× প্রচ্ছদ অনলাইনপ্রথম পাতাশেষের পাতাখেলাবিনোদনএক্সক্লুসিভভারতবিশ্বজমিনবাংলারজমিনদেশ বিদেশশিক্ষাঙ্গনরকমারিমত-মতান্তরবই থেকে নেয়া তথ্য প্রযুক্তি শরীর ও মন চলতে ফিরতে কলকাতা কথকতাসেরা চিঠিইতিহাস থেকেঅর্থনীতি
ঢাকা, ২৬ এপ্রিল ২০২৪, শুক্রবার , ১৩ বৈশাখ ১৪৩১ বঙ্গাব্দ, ১৭ শওয়াল ১৪৪৫ হিঃ

বাতাসে বিষ

এক্সক্লুসিভ

ইকবাল আহমদ সরকার, গাজীপুর থেকে
৫ ডিসেম্বর ২০১৯, বৃহস্পতিবার

গাজীপুরের বাতাসে উড়ছে বিষ আর বিষ। দূষণ এখন চরমে। বায়ুদূষণের মাত্রা এখন রাজধানী ঢাকাকেও ছাড়িয়ে গেছে। ঢাকার পাশের এই মহানগরে ধুলা আর ধোঁয়ার ঘনত্ব বাড়ছেই। ধুলোমাখা রাজপথে পায়ে হাঁটারও পরিবেশ নেই। শ্বাস-প্রশ্বাসে বিশুদ্ধ বাতাস নেয়ার সুযোগ নেই। এতে মারাত্মক স্বাস্থ্য ঝুঁকিতে পড়ছেন নগরবাসী ও যানবাহনে চলাচলকারী মানুষ। এই দূষণ রোধে পরিবেশ অধিদপ্তর ও সিটি করপোরেশনের দীর্ঘ কিংবা স্বল্প মেয়াদি তেমন কোনো উদ্যোগই চোখে পড়ছে না নগরবাসীর।
তবে পরিবেশ অধিদপ্তরের কর্মকর্তারা বলছেন, এই দূষণ থেকে রক্ষায় সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষকে পানি ছিটানোর তাগাদাসহ চিঠি দেয়া হয়েছে। অবৈধ ইটভাটায় অভিযান পরিচালনা করা হচ্ছে। সিটি করপোরেশনের মেয়র বলছেন, বায়ূদূষণ থেকে রক্ষা করে পরিবেশবান্ধব নগর গড়তে তাদের রয়েছে নানা উদ্যোগ।
স্থানীয় বাসিন্দা, পথচারী ও যাত্রী সাধারণের অভিযোগ, গাজীপুরের ঢাকা-ময়মনসিংহ ও ঢাকা-টাঙ্গাইল মহাসড়কে যানজটের ভোগান্তির পাশাপাশি প্রচণ্ড বায়ুদূষণ এখন নিত্য সঙ্গী। এই দুটি মহাসড়কে বিআরটি প্রকল্প, সাসেক প্রকল্প চলমান থাকায় এখানে প্রতিনিয়ত দূষণ হচ্ছে। নগরবাসীর অভিযোগ, এই ধুলাবালি আমাদের নাকে-মুখে যাচ্ছে, আর এতে আমাদের আয়ু কমছে। বাইরে বের হয়েই ধুলাবালিতে অতিষ্ঠ হয়ে উঠেছেন সবাই। বাড়ছে স্বাস্থ্য ঝুঁকি। সড়ক-মহাসড়কসহ নগরজুড়ে নানা ধরনের উন্নয়ন ও নির্মাণকাজ চলমান থাকায় সেসবের সৃষ্ট ধুলা আর এবং দূষণযুক্ত আনফিট গাড়ি, কল-কারখানা ও ইটভাটার ধোঁয়ায় আরো বেশি করে দূষণ হচ্ছে। বর্তমানে গাজীপুরে বায়ুদূষণের মূল কারণ ইটভাটা এবং সড়ক নির্মাণের চলমান কাজ। রিআরটিএ প্রকল্পের নির্মাণকাজ, বেহাল ভাঙাচোরা রাস্তাঘাট, ইটভাটার ধোঁয়ার কারণে এখানে বায়ুদূষণের হার মারাত্মক পর্যায়ে পৌঁছেছে বলে মনে করছেন পরিবেশবিদসহ সাধারণ মানুষ। গাজীপুর জেলায় ইটভাটা আছে ২৯০টি। যেখানে নিয়ম অনুযায়ী সিটি এলাকায় কোনো ইটভাটা থাকার কথা নয়। অনেক কল- কারখানা থেকেও নির্গত হচ্ছে বিষাক্ত কালো ধোঁয়া। গাজীপুর শহরের বাতাসেও ক্ষুদ্র বস্তু কণিকার পরিমাণ মানমাত্রার চেয়ে কয়েক গুণ বেশি।
