। তিনি জানান, অপহরণকারীরা তাদের গাড়িতে করে দূরে কোথাও নিয়ে যায়। পথিমধ্যে তার দুই নারী বন্ধুকে ছেড়ে দেয়া হয়। কিন্তু তাদের মারধর করা হয়। তার শার্ট ছিড়ে ফেলে সেটা দিয়ে তাদের চোখ বেঁধে এক অচেনা ভবনে নিয়ে যাওয়া হয়। সেখানে তাদের ফোন ছিনিয়ে নিয়ে জিজ্ঞাসাবাদ করা হয়। তাকে ছেড়ে দেয়ার আগে ফের বিক্ষোভে না যেতে ও সেনাবাহিনীর বিরোধিতা না করতে হুঁশিয়ারি দেয়া হয়।

উল্লেখ্য, বিক্ষোভের প্রাথমিক পর্যায়ে ইরানপন্থি মিলিশিয়াদের স্নাইপার মোতায়েনের অভিযোগের পর পর ইরাকের সেনাবাহিনী ও অন্যান্য নিরাপত্তাবাহিনীও কঠোর হওয়া শুরু করে। বিক্ষোভকারীদের মাথা ও বুক লক্ষ্য করে উন্মুক্ত গুলি ছোড়ার অভিযোগ ওঠে তাদের বিরুদ্ধে। গত মাসের শেষের দিকে ইরানি কনস্যুলেটে আগুন লাগিয়ে দেয় বিক্ষোভকারীরা। এরপর তিন দিনে নিরাপত্তাবাহিনীর গুলিতে প্রাণ হারান প্রায় ৬০ জন। ফাঁকা গুলি চালানোর নির্দেশ দেয়ায় এক কমান্ডারের বিরুদ্ধে গ্রেপ্তারি পরোয়ানা জারি হয়। এরপর থেকে সাদা পোশাকের নিরাপত্তাকর্মী বা মিলিশিয়াদের তৎপরতা ব্যাপক হারে বৃদ্ধি পেয়েছে।

এদিকে, সোমবার প্রকাশিত এক প্রতিবেদনে মানবাধিকার বিষয়ক সংগঠন হিউম্যান রাইটস ওয়াচ (এইচআরডব্লিউ) জানিয়েছে, বিক্ষোভের শুরু থেকে এখন পর্যন্ত কয়েকশ’ মানুষ অপহরণের শিকার হয়েছেন। এদের মধ্যে বহু আইনজীবী ও সাংবাদিকও রয়েছেন। ইরাকি হাই কমিশন ফর হিউম্যান রাইটস গত মাসে জানায়, ২১ থেকে ২৪শে নভেম্বরের মধ্যে অন্তত ৯৩ জন বিক্ষোভকারীকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে। এছাড়া, প্রতিনিয়তই অপহরণের ঘটনা ঘটছে। এইচআরডব্লিউ জানায়, অক্টোবরের ৭ তারিখ থেকে নিখোঁজ রয়েছেন অন্তত সাত জন। এদের মধ্যে দুজন হচ্ছেন সাংবাদিক মুন্তাদহার আল-জাইদির ভাই ও কিশোর ভাতিজা। তিনি সাবেক মার্কিন প্রেসিডেন্ট জর্জ ডব্লিউ বুশের দিকে জুতা নিক্ষেপ করে আন্তর্জাতিক পরিচিতি পেয়েছিলেন। বর্তমান বিক্ষোভেও তার বিস্তৃত ভূমিকা রয়েছে। তিনি জানান, তার ভাই ও ভাতিজার অপহরণের পর তার কাছে অপরিচিত এক নম্বর থেকে ফোন এসেছিল। ফোনকারী বলেছিল, তাদের ইরাকি গোয়েন্দাদের একটি কারাগারে আটকে রাখা হয়েছে।

অপহরণের শিকার হওয়া বহু ব্যক্তি ভয়ে এইচআরডব্লিউ’র সঙ্গে কথা বলতে রাজি হয়নি। অনেককে ছেড়ে দেয়ার আগে আদালতে হাজির করা হয়েছিল। বলা হয়েছিল, পুলিশ তাদের আটক করেছে। বাকিদের কারা তুলে নিয়েছে বা ছেড়ে দিয়েছে এ বিষয়ে কিছুই জানা যায়নি। এইচআরডব্লিউ’র মধ্যপ্রাচ্য অঞ্চলের পরিচালক সারাহ লিয়াহ বলেন, সরকার বা সশস্ত্র গোষ্ঠী যারাই এসব অপহরণ করুক না কেন, অপহরণ ঠেকানোর দায় সরকারের।
অবশ্যই দিতে হবে *
অবশ্যই দিতে হবে *
অন্যান্য খবর