হবিগঞ্জের শেখ হাসিনা মেডিকেল কলেজের প্রায় ১৫ কোটি টাকার মালামাল ক্রয়ে দুর্নীতির অভিযোগ তদন্ত শুরু করেছে স্বাস্থ্য ও পরিবার কল্যাণ মন্ত্রণালয়ের গঠিত তদন্ত কমিটি। বৃহস্পতিবার সকাল সাড়ে ১০টায় স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের যুগ্ম সচিব মো. আজম খান শেখ হাসিনা মেডিকেল কলেজে তদন্ত শুরু করেন।
মন্ত্রণালয় সূত্র জানায়, তদন্তকালে অভিযোগকারী অ্যাডভোকেট আব্দুল আহাদ ফারুক, অভিযুক্ত মেডিকেল কলেজের অধ্যক্ষ ডা. আবু সুফিয়ান ও দরপত্র মূল্যায়ন কমিটির সদস্য সচিব ডা. নাসিমা খানমকে জিজ্ঞাসাবাদ করা হয়। পরে তদন্তকারী কর্মকর্তা ২০১৭-১৮ সালে দরপত্রের মাধ্যমে কেনা যন্ত্রপাতি ও উপকরণ পর্যবেক্ষণ করেন। প্রতিটি জিনিসের উৎপাদনকারী প্রতিষ্ঠান ও অন্যান্য তথ্য সংগ্রহ করেন। এ সময় কলেজের অধ্যক্ষ ডা. আবু সুফিয়ান ও বাজার দর কমিটির সদস্য সচিব ডা. নাসিমা খানমকে বিভিন্ন বিষয়ে জিজ্ঞাসাবাদ করেন। তদন্তকালে হবিগঞ্জের সহকারী কমিশনার ইয়াসিন আরাফাত রানাসহ পুলিশ সদস্যরা উপস্থিত ছিলেন। এর আগে অভিযোগ ও বিভিন্ন গণমাধ্যমের সংবাদের ভিত্তিতে শেখ হাসিনা মেডিকেল কলেজের দুর্নীতির বিষয়টি অবগত হয় স্বাস্থ্য ও পরিবার কল্যাণ মন্ত্রণালয়।
এরই প্রেক্ষিতে ২রা ডিসেম্বর দুর্নীতির অভিযোগ তদন্তে স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের যুগ্ম সচিব আজম খানকে প্রধান করে ১ সদস্য বিশিষ্ট কমিটি গঠন করে মন্ত্রণালয়। কমিটিকে ১৫ দিনের মধ্যে রিপোর্ট দিতে বলা হয়।
সম্প্রতি হবিগঞ্জ শেখ হাসিনা মেডিক্যাল কলেজের বইপত্র ও মালামাল ক্রয়ে ব্যাপক অনিয়মের অভিযোগ ওঠে। ২০১৭- ২০১৮ অর্থ বছরে ১৩ কোটি ৮৭ লাখ ৮১ হাজার ১০৯ টাকা মালামাল ক্রয় বাবদ ব্যয় দেখানো হয়। কিন্তু বাস্তবে ওই মালামালের মূল্য পাঁচ কোটি টাকার বেশি নয়। বাকি টাকার পুরোটাই ভাগ-বাটোয়ারা হয়েছে বলে অভিযোগ উঠে। বাজারমূল্য থেকে কয়েকগুণ বেশি দরে এসব যন্ত্রপাতি ও সামগ্রী সরবরাহ করে ঢাকার নির্ঝরা এন্টারপ্রাইজ ও পুনম ট্রেড ইন্টারন্যাশনাল নামে দুটি প্রতিষ্ঠান। অভিযোগ উঠেছে, কলেজের ভারপ্রাপ্ত অধ্যক্ষ ডা. আবু সুফিয়ান বাজার দর কমিটির সদস্য সচিব ডাঃ নাসিমা খানমকে সাথে নিয়ে দরপত্রের শর্ত ভঙ্গ করে এ দুই প্রতিষ্ঠানকে কার্যাদেশ প্রদান করেন। সরকার প্রধানের নামে নব প্রতিষ্ঠিত এই কলেজে কেনাকাটার নামে পুকুর চুরির তথ্য উপাত্ত নিয়ে প্রথম রিপোর্ট প্রকাশ করে মানবজমিন।
ওই রিপোর্ট প্রকাশের পর তোলপাড় শুরু হয় সর্বত্র। সরকারের উচ্চ পর্যায় থেকে বিষয়টি তদন্তের নির্দেশনা আসে। এর অংশ হিসেবে মন্ত্রণালয় কমিটি গঠন করার সিদ্ধান্ত নেয়। পাশাপাশি তদন্ত শুরু করে দুর্নীতি দমন কমিশন। স্থানীয় বিভিন্ন সামাজিক সংগঠন দুর্নীতিবাজদের বিচার চেয়ে আন্দোলনে নামে। দাবি উঠে দুর্নীতির সঙ্গে জড়িতদের গ্রেপ্তার করে শাস্তির আওতায় আনার। এ ব্যাপারে তদন্ত কমিটির প্রধান স্বাস্থ্য ও পরিবার কল্যাণ মন্ত্রণালয়ের যুগ্ম সচিব মো. আজম খান মানবজমিনকে জানান, স্বাস্থ্য ও পরিবার কল্যাণ মন্ত্রণালয়ের সচিব মহোদয়ের নির্দেশে তদন্ত করছি। বৃহস্পতিবার আমরা সরেজমিন ক্রয়কৃত বিভিন্ন মালামাল ও কাগজপত্র যাচাই-বাছাই করেছি। এগুলোর বাজারদরও আমরা যাচাই করব। তদন্তের স্বার্থে এখনই সবকিছু বলতে পারছি না। তবে আমরা খুব কম সময়ের মধ্যেই রিপোর্ট প্রদান করব।