এক মাস পিছিয়ে ২রা ডিসেম্বর থেকে সারা দেশে নতুন সড়ক আইন প্রয়োগের নির্দেশনা রয়েছে। সে মোতাবেক ঢাকায় এই আইন প্রয়োগ শুরু হয়েছে। কিন্তু চট্টগ্রামের কোথাও তিনদিনেও এই নতুন আইন প্রয়োগ হয়নি সড়কে। এ নিয়ে নানা অজুহাত দেখাচ্ছে সিএমপির ট্রাফিক বিভাগ। এ বিভাগের কর্মকর্তারা বলছেন, আরেকটু দেখেশুনে তারা নতুন সড়ক আইন প্রয়োগের কথা ভাবছেন। নতুন সড়ক আইন প্রয়োগের জন্য এখনো তেমন কোনো সিদ্ধান্তও পাননি বলে জানান তারা। বুধবার সকালে সিএমপির ট্রাফিক বিভাগের উপ-কমিশনার (উত্তর) আমির জাফর এমন কথা বললেও ২রা ডিসেম্বর সোমবার নতুন সড়ক আইন প্রয়োগের প্রথম দিন বলেছিলেন, নতুন সড়ক আইনে জরিমানার টাকার অঙ্ক উল্লেখসহ স্লিপ না থাকায় আইন প্রয়োগ করা সম্ভব হয়নি। নতুন স্লিপ ছাপা হচ্ছে।
মঙ্গলবার থেকে এই আইন প্রয়োগ করা হবে। কিন্তু বুধবার সকালে চট্টগ্রাম মহানগরীর নিউমার্কেট মোড়, বহদ্দারহাট, জিইসি, দেওয়ানহাট, আগ্রাবাদ, মুরাদপুরসহ বিভিন্ন স্থানে সরেজমিন গিয়ে নতুন সড়ক আইন বাস্তবায়নে ট্রাফিক পুলিশের কোনো তৎপরতা চোখে পড়েনি।
এ বিষয়ে জানতে চাইলে উপ-কমিশনার (উত্তর) আমির জাফর বলেন, আইনটি আমরা আজও কার্যকর করতে পারিনি। ঢাকায়ও বোধহয় আপাতত কার্যকর হচ্ছে না। পরিবহন মালিক ও শ্রমিকদের দাবিগুলো নিয়ে মন্ত্রিপর্যায়ে আলোচনা চলছে। এজন্য আমরা আরো দুয়েকটা দিন অপেক্ষা করছি। জরিমানার টাকার অঙ্কসহ স্লিপ এসেছে কিনা জানতে চাইলে তিনি বলেন, স্লিপ আমরা ছেপেছি। কিন্তু কাউকে দেয়নি। যেদিন থেকে মামলা করার সিদ্ধান্ত হবে, সেদিন থেকে বিলি করবো। তবে নতুন আইন কার্যকর করার সবধরনের প্রস্তুতি আছে। সিদ্ধান্ত এলেই তা বাস্তবায়ন করবো। সিএমপির অতিরিক্ত কমিশনার (ট্রাফিক) এসএম মোস্তাক আহমেদ বলেন, নতুন সড়ক আইন প্রয়োগে অফিসিয়াল কোনো নির্দেশনা আমরা এখনো পাইনি। আগের নির্দেশনা মোতাবেক এখনো আমরা নতুন সড়ক আইনের সচেতনতা কার্যক্রম চালাচ্ছি। সূত্রমতে, গত ১লা নভেম্বর রোববার থেকে নতুন সড়ক আইন কার্যকর হলেও মালিক শ্রমিকদের বাধা ও কিছু ধারা-উপধারার বিষয়ে আপত্তি নিয়ে জটিলতা দেখা দেয়। ২০শে নভেম্বর পণ্য পরিবহন মালিক শ্রমিক ঐক্য পরিষদের ধর্মঘট হলেও পুরো দেশের সড়ক প্রায় গণপরিবহন শূন্য হয়ে পড়ে। পরে মালিক চালকদের আইনের ৬৪ ধারার মধ্যে ৭৪, ৭৫, ৭৬, ৭৭, ৮৪, ৮৬, ৯০, ৯৮, ১০৫ সহ মোট ৯ ধারার বিষয়ে আপত্তি তোলে মালিক শ্রমিকেরা। স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীর সঙ্গে এ বিষয়ে বৈঠকে ৯ দফা দাবি মেনে নেয়ায় ঘোষণার পর যান চলাচল স্বাভাবিক হয়। এর বাইরে লাইসেন্স সংক্রান্ত ৬৬ ধারা আগামী জুন পর্যন্ত প্রয়োগ করা হবে না। তবে আইন কার্যকরের পর ঢাকায় জরিমানা প্রয়োগ শুরু হলেও চট্টগ্রামে এখনো পর্যন্ত নতুন আইনে কোনো জরিমানা হয়নি। দীর্ঘ ১ মাস ট্রাফিক বিভাগ নতুন আইন সমপর্কে চালক, হেলপার, যাত্রী ও পথচারীদের জন্য কর্মশালা, প্রচারপত্র বিলি, সিগন্যাল বাতি কার্যকর, ট্রাফিক পয়েন্ট চিহ্নিত করাসহ নানা সচেতনতামূলক কর্মসূচি পালন করছে।
চট্টগ্রাম সিটি যাত্রী কল্যাণ সমিতির সভাপতি এসএম জহিরুল হক বলেন, জরিমানা করার কথা থাকলেও জরিমানা স্লিপে টাকার অঙ্ক উল্লেখ না থাকায় জরিমানা থেকে পিছিয়ে আসাটা আইনের প্রতি বৃদ্ধাঙ্গুলি প্রদর্শন। জরিমানার অঙ্ক উল্লেখসহ স্লিপ এলেও মঙ্গলবারও এই আইন প্রয়োগ করা হয়নি।
মূলত আইন কার্যকরে ট্রাফিক বিভাগ ভয় পাচ্ছে। তিনি বলেন, দীর্ঘ এক মাস পরও যদি যথাযথভাবে আইনের প্রয়োগ করা না যায় তাহলে নতুন আইন সমপর্কে মানুষের মনেও নেতিবাচক ধারণা সৃষ্টি হতে পারে। আইনের প্রতি সম্মান-শ্রদ্ধাবোধ আর মানুষের থাকবে না।