× প্রচ্ছদ অনলাইনপ্রথম পাতাশেষের পাতাখেলাবিনোদনএক্সক্লুসিভভারতবিশ্বজমিনবাংলারজমিনদেশ বিদেশশিক্ষাঙ্গনরকমারিমত-মতান্তরবই থেকে নেয়া তথ্য প্রযুক্তি শরীর ও মন চলতে ফিরতে কলকাতা কথকতাসেরা চিঠিইতিহাস থেকেঅর্থনীতি
ঢাকা, ২৭ এপ্রিল ২০২৪, শনিবার , ১৪ বৈশাখ ১৪৩১ বঙ্গাব্দ, ১৮ শওয়াল ১৪৪৫ হিঃ

খাস জমি দেখিয়ে নদীতে ঘের তৈরি

বাংলারজমিন

স্টাফ রিপোর্টার, যশোর থেকে
৮ ডিসেম্বর ২০১৯, রবিবার

যশোরের ঝিকরগাছা উপজেলার শিমুলিয়া ইউনিয়নের একটি প্রবাহমান নদীকে কাগজপত্রে ধানি জমি দেখিয়ে ঘের বানিয়ে মাছ চাষ করছে একটি মহল। এজন্য তারা নদীটি সরকারের কাছ থেকে ইজারাও নিয়েছে। সরকারের পক্ষে যশোরের তৎকালীন ডিসি ওই ইজারা পত্রে স্বাক্ষর করেছেন। ব্যাপক জালিয়াতির মাধ্যমে এই কাজ সম্পন্ন করা হয়েছে বলে জানা গেছে। ঝিকরগাছা উপজেলার শিমুলিয়া ইউনিয়নের রাধানগর গ্রামে এই ঘটনা ঘটেছে। স্থানীয়দের অভিযোগ, জেলা প্রশাসনের পক্ষ থেকে ইজারা দেওয়ার মাধ্যমে নদীটিকে মেরে ফেলার সমস্ত আয়োজনই সম্পন্ন করা হয়েছে। রাধানগর গ্রামের বাসিন্দা তাহের আলী মোল্যা (৭৫) বলেন, ছোটবেলায় আমরা ভায়না নদীতে গোসল করেছি, সাঁতার কেটেছি, মাছ ধরেছি, পাট জাগ দিয়েছি। এখন দস্যুরা সেই নদী দখল করে নিয়েছে; ঘের বানিয়ে মাছচাষ করে।
আমাদের ওই পানি ব্যবহার করতে দেয় না। এখন পাট জাগ দিতে ২-৩ কিমি দূরে বাঁওড়ে যেতে হয়। তাদের দাবি, এই ওয়ার্ডের সাবেক ইউপি সদস্য (মেম্বার) রশিদ ও তার জামাই (মেয়ের স্বামী) লোকমানের নেতৃত্বে কয়েকজন নদীটি দখল করে সেখানে মাছ চাষ করছে। খোঁজ নিয়ে জানা যায়, ১৯৮৫ সালে স্থানীয় চেয়ারম্যানের মাধ্যমে সাত জনের নামে নদীটি বরাদ্দ দেওয়া হয়েছিল। এক বছর পর তাদের দেয়া বরাদ্দ জেলা প্রশাসকের দপ্তর থেকে নবায়ন করতে মেম্বার আব্দুর রশিদ দায়িত্ব নেন। কিন্তু রশিদ অন্য ছয় জনকে জানান, নদী আর তাদের নামে নেই, অন্য চার ব্যক্তি এটি লিজ নিয়েছে এবং আবার তার (রশিদ মেম্বার) কাছে বিক্রি করে দিয়েছে। কিন্তু পরবর্তী সময়ে, রশিদ মেম্বারের সঙ্গে নদী লিজ নেয়া অন্য ছয় সদস্য জানতে পারেন, রশিদ মেম্বার ও তার জামাই কৌশলে নদীটির দখল তাদের কাছ থেকে হাতিয়ে নিয়েছে। গ্রামের বাসিন্দারা জানান, তারা রেজিস্ট্রি ও তহশীল অফিসে খোঁজ নিয়ে জেনেছেন, ঝিকরগাছা উপজেলার বারবাকপুর গ্রামের কোরবান আলী, শ্রীরামকাটি গ্রমের নূর মোহাম্মদ মোল্লা ও দিদার বক্স মোল্লা এবং কামারপাড়া গ্রামের আব্দুর রউফ জাল কাগজ তৈরি করে হাল জরিপের সময় রেকর্ড এবং জালিয়াতির মাধ্যমে নদীকে ধানী খাস জমি দেখিয়ে জেলা প্রশাসনের কাছ থেকে বরাদ্দ নিয়েছে।  জানতে চাইলে দখলদার মো. লোকমান হোসেন দাবি করেন, ১৬ নম্বর রাধানগর মৌজায় ৫৪৮ দাগের ওই জমির মালিক ছিল যথাক্রমে নুর মোহাম্মদ, দিদার বক্স মোল্লা, কুরবান আলী দফাদার ও আব্দুর রউফ। আমি তাদের কাছ থেকে সেটি ক্রয় করেছি। স্থানীয় একটি চক্র তাদের ক্রয়কৃত জমিতে করা মাছের ঘের দখলের পাঁয়তারা করছে। এক প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, এই জমি নদীর নয়, ধানী জমি। স্থানীয় ইউপি সদস্য তবিবর রহমান বলেন, কী করে যেন রাধানগর গ্রামের সাবেক মেম্বর আব্দুর রশিদ ও তার জামাই লোকমান হোসেন নদী দখল করে বাঁধ দিয়ে পুকুর বানিয়ে ফেলেন। কিন্তু গ্রামবাসীর বাধায় তারা তাদের দখলে রাখতে পারেনি। পরে প্রভাবশালী লোকজনকে দিয়ে তারা নদীতে মাছ চাষ করাচ্ছেন। এদিকে ইজারার বিষয়ে শিমুলিয়া ইউনিয়নের তহশীল অফিসের নায়েব নেসার উদ্দিন আল আজাদ বলেন,  লোকমান হোসেনের দাবি মিথ্যা। তিনি দীর্ঘদিন ধরে জালিয়াতি করে নদীকে ধানি জমি হিসেবে কাগজপত্র  তৈরি করা হয়েছে। এসএ পর্চায় এটি নদী হিসেবে উল্লেখ রয়েছে। কিন্তু আরএস পর্চায় রয়েছে ধানি জমি। ধানী জমি হিসেবে যে কাগজপত্র তৈরি করা হয়েছে, তাতে ব্যাপক অসঙ্গতি রয়েছে। তিনি দখলদারদের বিরুদ্ধে দেওয়ানি মামলা করবেন বলেও জানান। যশোরের জেলা প্রশাসক শফিউল আরিফ এই প্রসঙ্গে বলেন, নদী কখনও খাস জমি হিসেবে লিজ দেয়া হয় না। বিষয়টি অনুসন্ধানের জন্য ঝিকরগাছা উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তাকে জানানো হবে।
অবশ্যই দিতে হবে *
অবশ্যই দিতে হবে *
অন্যান্য খবর