জেলার চান্দনা চৌরাস্তা থেকে টঙ্গী, কড্ডা, নাওজোড়, কোনাবাড়ি এবং চন্দ্রায় এই দূষণের হার বেশি। মূলত নির্মাণ কাজের ইট-সুরকি ও বালু সড়কের পাশেই ফেলে রাখা হচ্ছে। ফলে সেখান থেকে উড়ছে বিপুল পরিমাণ ধুলা। সড়ক-মহাসড়কের নির্মাণকাজ ছাড়াও এই শিল্প এলাকায় অবকাঠামো নির্মাণ, শুষ্ক মৌসুমে ইটভাটা, কলকারখানা, যানবাহনের ধোঁয়ার কারণে দূষণ বেশি হয়ে থাকে এই এলাকায়। বায়ুদূষণের ফলে শ্বাসনালির সমস্যা, ফুসফুসে সমস্যা, অ্যাজমার ঝুঁকি বাড়ছে ক্রমাগত। এই অবস্থায় গাজীপুর সিটি করপোরেশন এবং পরিবেশ অধিদপ্তর জেলা প্রশাসন ও পুলিশ বিভাগের সমন্বয়ে মানুষকে স্বাস্থ্য ঝুঁকি থেকে রক্ষা ও প্রাকৃতিক পরিবেশ বাঁচাতে দ্রুত কার্যকর ব্যবস্থা নেবে বলে আশা করছেন সবাই।
মেট্রোপলিটন পুলিশের ট্রাফিক কর্মকর্তা মো. মাজহারুল ইসলাম জানান, প্রচণ্ড ধুলাবালির কারণে সড়ক- মহাসড়কের যানবাহন পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে যারা মাঠ পর্যায়ে কাজ করছেন বিশেষ করে কনস্টেবল ও সার্জেন্ট, তারা কয়েকদিন পর পরই অসুস্থ হয়ে পড়ছেন। অসুস্থ পরিবেশে দায়িত্ব পালন করে নানা রোগে আক্রান্তের পাশাপাশি ড্রেস নিয়েও বিড়ম্বনায় পড়তে হচ্ছে তাদের। আবার প্রচণ্ড ধুলাবালির কারণে ধোঁয়াশা সৃষ্টি হচ্ছে। এতে করে যারা গাড়ি চালাচ্ছেন তাদের সমস্যা হচ্ছে, আমাদেরও সমস্যা হচ্ছে। সঠিকভাবে সিগন্যাল দেয়া যাচ্ছে না। সকালে ইউনিফরম পরলে আর বিকালে ব্যবহার করা যাচ্ছে না। সামগ্রিকভাবে খুবই অস্বস্তিকর পরিবেশ। তিনি আরো বলেন, গাজীপুরের মতো এত পরিবেশ দূষণ পৃথিবীর আর কোথাও আছে বলে আমার মনে হয় না।
এ বিষয়ে ধুলোবালির দূষণ থেকে রক্ষায় পরিবেশ অধিদপ্তরের কার্যকরী তেমন কোনো উদ্যোগ চোখে না পড়লেও এই দপ্তরের জেলা কর্মকর্তা উপ-পরিচালক আব্দুস সালাম সরকার জানান, দূষণরোধে অবৈধ ইটভাটায় অভিযান পরিচালনা করা হচ্ছে। পানি ছিটানোর তাগাদা দিয়ে চিঠি দেয়া হয়েছে মহাসড়কের নির্মাণ কাজে জড়িত সংশ্লিষ্ট প্রকল্প কর্তৃপক্ষকে।
গাজীপুর সিটি করপোরেশনের মেয়র অ্যাডভোকেট মোহাম্মদ জাহাঙ্গীর আলম জানান, এই ধুলাবালিতো অবশ্যই পরিবেশের জন্য ক্ষতিকারক। আর যাতে দূষণ না হয় এবং এই সিটিকে পরিবেশবান্ধব সিটি হিসেবে গড়ে তুলতে তাদের রয়েছে নানা উদ্যোগ। আমাদের সড়ক-মহাসড়ক দিয়ে লাখ লাখ মানুষ যাতায়াত করে, বিশেষ করে রোগী থেকে শুরু করে ছোট্ট বাচ্চা পর্যন্ত। সে হিসেবে আমরা সড়ক ও জনপদ বিভাগসহ যারা সড়কে কাজ করছে তাদেরকে লিখিত ভাবে ও মৌখিক ভাবে বলেছি, তারা যাতে পরিবেশবান্ধব ভাবে কাজ করতে যা যা করণীয় তাই যেন করেন। আমরা এসবের বিরুদ্ধে অভিযানও চালাচ্ছি। এরপরও যদি পরিবেশবান্ধব করে কাজ না করেন তাহলে আমরা আরো কঠোর পদক্ষেপ নেবো।
অবশ্যই দিতে হবে *
অবশ্যই দিতে হবে *
অন্যান্য খবর